দৈনিক কালবেলায় ১৬ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ‘ডেকে এনে শিক্ষককে মারধর করল অষ্টম শ্রেণির ছাত্র’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। এ প্রেক্ষিতে ‘শিক্ষককে মারধর করল ছাত্র : সমাজের দায় কতটুকু?’ এ বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
মো. হোসাইন আহমেদ : এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে অধিক পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পারিবারিক শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ।
জান্নাতুল ফেরদৌস আদন : ছাত্রের চেয়ে শিক্ষকের দায় বেশি। কারণ, শিক্ষকরা নিজেদের এমপিওভুক্তি এবং বেতন বাড়ানোর আন্দোলন করলেও শিক্ষা সিলেবাস নিয়ে কোনো মাথা ঘামায় না। ধর্ম শিক্ষা বাদই দিলাম, বাংলা সাহিত্যের সিলেবাস থেকে ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ নামক বিখ্যাত কবিতাসহ ভালো ভালো লেখা বাদ দেওয়া হলো কেনো? শিক্ষার্থীরা সৌজন্যবোধ শিখবে কীভাবে? শিক্ষকরা কি এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো ব্যাখ্যা চেয়েছেন? তবে এ ক্ষেত্রে যথাক্রমে শাসক>শিক্ষক>অভিভাবক>ছাত্রের দায় বেশি।
নাজমুল ইসলাম জাহিদ : রাজনৈতিক নোংরামির প্রভাব সমাজকে প্রভাবিত করছে। ফলশ্রুতিতে এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।
মো. স্বাধীন মালিক : শিক্ষাঙ্গন যখন রাজনীতির মাঠে পরিণত হয় তখন ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষক মারধরের শিকার, হয়রানি, নির্যাতনের মতো অপরাধ অতি সামান্য ব্যাপার। আর এমন অপরাধের জন্য সমাজের দায় বৃহৎ। কারণ, সমাজ থেকে এত বড় অপরাধের শিক্ষা পেয়েছে। স্কুল, কলেজ, ক্যাম্পাসগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ পাবে না।
আল আমিন অনিক : বর্তমান প্রেক্ষাপট ও সমাজব্যবস্থার সঙ্গে এমন ঘটনা কিছুই না। ব্যক্তির ওপর বর্তমানে সমাজের দায়বদ্ধতা বলতে কিছুই নেই। যে দেশে আইনের কোনো সুশাসন নেই, সে দেশে এমন ঘটনাতো পান্তাভাত। শিক্ষকরাও আজ রোষানলে, তারাও আজ লাঞ্ছিত, এর জন্য ছাত্র নয়; সমাজ ব্যবস্থাই একমাত্র দায়ী।
মো. নাসিম খান : কুলাঙ্গার শিক্ষককে মারধর করলে ছাত্রের দোষ থাকে না। কিন্তু একজন সুন্দর মনষ্কের শিক্ষকের দিকে চোখ গরম করে তাকালে সে চোখ উঠিয়ে ফেলা উচিত বলে মনে করি।
শান্ত : এই দায়ভার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার।
দেবতোষ দেব : ছোটবেলায় পরিবার থেকে আমরা যে শিক্ষা আর নীতি-নৈতিকতা শিখি তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে সর্বত্র। তাই এখন আর আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
মো. রাসেল রানা : আমি মনে করি, রাষ্ট্রব্যবস্থা সব চেয়ে বেশি দায়ী। টাকার বিনিময়ে যিনি শিক্ষক হন তার দ্বারা ছাত্ররা কি শিক্ষা নিতে পারে।
আহমেদ সাইফুল : যদিও ‘শিক্ষককে অসম্মান করে কেউ বড় হতে পারে না’ এই কথাটির সরাসরি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই তবে অনেক ক্ষেত্রে এটি সত্য হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। শিক্ষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীরা তাদের নির্দেশিকা থেকে শিখতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো বিকাশ করতে পারে, বিশ্বাস তৈরি করতে পারে এবং একটি ইতিবাচক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
মো. নাইম : যেখানে ছাত্রসমাজ নিয়ে রাজনৈতিক অপব্যবহার করা হয়, ক্ষমতা কী জিনিস শেখানো হয়, সেখানে তো শিক্ষক মার খাবেই।
ফরিদ হোসাইন : মামুনুর রশিদ স্যার সত্য কথাই বলেছেন। রুচির দুর্ভিক্ষ সমাজের মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত সব জায়গায়ই ছড়িয়ে গেছে। এ ঘূর্ণিপাকে ছাত্রছাত্রীরাও ঘুরছে।
