দৈনিক কালবেলায় ১৭ নভেম্বর (শুক্রবার) ‘নতুন শিক্ষাক্রম : শিক্ষকদেরই ধারণা কম, শিক্ষার্থীদের হিমশিম’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
মীর কাশেম : আমার ছেলে সিএমপি স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমের ছাত্র। নতুন শিক্ষাক্রম এক আন্তর্জাতিক মানের সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা। আজকের ছাত্রছাত্রীদের আন্তর্জাতিক মানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এমন শিক্ষাক্রমের প্রয়োজন আছে। কারণ, এই শিক্ষাব্যবস্থায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা একটি বিষয় সরেজমিনে বাস্তবে দেখে শুনে বুঝে নিজেরাই সেই বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন, নিবন্ধ বা রচনা লিখে। এতে তাদের প্রতিভা বা সৃজনশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। সমস্যা হলো স্কুলের শিক্ষকরা কিন্তু সেই নবশিক্ষাক্রমে প্রশিক্ষিত নন, উপযুক্ত নন। এই বিষয়ে উপযুক্ত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা জরুরি। তবেই এর সুফল পাবে বাংলাদেশ।
মুহিন খান : আমার মনে হয়, বর্তমানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবাই এর জন্য দায়ী। বর্তমানে শিক্ষক স্কুল বা কলেজের ক্লাসে সঠিকভাবে পাঠদান করেন না। কিন্তু এই শিক্ষকই টাকার বিনিময়ে বাইরে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান। এ ছাড়া অনেক শিক্ষক প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর দেন না। এই ভয়ে অনেক ছাত্র সেই শিক্ষকের কাছেই পড়ে। আবার অনেক ছাত্র পাসের আশায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ে। অতএব এ সব বিষয় ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যায়, শিক্ষকের টাকার প্রতি লোভ এবং ছাত্রদের সহজে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা এই বিষয়গুলো দায়ী।
মো. সিরাজুল মনির : পুরোনো ধারায় লেখাপড়া করানো শিক্ষকরা হঠাৎ করে নতুন শিক্ষাক্রমে যুক্ত হওয়ায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা বিভাগের উচিত ছিল নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমকে উপযুক্ত করা। শিক্ষা বিভাগ সেটা না করে এক প্রকার হঠাৎ করেই নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সব শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করায় শিক্ষার্থীরাও শিক্ষাকে সঠিকভাবে নিতে পারছে না। তা ছাড়া তরুণ শিক্ষকরাও নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত না। কারণ, তারাও লেখাপড়া করে আসছে পুরোনো ধারায়। তাই সব মিলিয়ে এক প্রকার জালে পড়ে গেছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এতে সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। তা ছাড়া আগেকার শিক্ষাব্যবস্থায় কিছুটা সাধারণ জ্ঞান যুক্ত থাকলেও নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় তার কিছুই নেই। এতে শিক্ষার্থীরা পেছনে পড়ে গেছে।
মীর মোশারফ হোসেন টিটু : জাতিকে মেধা শূন্য করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা মনে হচ্ছে।
মো. রকি হোসাইন : শিক্ষাঙ্গন যখন রাজনীতির মাঠে পরিণত হয় তখন ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষক মারধরের শিকার, হয়রানি, নির্যাতনের মতো অপরাধ অতি সামান্য ব্যাপার। আর এমন অপরাধের জন্য সমাজের দায় বৃহৎ। কারণ, সমাজ থেকে এত বড় অপরাধের শিক্ষা পেয়েছে। স্কুল-কলেজ, ক্যাম্পাসগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ পাবে না।
