দৈনিক কালবেলায় ২৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ‘নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে অভিভাবকরা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
মোনায়েম খান : কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে পারমাণবিক বোমা মারতে হয় না; শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিলেই হয়। জাতি এমনিতেই ধ্বংস। এই কাজটিই করেছেন আমাদের শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
মইনুদ্দীন জনি : আমরা যখন ২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিলাম তখন আমি আমার খালাতো বোনের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তাম। তিনি যখন দশম শ্রেণিতে পড়তেন আমি তখন নবম শ্রেণিতে পড়তাম। এখন শিক্ষাব্যবস্থার এমন অবস্থা হয়েছে যে, এক বছরের বই পরের বছর পড়া যায় না। এটা কোনো শিক্ষিত জাতির পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এর কারণে অনেক গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়ছে। এর জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা।
শারিয়ার শিহাব : নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র মাত্র।
মো. আসপির আলম : নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে অভিভাবকরা। সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি।
মো. আহসান জোবায়ের : এই নতুন শিক্ষাক্রম শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নব চক্রান্ত। যা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থী-অভিভাবক উভয়েরই একযোগে আন্দোলন করা দরকার।
সানজিদ প্রধান : পরীক্ষা পদ্ধতি পুনরায় ফিরিয়ে আনা হোক। এই কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা গাইড দেখে গণিত, ইংরেজিসহ অন্যান্য বইয়ের সমাধান দেখে ছক পূরণ করছে, যাতে শিক্ষার্থীদের আরও ক্ষতিই হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক প্র্যাকটিক্যাল বিষয় আছে, যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকও পুরোপুরিভাবে সেটার সঙ্গে পরিচিত নন। এ ছাড়া কাগজ, রং, বোর্ডসহ ব্যবহারিক অনেক ব্যয়বহুল।
আয়শা আক্তার : আমি একজন ছাত্র হিসেবে বলছি, নতুন কারিকুলাম বাতিল চাই। আগের পড়াই ভালো ছিল।
মো. তারেক : আমাদের যুগে বই খাতা এবং গাইড দেখে পড়াশোনা করছি, তার বিপরীতে এ যুগে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন, বছরে বছরে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করলে শিক্ষার্থীরা শিখবেই বা কী। সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন দিয়েই তাদের পড়াশোনা আজ নষ্টের পথে। অভিজ্ঞতা ও প্রতিবেশী ছোট্ট ছোট্ট শিক্ষার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতি দেখেই বুঝি, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আর আগেকার শিক্ষাব্যবস্থা অনেক পার্থক্য। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান যুগের স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যা শহর কিংবা গ্রাম পর্যন্তও তাদের পড়াশোনার মন নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন পাওয়ার পর থেকে এরা সারাক্ষণ তা নিয়ে ব্যস্ত আছে।
শাহবাজ উদ্দিন সবুজ : যারা এই কারিকুলামের স্বপ্নদ্রষ্টা তাদের সন্তানরা কি বাংলাদেশে পড়ালেখা করে?
