দৈনিক কালবেলায় ২৫ নভেম্বর (শনিবার) ‘খুলনায় নাগালের বাইরে ক্যান্সার চিকিৎসা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ক্যান্সার ইউনিট থাকলেও বিনামূল্যে কিছুই পাওয়া যায় না। ১০ টাকা দিয়ে বহির্বিভাগের টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানোর পর রোগীদের ২০০ টাকা ইজিবাইক ভাড়া দিয়ে টেস্ট করাতে যেতে হয় বিভাগীয় প্রধানের নিজের হাসপাতালে। এক যুগ ধরে ক্যান্সার ইউনিটের সামনে পড়ে আছে ২৪ কোটি টাকা মূল্যের রেডিওথেরাপি (লিনিয়র এক্সেলেটর) মেশিনটি, আজ পর্যন্ত বাক্স খুলে কেউ দেখেননি। রোগীদের রেডিওথেরাপি নিতে যেতে হয় ডা. মুকিতুল হুদার ঢাকার হাসপাতালে। নির্মাণাধীন ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের মেয়াদ শেষের ছয় মাস পার হলেও কাজের মাত্র ২১ শতাংশ শেষ করতে পেরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে খুলনার মানুষের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে ক্যান্সার সেবা। এ বিষয়ে পাঠকরা লেখেন,
কাজী তুষার : চিকিৎসা সেবা খাত এখন সবচেয়ে বড় ব্যবসা। আর সেটা যদি সরকারি হাসপাতাল হয় তাহলে তো সেখানকার ডাক্তারদের জন্য সোনায়-সোহাগা। খুলনা মেডিকেল কলেজ ও তার বিভাগীয় প্রধানও এর বাইরে যেতে পারলেন না। সরকারি নজরদারি আর তদারকির অভাবে এমন অবস্থা বলে মনে হচ্ছে। ক্যানসারের মতো ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার মতো চিকিৎসা পাচ্ছে না ভুক্তভোগী। এই রিপোট প্রকাশিত হওয়ার পর আশা করব কতৃপক্ষের টনক নড়বে। বিভাগীয় প্রধানের স্বেচ্ছাচারিতা দূর হবে। তাকে আনতে হবে বিচারের আওতায়।
মীর কাশেম : ক্যান্সারজনিত চিকিৎসা ব্যয়বহুল। এই রোগের চিকিৎসা দেশের সবখানেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
মো. জহিরুল ইসলাম : অসহায় মানুষগুলো যখন ডাক্তারের কাছে যায় তখন টেস্ট দিলে ডাক্তারকে পার্সেন্টিজ দেওয়া লাগে। এ কারণে টেস্ট করতে কষ্ট হয় অসহায় মানুষের। চেকআপ করতে ভোগান্তি পোহান রোগী। এসব গরিব মারার ফাঁদ।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসায় রয়েছে আলাদা ইউনিট। নাম রেডিওথেরাপি ও অনকোলজি বিভাগ। প্রতিবছর সেখানে রোগীর চাপ বাড়ছে। তবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের অভাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। ইউনিটের ১২ শয্যার আটটিই বিভিন্ন বিভাগ থেকে ধার করে আনা। বর্তমানে বহির্বিভাগে শুধু কেমোথেরাপি, সার্জারি, নতুন রোগী দেখা ও ফলোআপ কার্যক্রম চলছে। তবে রোগীদের সরকারিভাবে কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কার্যত এই ইউনিটের কোনো সেবা নেই। প্রত্যেক রোগীকে নির্দিষ্ট কোম্পানির কেমোথেরাপির ওষুধের লিস্ট দেওয়া হয় চিকিৎসকের রুম থেকেই। লিস্টের নিচে ওই কোম্পানির প্রতিনিধিকে ফোন করে বাড়তি দামে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। কয়েকদিন আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খুলনা সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী শ্রমিক নান্না ফরাজী (৫০)। তার স্ত্রী জেসমিন জানান, তার স্বামীকে আটটি কেমো দেওয়া হয় এখানে। প্রতিটি কেমোর আগে ৩০ হাজার টাকার মূল্যের একটি স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হতো। খুলনার পাইকারি ওষুধের মার্কেট যাচাইয়ে ওষুধের দাম কম পেলেও সেখান থেকে কিনতে পারেননি তিনি। এভাবে আটটি কেমো দেওয়া শেষ হলে তাকে বিভাগীয় প্রধান ডা. মুকিতুল হুদার নিজস্ব ক্লিনিক ঢাকার সাভারে নিয়ে যান তারা।
নুর আহমাদ সিদ্দিকী নামের এক পাঠক লেখেন, দেশে উন্নত চিকিৎসার কথা ভাবা হাস্যকর। এ দেশে যারাই ক্ষমতায় আছে এবং ছিল তারা কেউই চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করেনি। ক্ষমতাসীনদের একটু জ্বর হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন উন্নত দেশে কোটি টাকা খরচ করে চলে যান। আর দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তো একটু জ্বর নয়, মরণব্যাধি রোগ হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্যে বিদেশে ছুটে যেতে পারে না। দেশে উন্নত চিকিৎসার অভাবে অসহায় গরিব, কৃষক, তাঁতি, জেলে, কুলি-মজুরের প্রাণ যায়। ক্ষমতাসীন এমপি, মন্ত্রী আর আমলাদের তো কোনো ভয় নেই। জনগণের টাকা দেশের বাইরে পাচার করে কানাডায় বেগমপাড়া তৈরি করে। তাদের কানাডায়, আমেরিকা, সিঙ্গাপুরসহ উন্নত দেশে দ্বিতীয় বাড়ি আছে। অপরদিকে অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের তো তা নেই। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। ধনীরা তো আর দেশে চিকিৎসা করে না। বিদেশে যাতে দৌঁড়ঝাপ না করতে হয় সে জন্য দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করুন।
মো. সিরাজুল মনির : এটা শুধু খুলনার সমস্যা না এটা সারা দেশের সমস্যা। সারা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে হাজারো ক্যান্সার রোগী। যারা টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। আবার কিছু কিছু জায়গায় টাকা খরচ করেও হচ্ছে না সুচিকিৎসা। এ দেশের ডাক্তাররা ফি এবং কমিশনের জন্য রোগীদের সঠিক চিকিৎসা প্রদান করেন না। অথচ আমাদের রয়েছে অভিজ্ঞ চিকিৎসক। সরকারি হাসপাতালগুলোতে আলাদা ক্যানসার ইউনিট থাকা সত্ত্বেও সেখানে সুচিকিৎসা পায় না রোগীরা। কর্তব্যরত ডাক্তাররা অর্থের লোভে পড়ে সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী দেখানোর জন্য পরামর্শ প্রদান করে, যা অমানবিক কাজ। আবার প্রায় হাসপাতালে রয়েছে ডাক্তারদের প্রতিনিধি বা দালাল। এরা কৌশলে রোগীদেরকে ডাক্তারদের প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে বাধ্য করেন।
মন্তব্য করুন