হুমায়ুন কবির : যেদিন থেকে শিক্ষকদের কাছ থেকে লাঠি কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেদিন থেকেই অর্ধেক শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। বাকিটা ইতিহাস।
মোহাম্মদুল্লাহ মিজান : আবারও শিক্ষকদের হাতে বেত দেওয়া হোক, তাহলে কোনো ছাত্রছাত্রী বেয়াদব হবে না। আর মায়ের সামনে মেয়েকে তুলে নেওয়ার সাহস পাবে না।
রকিবুল ইসলাম রকি : বর্তমানের এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের যথেষ্ট পরিমাণ ভূমিকা রয়েছে। তবে শিক্ষা রুটিনের কারণেই মূলত এমনটা হচ্ছে।
মোহন ভূঁইয়া : সর্বপ্রথম সৃজনশীল যখন শুরু করল তখন আমাদের অনেক স্যার সৃজনশীল অঙ্ক কীভাবে সমাধান করা যায় সেটা জানতেন না।
এফএ রহিম : কোমলমতি শিক্ষার্থীর হাতে যে নতুন শিক্ষাক্রম তুলে দেওয়া হচ্ছে তা সর্বমহলে প্রশ্নবিদ্ধ। আগামীর জাতি গঠনে এ রকম যেন তেন শিক্ষাক্রম দিয়ে জাতি গঠন তো হবেই না বরং এ তরুণ প্রজন্ম হারিয়ে যাবে অতল গহ্বরে। তাই জাতিকে উদ্ধার করতে হলে চাই মেধাবী ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শিক্ষক এবং সর্বমহলে প্রশংসিত শিক্ষাক্রম।
মো. আবরার হোসাইন আকিব : স্যাররা প্রথমে নতুন নতুন এসে ক্লাসে ভালো করে পড়ান। ৫-৬ দিন পর আগের মতো পড়ান না। তারপরে বলেন, কোচিং সেন্টারে আসিও ভালো পড়াব। এ রকম স্যারদের কারণে সব স্যারের বদনাম।
হাফেজ মো. শরিফুল ইসলাম : যেহেতু বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সুতরাং বলতেই হয় শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। পাঠ্য বইয়ের দিকে তাকালে এবং পাঠ দানের অবস্থা দেখলে ঠিক এ কথাটাই মনে হয়।
মো. তারেক : আগেকার স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি ও মাদ্রাসা শিক্ষককে রাস্তা-ঘাটে দেখলে ছাত্রছাত্রীরা শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতো। এখন সমাজ থেকে তা দিন দিন উঠে যাচ্ছে।
এসএম তরিকুল ইসলাম : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি ঢুকে গেছে। আর প্রথম কথা হলো, শিক্ষকরা রাজনীতি করলে ছাত্ররা আর কী করবে। বরং আগের জায়গায় ফিরে আসতে হবে। শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তাহলে আবার শিক্ষা উজ্জ্বল হবে।
হুমায়ূন ফরিদ : এখন দেখা যায় দেশে প্রায় শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষার প্রতি কোনো খেয়াল নেই। ১০-১৫ বছর আগে শিক্ষকরা ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের কী পড়াবে সে বিষয় নিয়ে সারা রাত পড়াশোনা করতেন। এখন শিক্ষকরা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এমনকি ছাত্র জীবনে যা পড়াশোনা করছিলেন তা সব ভুলে যান। এ জন্য বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে।
ফারুক আহমেদ : অনেক আগে একটা ডায়লগ প্রচলিত ছিল, আমি যে কী বুঝি না সেটাই তো বুঝি না। বর্তমানে অবস্থাটা এমন হয়েছে যারা বইগুলোর পাঠগুলো নির্ধারণ করেন তারা নিজেরাই জানেন না শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী কী করা প্রয়োজন। বিষয়টা এমন যে, কোনো একটা গদ্য বা পদ্য দিয়ে দেন; এতে ব্যাস।