ওসমান সিকদার : ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের ফলে আজ এ সব ঘটনার সাক্ষী হতে হচ্ছে।
নাজমুল হুদা রাহাত : ১০০% সমাজ দায়বদ্ধ। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে আজ এমন হয়েছে।
শিমু তালুকদার : ছাত্রছাত্রীদের এই অধঃপতনের জন্য শুধু সমাজ নয় রাষ্ট্রও দায়ী। যেদিন থেকে ছাত্রছাত্রীদের শাসন করার ক্ষমতা শিক্ষকদের কাছ থেকে রাষ্ট্র কেড়ে নিয়েছে সেদিন থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেয়াদব সৃষ্টি হওয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব বা উদাসীনতাও এর পেছনে দায়ী। সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক রাজনীতির অনুপ্রবেশ ও সমাজের নানা ধরনের অন্যায় ও অবিচার কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের প্রভাবিত করছে। যার ফলে তারাও বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
মো. ওবায়দুল হক : দেশে শিক্ষার যে পরিস্থিতি, শিক্ষকদের আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি যাবে। কারণ, এ দেশে শিক্ষার কোনো উন্নতি নেই।
মো. ইউসুফ আলী : সম্পূর্ণ দায় সমাজের। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা একটা অসুস্থ সমাজ তৈরি করে ফেলেছি। যার প্রভাব চারদিকে বিদ্যমান। তারই ফলশ্রুতিতে এই ঘটনা।
মো. শাহানুর মিয়া : বর্তমান স্কুল-কলেজে রাজনীতির নোংরা ছোয়া ঢুকে পড়ার কারণে শিক্ষকদের প্রতি মানসম্মান, লজ্জা, ভয়, সাহস সব হারিয়ে ফেলছে ছাত্ররা। যার কারণে যেকোনো অপরাধ করতেও দ্বিধাবোধ করছে না ছাত্ররা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা চলবে। সেখানে কেন রাজনীতি থাকবে? এ কারণে শিক্ষার মান কমে গেছে। ছাত্ররা যা খুশি তাই করতে সাহস পাচ্ছে।
মো. রোকেন হোসেন : এখানে সমাজের দায় থেকে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা বেশি। কারণ, আগে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে এ রূপ ব্যবহার করার সাহস পেত না।
জোবায়ের আহমেদ : শিক্ষক সমাজ নিজেদের নৈতিকতার জায়গায় অটল থাকলে এই ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটত না। এই সমাজ ধ্বংসের পেছনে অন্যতম দায় শিক্ষকসমাজের।
এস এম ওয়ায়েজ কুরুনী : আমরা এখনো স্যারদের সামনে চেয়ারে বসি না। আমরা স্যারদের দেখলে সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে অথবা হাসিমুখে কথা বলি। কিন্তু বর্তমান সময়ে শিক্ষক হয়ে গেছে ছাত্রের সঙ্গে টিকটক আইডির বন্ধু। তাহলে সম্মান কোথায় থাকবে!
আল আমিন : আমাদের দেশের নিকৃষ্ট রাজনীতির কুফল। আর বেশির ভাগ শিক্ষকও সুশিক্ষা দেওয়ার বদলে রাজনীতির শিক্ষা দিয়ে থাকেন। সমাজ ও দেশের জন্য আরও কঠিন পরিণতি অপেক্ষা করছে।
নুর আহমাদ সিদ্দিকী : মা-বাবা জন্ম দেয় ভুত। শিক্ষক তারে শাসনে করে সত্যিকারের পুত। শিক্ষক শাসন করবে তবে তা যেন অমানবিক না হয়। শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে। কলুষিত রাজনীতির কবলে দেশ। ছাত্রদের অধিকাংশই কলুষিত রাজনীতির প্রভাবে শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলছে। শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করছে যা কখনো কাম্য নয়। শিক্ষক জাতি গড়ার কারিগর। তাদের ওপর এভাবে চড়াও হলে মেধাবীরা শিক্ষকতার মহান পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। যে বা যারাই শিক্ষকদের লাঞ্চিত করবে তাদের যেন কঠিন শাস্তি হয় সেই আইন পাস করা দরকার।
জাহিদুল ইসলাম ইমন : বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাটা আর আগের মতো নেই। কোনো এক সময় শিক্ষা ছিল অত্যাধিক সম্মানীয় একটি বিষয় কিন্তু বর্তমানে শিক্ষা হচ্ছে একটা প্রতিযোগিতার বিষয়। সেই সময়ের শিক্ষকরাও ছিল এক-একজন আদর্শ শিক্ষক, তারা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের মধ্যেই যথার্থ শিক্ষা দিয়ে থাকতেন কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকরা হচ্ছে টাকার দিকে ধাবিত। তারা বিদ্যালয়ে আসেন শুধু তাদের নিজেকে একটু দেখানোর জন্য আর পরবর্তীতে ক্লাসের পড়া বাসায় পড়ানোর মাধ্যমে টাকা অর্জন করেন।
