সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রথম পর্বের লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৮ ডিসেম্বর। একই দিনে একই সময়ে হবে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের সদস্যভুক্ত ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসার (সাধারণ) পদের লিখিত পরীক্ষাও। বড় দুটি নিয়োগ পরীক্ষা একই দিনে হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাজারো চাকরিপ্রার্থী। এ বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
মো. সিরাজুল মনির : সরকারি ও বেসরকারি বিভাগের সমন্বয়হীনতার অভাবে এ সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয়। সব প্রতিষ্ঠান বেকার যুবকদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তারা একটা পরীক্ষা দিতে গিয়ে আরেকটা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। একটাতে অংশগ্রহণ করতে গেলে সেটা পাওয়ার আশায় আরেকটাতে যান না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন তেমন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তো এসবের তোয়াক্কা করে না। তারা বরং সুযোগ নেয় যে, অংশগ্রহণকারী কম হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আত্মীয়দের ডেকে ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দেবে। অথচ এক ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা হলে আরেক ডিপার্টমেন্টের লোকজন তা জানে। তারা এসব জানার পরেও বেকার যুবকদের সময় নিয়ে যেমন ইচ্ছা তেমন করে।
উজ্জ্বল মণ্ডল : এভাবেই ছাত্রসমাজের মূল্যবান সময় চলে যায়। ২০১৮ সালে নির্বাচনি ইস্তেহার ছিল সরকারি চাকরির বয়স বাড়ানোর। তা করেনি সরকার। ৩৫ করা হোক সরকারি চাকরির বয়স।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদের প্রথম পর্বের (রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ) নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৮ ডিসেম্বর। গত ২১ নভেম্বর সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় জানানো হয়, প্রথম পর্বে ১৮টি জেলার ৫৩৫ কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে এক ঘণ্টার এই লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ পর্বের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭।
এদিকে প্রাথমিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর গত মঙ্গলবার ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সমন্বিত ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসার (সাধারণ) পদের লিখিত পরীক্ষার জন্য ৮ ডিসেম্বর তারিখ ঘোষণা করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ৯২২ শূন্য পদে লিখিত পরীক্ষা ৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ছয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এতে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫৭৪।
প্রাথমিকের ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ প্রার্থীর মধ্যে অনেকের ব্যাংকের পরীক্ষা একই দিনে পড়েছে। একই সময়ে পরীক্ষা হওয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না তারা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা।
আরাফাত হোসেন নামের এক চাকরিপ্রার্থী ওই সময় কালবেলাকে বলেছিলেন, হরতাল-অবরোধে ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দেওয়াটাই যেখানে কঠিন, সেখানে একই দিনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চাকরির পরীক্ষা কীভাবে হয়। ব্যাংক ও প্রাথমিকের চাকরিতে প্রায় সব চাকরিপ্রার্থীই আবেদন করেন। জেনেশুনে আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।
মাছুম আহমেদ নামের আরেকজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, প্রাথমিকের প্রথম পর্বের লিখিত পরীক্ষার তারিখ আগে থেকেই ৮ ডিসেম্বর নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও হঠাৎই সমন্বিত ১০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসার পদের লিখিত পরীক্ষার সূচি প্রকাশ করা হয়। সূচি পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে সিনিয়র অফিসার পদের পরীক্ষার তারিখ পুনর্নির্ধারণের জন্য ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের পরিচালক ও সচিব বরাবর আবেদন করেছেন পরীক্ষার্থীরা। আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা সমন্বিত ১০টি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ও প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদের পরীক্ষার্থী। দুটি চাকরিই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুটির পরীক্ষা একই দিনে নির্ধারিত হওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। আমাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সিনিয়র অফিসার পদের লিখিত পরীক্ষার তারিখ পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করছি।’
আবু সায়েম : ব্যাংকের পরীক্ষায় পরিবর্তন দরকার। পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল না দিয়ে শুধু পরীক্ষা নিচ্ছে ফলে একই প্রার্থী একই গ্রেডের একাধিক চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। শেষে দেখা গেল পোস্ট খালি থাকে। তাই আমার মতে একটার চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়ার আগে অন্য পরীক্ষা নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
শাহ আলম : আমার দৃষ্টিতে উভয় পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া দরকার। দেশের পরিস্থিতি শীতল হলে এরপর পরীক্ষা নিক। ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পরীক্ষাগুলো নিলে সবার জন্য মঙ্গল হবে।
মিরাজ আল ওয়াসি : বেকার যুবকরা হলো সরকারি আয়ের অন্যতম উৎস!
মীর কাশেম : একই দিনে পরীক্ষা নিলে চাকরি প্রার্থীরা দোটানায় পড়বে। দুয়েক দিন ব্যবধান দিয়ে পরীক্ষা নিলে তাদের জন্য সুবিধা হয়। তা ছাড়া দেশে চাকরির বাজার ভালো নেই। রাজনৈতিক অবস্থাও হযবরল। বেকার মানুষজন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
মো. তারেক : এই মুহূর্তে উভয় পরীক্ষা স্থগিত করা উচিত। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং সামনে জাতীয় নির্বাচন। চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিদিনই পরীক্ষা দিচ্ছে।
শামীম রেজা : একসঙ্গে পরীক্ষা হলেই ভালো। প্রতিযোগিতা কিছুটা কমে যাবে।
কাউসার আহমেদ তালুকদার : নির্বাচন এর আগে কোনো পরীক্ষা না দিলে ভালো। দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। রাস্তায় চলাচল করা যায় না।
মন্তব্য করুন