নুর মোহাম্মদ : একটা জাতি ৫২ বছরে ঠিক করতে পারল না তার শিক্ষানীতি কেমন হবে। কেমন করে তার জাতি আধুনিক বিশ্বের চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে। ভারত পৃথিবীর বৃহৎ জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে সিইও সাপ্লাই করে। আর আমরা মরুভূমিতে উটচরানেওয়ালা পয়দা করছি। আগামীতে ডিমভাজি, আলুভাজা-ভর্তা বানানেওয়ালা বানাবে বৈকি। কর্মমুখী শিক্ষার কথা যদি বলা হয় তাহলে বাধ্যতামূলকভাবে এসএসসি পর্যায়ে একটা, এইচএসসি পর্যায়ে দুইটা ও স্নাতক পর্যায়ে আরো দুইটা মোট পাঁচট ট্রেড কোর্স থাকবে এবং এসব ট্রেডকোর্স পরিচালনার জন্য ডিপ্লোমাধারী শিক্ষক নিয়োগ করাও জরুরি।
মেহেরুন্নাহার পপি : বর্তমান যেই কারিকুলাম নিয়ে এত কথা হচ্ছে আসলে এটা হলো হাতে-কলমে কাজ করার, এটাতো খারাপ না ভালোই। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে গ্রামের এবং শহরের বেশিরভাগ স্কুলের শিক্ষকরা বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামটা বুঝেন না। এখানে শিক্ষকদেরও দোষ দিতে পারছি না। কারণ, শিক্ষকরা নিজেরাই যেটা পারে না বা বুঝে না সেটা তারা তাদের স্টুডেন্টদের কীভাবে শেখাবে বা বুঝাবে! সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের সিস্টেমে। প্রয়োজন ছিল প্রথমে দেশের প্রতিটা সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, প্রাইভেটসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামের ওপর ট্রেইনিং দেওয়া, প্রয়োজনীয় সব ইন্সট্রুমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া। তারপর ওই কারিকুলাম স্টুডেন্টদের জন্য চালু করা। এখন শিক্ষকরা পড়াতে পারুক আর না পারুক তারা তাদের বেতন ঠিকই পেয়ে যান। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা আর অবিভাবকরা। ছাত্র-ছাত্রীরা কিছু শিখতে পারছে না আর অবিভাবকরা তাদের কষ্টের ইনকামের টাকা অযথাই সন্তানের পেছনে নষ্ট করছেন।
বি এম হানিফ হোসাইন : নতুন শিক্ষাক্রম অনেক শিক্ষক ঠিক মতো বুঝতে পারছেন না। এমন কিছু আছে যা তারা নিজেরা তো পারেন না, এসব বিষয় যে শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হবে তা ভাবতেই পারেন নি। অনেক বিষয় শিক্ষকরা পাঠদানের জন্য হিমশিম খাচ্ছে। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের কথা বলে তো লাভ নেই। পুরাই বেহাল দশা। শিক্ষার্থীরা কী শিখছে আর কী করছে অনেকই তা বুঝে উঠতে পারছে না। এই বিষয়ে আরও সতর্ক হয়ে শিক্ষাক্রম তৈরি করা উচিত ছিল। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আগে তৈরি করে তারপর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার ছিল।
সৈয়দ আবেদ আলী রিপন : নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের ধারণা কম, তা ঠিক নয়। যারা প্রশিক্ষণ পেয়েছে তাদের ঠিকই ধারণা আছে এবং তা বাস্তবে প্রয়োগ করছে। নতুন শিক্ষাক্রমে আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে শিক্ষকদের চাপ বেশি, ফলে পরিশ্রম বেশি হচ্ছে। সেই অনুযায়ী পারিশ্রমিক বা সম্মানি পাচ্ছে না। যার ফলে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে মন বসাতে পারছে না। নতুন শিক্ষাক্রমের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ব্যয় বেড়ে গেছে। এই ব্যয় সরকারকে বহন করা উচিত।
মো. মাহামুদুল হাসান : বর্তমানে যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তারা যথেষ্ট জ্ঞানী এবং পূর্বে কিছু ছিল তারা তেমন অভিজ্ঞ না। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীরা শিখতে চায় না শিক্ষকেরাও সেই সুযোগে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে শিক্ষাব্যবস্থার এমন করুণ অবস্থা।
মন্তব্য করুন