হাসান মুসান্না মিশু : আমাদের শৈশব-কৈশোরে বাবা-মায়েরা শিক্ষকদের কাছে তার সন্তানকে তুলে দিয়ে বলতো- ‘এই নেন, আজ থেকে মাংসগুলো আপনার; হাড্ডিগুলো আমার জন্য রেখে দেবেন। এই কথার মর্মার্থ এ যুগের বাবা-মায়েদের হৃদয়ঙ্গম হচ্ছে না বলেই হয়তো এমন হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মের টানে পরিবার প্রধান তথা বাবারা প্রবাসমুখী হওয়ায় পারিবারিক শাসনের অভাবকেও দায়ী করা যায়। তা ছাড়া প্রযুক্তির অপব্যবহার কিশোরদের মধ্যে ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাচ্ছে। অথচ সামাজিকভাবে এ বিষয়ে কিছুতেই কোনো উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে না। অতিসত্বর এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়বে।
মীর কাশেম : আজকাল সমাজে দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন উঠে গেছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের পৃষ্টপোষকতায় উচ্ছৃঙ্খল কিশোর গ্যাং লালনপালন করা হয়। মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির কুপ্রভাবে পরিবারিক শান্তিশৃঙ্খলা ও শিষ্টাচার বা নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটেছে। আর ছাত্রছাত্রীর মধ্যে পড়ালেখার চেয়ে মোবাইল আসক্তি বেড়ে গেছে। মোবাইলের অপব্যবহারের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নানা অপরাধমূলক কাজকারবার শিখে সমাজে প্রয়োগ করছে। এ জন্য তাদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকরাও কম দায়ী নন। তারাই কমবয়সী ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল তুলে দিছেন। কোথায় কার সঙ্গে মিশে বা গেছে খোঁজখবর তেমন রাখে না। নৈতিক শিষ্টাচার শিক্ষা দিতে পারে না। অবাধ্যকে শাসন করতে পারে না। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন বেত্রাঘাতের শাসন নেই। সমাজে শিক্ষকদেরও আগের মতো তেমন মর্যাদা নেই। ফলে ছাত্রছাত্রীরা দিন দিন বেপরোয়া ও বেয়াদব হয়ে উঠছে।
মো. লাবিব সরকার লাম : শিক্ষক হচ্ছে জ্ঞানের কান্ডারী। মানুষ গড়ার কারিগর। সমাজের সম্মানিত মানুষ। কিন্তু এই মানুষকে যখন লাঞ্ছিত করা হয় তখন পুরো সমাজকেই লাঞ্ছিত করা হয়। শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা একটি নিকৃষ্ট এবং গর্হিত কাজ। যা কখনও চিন্তা করা যায় না। শিক্ষকরা অপমানিত হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল— শাসনের অভাব। শিক্ষকের হাত থেকে যেদিন বেত তুলে নেওয়া হয়েছে, সেদিন থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশ্রয় পেয়ে গিয়েছে। তারা মনে করছে, আমাদেরকে শাসন করার কেউ নেই, শিক্ষকতো আমাদের শাসন করেই না। আমাদের যা ইচ্ছে আমরা তাই করতে পারি। এ জন্য শিক্ষকদেরকে নিয়ম করে মাত্রানুযায়ী শাসন করার স্বাধীনতা প্রদান করা এখন সময়ের দাবি। আবার আরেকটি কারণ হচ্ছে— নিজ এলাকার দাম্ভিকতা। নিজস্ব গ্রাম কিংবা এলাকাভিত্তিক বাপ-দাদার জমিজমা ও টাকা-পয়সার জোর দেখানো কিংবা এলাকার নোংরা রাজনীতির লেজুড়বৃত্তির ফলে বিভিন্ন সময়েই শিক্ষককে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। ছাত্র রাজনীতির নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু সন্ত্রাসীরা ৯ম-১০ম শ্রেণিসহ ছোট ক্লাসে পডুয়া শিক্ষার্থীদেরকে শেল্টার দিয়ে থাকে। তারা এও বলে থাকে— ‘তোরা যাই করিস না কেন, আমি বড় ভাই তো আছিই’। এ রকম নোংরা চিন্তা-চেতনার কারণে শিক্ষার্থীরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদেরকে আলোর পথ আনতে হবে।
মন্তব্য করুন