নুর আহমাদ সিদ্দিকী : বর্তমান কারিকুলামে শিক্ষার নামে তামাশা চলছে। শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ালেখার চাপ কমাতে বাতিল করা হয়েছে পরীক্ষা পদ্ধতি। চলমান শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীকে দক্ষ করে তোলার পরিবর্তে অলস করছে। অ্যাসাইনমেন্ট খোঁজার অজুহাতে মোবাইল নিয়ে অযথা সময় নষ্ট করছে। তা ছাড়া হাতে কলমে শিক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের রান্নাবান্না শিখাচ্ছে প্রতিষ্ঠান। মেয়েদের রান্না তার পরিবারের লোকজন শিখাবে, এটা স্কুলে শিখতে হবে কেন? তা ছাড়া অনেক শিক্ষকই এই কারিকুলাম বুঝতে হিমশিম খাচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রম দেশের সিংহভাগ মানুষ বাতিল করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি, আগের মতো পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হোক। শিক্ষার নামে এই তামাশা অনতিবিলম্ব বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের সত্যিকার শিক্ষায় শিক্ষিত করার সুযোগ দেওয়া হোক। এই শিক্ষাব্যবস্থা বাতিলে অভিভাবকদের আন্দোলনকে সমর্থন করছি। তাদের আন্দোলন যৌক্তিক।
রবিউল ইসলাম : ৬ষ্ঠ, ৭ম শ্রেণিতে ২০২৩-এর শিক্ষা কারিকুলাম এতটাই শিক্ষা বিমুখ প্রক্রিয়া যা ইতিমধ্যে সব শ্রেণির মানুষ অবগত হয়েছে। এমন প্রক্রিয়া কখনই জাতিকে উন্নত প্রযুক্তির বাহন বলা যায় না বরং এ কারিকুলাম শিক্ষার্থীকে অলস এবং পড়ালেখায় অনীহা মনোভাব তৈরি করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা নেই বললেই চলে। পরীক্ষার কোনো চাপ তাদের থাকে না, মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে নাটক করা হয়। ২০২৪ সাল থেকে ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে এই নাটকীয় কারিকুলাম বাস্তবায়ন করার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাই আমাদের সবার উচিত আন্দোলন করে এমন বাজে শিক্ষাক্রম বাতিল করার জন্য বাধ্য করা।
কাজী তুষার : যৌক্তিক দাবিই করছেন অভিভাবকরা। এত বছর ধরে চলে আসা শিক্ষাক্রমের খামতিগুলো শুধরে নেবার জায়গায় পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ওপর যখন বুলডোজার চালানো হয় তা মোটেও ভালো হতে পারে না। একটা জাতির জন্য তা সুখকর নয়। আপনি বহির্বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দিতে যেয়ে বিছানা গোছানো শেখাতে যাবেন এবং বাসায় মুরগি পালতে বাধ্য করতে পারেন না। পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দিলে পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাবে শিক্ষার্থীরা। হাতে-কলমে শেখানোর জন্য তো আলাদা করে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাই আছে। দেশে এমনিতেই মোবাইলের যুগে পড়াশোনা থেকে দূরে যাচ্ছি আমরা। নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলে জাতির ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান হতেই হচ্ছে। এসব এক্সপেরিমেন্ট এক দিন দেখা যাবে নির্বোধ এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকা জাতি উপহার দেবে। হঠকারিতামূলক এসব প্রস্তাব রোধ করতে অভিভাবকদের আন্দোলনে সহমত পোষণ করছি।
মো. গিয়াসউদ্দিন : বারবার শিক্ষাক্রম আইন করলে শিক্ষার্থীদের জন্য সুফল বয়ে আনে না। তাই নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করা উচিত।
রিফাত খান : আমেরিকার শিক্ষার্থীরা সফটওয়্যার তৈরি করছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আলুভর্তা বানানো শিখছে। নতুন শিক্ষা কারিকুলামের নামে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে কীভাবে রান্না করবে এই শিক্ষা নিচ্ছে?
পংকজ ধর : নতুন শিক্ষাক্রম আমার কাছে ভালো লাগেনি। আগে পরীক্ষায় পাসের জন্য শিক্ষার্থীরা একটু পড়ত। একটু গণিত-ইংরেজি পড়ত। এখন আমি এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করলাম তোর পরীক্ষা চলে, তুই পড়ছ না; দেখি বলে গ্রুপ ক্যাপ্টেনের দেখে তৈরি করব, এবার বুঝেন অবস্থা। শুধু কাগজ দিয়ে এইটা-ওইটা, মাটি দিয়ে এইটা তৈরি ইত্যাদি। এসব কি একটা শিক্ষার্থীকে সুন্দর ভবিষ্যৎ দেবে।
মন্তব্য করুন