দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। সোমবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ২৮৯ আসনের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
তপশিল ঘোষণার আগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিভিন্ন সময় মতামত জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) শীর্ষ নেতারা। তবে সেসব মন্তব্যে নির্বাচনে আসা নিয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল না। এ ছাড়া দলটির শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় ছিলেন। এর মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল জাপা। এ বিষয়ে পাঠকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান।
আব্দুল্লাহ আল হোসাইন মুন্সী নামের এক পাঠক লিখেছেন, জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আশা করি, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তারা সংসদে যাবে আশা করা যায়।
নুর হোসাইন লেখেন, জাতীয় পার্টি যত আসনে প্রার্থিতা দিচ্ছে, আসলে তারা এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। তবে কিছু কিছু এলাকায় এরশাদের ভক্ত ও কর্মী রয়েছে। এ দেশের অনেক উন্নয়ন কাজ এরশাদের হাতে হয়েছে। তাই আমার ধারণা, তারা দুই থেকে তিনটি আসন পেতে পারে।
মো. গোলাম মাওলা লেখেন, নোয়াখালী-৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু ১১টি ইউনিয়নে ১১ ভোট পাবে কিনা তাও সন্দেহ রয়েছে।
তবে জাতীয় পার্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। কাজী তুষার লেখেন, গতবারের নির্বাচনের মতো এবারও তাহলে জাতীয় পার্টিকেই প্রধান বিরোধী দল বানিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। আজ বিএনপি নির্বাচনে এলে এরা হয়ে যেত সরকারে থাকা দলের শরিক দল। তারা আসন পাবে না ২০টার বেশি।
মোতালেব হোসাইন : জাতীয় পার্টি একটি অস্তির দল। বহুরূপী হিসেবে পরিচিত।
মো. মোসাব্বির রহমান : জাতি কখনোই তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত কিংবা প্রার্থী ঘোষণায় বিচলিত অথবা হতবাক নয়।
দুর্জয় ফরাজি : জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ দলের ৯০ ভাগ নেতারা জেল-জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন, মিথ্যা হত্যা মামলাসহ বিএনপি-আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার শিকার হয়েও জাতীয় পার্টি নামক দলটাকে এখনো টিকিয়ে রেখেছে। বর্তমানে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে যেতে রাজনৈতিকভাবে বাধ্য করেছে।
শহিদুল ইসলাম শুভ : জাতীয় পার্টি ও ডিগবাজি জায়েদ খান দুজনেই বাংলাদেশের মানুষের বিনোদন।
মো. সিরাজুল মনির : এগুলো মনোনয়ন বাণিজ্য ছাড়া আর কিছুই না। আওয়ামী লীগের ফর্মুলা অনুযায়ী এককভাবে জাতীয় পার্টির কেউ এমপি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জাতীয় পার্টি থাকতে পারে কিন্তু মাঠে তাদের ভোটার নেই। এ দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া জনগণ সরাসরি কাউকে তেমন ভোট প্রদান করেন না। এই যে এত আসনে জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থী দিল এককভাবে কেউ এমপি হয়ে সংসদ আসতে পারবে না। এরা বহুরূপী দল হিসেবে জনগণের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগকে ভয় দেখানোর জন্য তারা এত আসনে প্রার্থী দিয়েছে। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে মাঝখানে সুবিধা নেওয়ার জন্য জাতীয় পার্টি বিভিন্ন রকম চাতুরির আশ্রয় নেবে। মাঝখানে পড়ে সুবিধা নেওয়া জাতীয় পার্টির প্রধান বৈশিষ্ট্য।
নুর আহমাদ সিদ্দিকী : জাতিও জানে না তারা আদৌ বিরোধী দল, না কি সরকারি দল। জাপার ভূমিকা রাজনীতিতে পরগাছার ন্যায়। জাপা টিকে আছে আওয়ামী লীগের করুণায়। অন্যথায় জাপাকে জাদুঘরে রাখা হতো। এক সময়ে দেশ শাসন করা জাপার করুণ দশা এখন। জেলাতে কমিটিও নেই তাদের। সুষ্ঠু ভোট হলে জাপা দুটি আসনও পাবে না। লোক মুখে একটি কথা শোনা যাচ্ছে তা হলো, নাটকে এগিয়ে জাপা। জাতীয় পার্টির রাজনীতি মানে বিনোদন আর দেবর-ভাবির নাটক মঞ্চায়ন। এসব প্রার্থী ঘোষণা রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা রাখবে না।
এত মন্তব্যের ভিড়ে জাপার প্রার্থী ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন মীর কাশেম। তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির সঙ্গে জোট-মহাজোট না করে জাতীয় পার্টির স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বোঝা যাবে, তাদের আসল জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। ঘোষণা দিয়েছিল, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। বাদ বাকি আসন হয়তো পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের জন্য রিজার্ভ রাখছে। প্রতিবার নির্বাচন নিয়ে তাদের এত নাটকে জাতীয় পার্টি জনগণের কাছে ভাবমূর্তি হারিয়েছে। জাতীয় পার্টির এসব পরিহার করে আরও দায়িত্বশীল, গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমুখী হওয়া উচিত। তবেই পল্লীবন্ধুখ্যাত প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদের জাতীয় পার্টি গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পাবে।
মন্তব্য করুন