দৈনিক কালবেলায় ১২ নভেম্বর (রোববার) ‘দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ শেষে দেশে লিটন-শান্তরা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যর্থতায় হতাশ পুরো দেশ। এ বিষয়ে মতামত জানাতে গিয়ে পাঠকরা বিভিন্ন ইস্যু তুলে এনেছেন। তারা বলছেন, ক্রিকেটে ভালো করলে তার পুরস্কার পান খেলোয়াড়রা। তাহলে ব্যর্থতার দায়ও খেলোয়াড়দের নিতে হবে। থাকতে হবে দায়বদ্ধতা। সে সঙ্গে বোর্ডসহ পুরো দলকে নতুন করে সাজাতে হবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, খেলোয়াড়দের পাশে থাকতে হবে। তাদের প্রস্তুতির সুযোগ দিলে ভবিষ্যতে ভালো করবেন।
মো. মেহেদি হাসান লিখেছেন, তামিমের নেতৃত্বে ৩ নম্বরে থেকে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলটি আজ মৃতপ্রায়। সাকিব বিশ্বসেরা তবে সেটা ক্যাপ্টেন হিসেবে নয়। ক্যাপ্টেন হিসেবে তামিমকে দলে চাই। বিসিবির সভাপতি নির্বাচক, কোচদের পদত্যাগ চাই। বাংলাদেশ টিমকে সুন্দর করে সাজাতে মাশরাফিকে বিসিবির দায়িত্ব দেওয়া হোক।
হুমায়ূন ফরিদ লেখেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে অনেকটা পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ। বাংলাদেশের খেলা হলে প্রত্যেকে তাকিয়ে থাকত টিভির পর্দায়। এখন রাজনীতি আর অযোগ্য বোর্ড দলটাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। এখন আর বাংলার মানুষ খেলা দেখতে চায় না।
ক্ষোভের বাইরে গিয়ে মীর কাশেম লেখেন, বিশ্বকাপে ব্যর্থতার জন্য ক্রিকেটারদের অপমানজনক কিছু বলা বা করা ঠিক হবে না। অতীতে তারা দেশের জন্য অনেক সম্মান বয়ে এনেছেন। ব্যর্থতা থেকে অন্তত শিক্ষা নিয়ে আগামী বিশ্বকাপ জয়ের প্রস্তুতি নিতে পারবে। হাজার হোক, তারা আমাদেরই গর্বিত সোনার সন্তান। তাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হোক।
এন্ড্রু ফয়সাল : বাংলাদেশে দ্বিতীয় সাকিব আল হাসান তৈরি হবে কি না সন্দেহ আছে। সব কিছুর মূলে একমাত্র পাপনের দায়। আজকে মাশরাফিকে দায়িত্ব দেন। দেখবেন সব পরিবর্তন হয়ে গেছে।
মো. সাইফুল ইসলাম ইমন : বাংলাদেশ দলের আজকের এই অধঃপতন হচ্ছে টিমের ভেতরে ভালো কম্বিনেশন না থাকায়। আরও একটা কারণ ব্যাপকভাবে লক্ষ্যণীয় যে, টিম সিলেক্টর ও ক্যাপ্টেন মিলে ব্যাটারদের ফর্মে থাকা পজিশন রেখে অন্য পজিশনে খেলানো। ক্যাপ্টেনের ইফেক্ট সবচেয়ে বেশি। এত দুর্বল ক্যাপ্টেন দিয়ে কোনো দল ভালো কিছু করতে পারে না। ক্যাপ্টেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে অক্ষম। টপ অর্ডার ব্যাটিং লক্ষ্য করুন। তামিমের অভাবটা ছিল চোখ ধাঁধানো। এ রকম দলের ভরাডুবি স্বাভাবিক। আমরা আবেগী বাঙালি। আবার কোনো একটা সময় খেলা দেখতে বসে যাব।
আরিফ উজ্জামান : তাদেরকে সুইপারের কাজে নামিয়ে দেওয়া হোক।
মো. সিরাজুল মনির : যতক্ষণ ক্রিকেট বোর্ড থেকে রাজনীতি এবং অনভিজ্ঞদের পরিহার করবে না ততক্ষণ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সফলতা আসবে না। সারা বিশ্বের ক্রিকেট বোর্ড থেকে অনেক পরিচালক অনেকবার বদলে গেছে কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে পাপন এখনো সরেননি। ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেটারদের উন্নতি প্রয়োজন।
নুর আহমাদ সিদ্দিকী : ক্রিকেটে ভালো করতে হলে বোর্ডকে আরো কার্যকর করতে হবে। দেশের মোটা অংকের বেতন ভোগ করে ক্রিকেট বোর্ডে বসে আরাম করলে হবে না। ক্রিকেট বোর্ড দুর্নীতিগ্রস্ত। ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে অযোগ্যদের বোর্ড থেকে বাদ দিতে হবে। সেই সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডে যে স্বজনপ্রীতি, রাজনীতি তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের জাতীয় দলকে জাদুঘরে রাখার সময় আসবে।
মো. আলামিন হোসেন : সবার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড মেরামত করতে হবে। যোগ্য লোককে দায়িত্ব দিতে হবে। বেশি বেশি ঘরোয়া লিগ আয়োজন করতে হবে। ব্যাটিং পিচ উইকেটে খেলার অভ্যাস করতে হবে। দল গঠনে কঠোর হতে হবে। সব কিছু নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। দলের মধ্যে মনোমালিন্য থাকা যাবে না।
মো. তারেক : তামিম ইকবালবিহীন খেলা দেখা মানে কার্টুন দেখার সমান। দশ কথার এক কথা হলো, আগে বোর্ড সভাপতি ও সাকিব যোগসূত্র বাদ দিয়ে নতুন করে ক্রিকেটকে সাজানো দরকার। সাবেক ও বর্তমান অধিনায়কদের নেতৃত্বে আনতে হবে। সেই সঙ্গে সারা দেশে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের প্রধান্য দেওয়া দরকার আছে বলে মনে করি।
মো. স্বাধীন মালিক : দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ শেষে হতাশার বাণী শুনালেন লিটন, শান্তরা। বাংলাদেশের ৮০% মানুষ ক্রিকেটপ্রেমী। প্রতিবারের মতো এবারও বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে দেশের মানুষ আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসা জানিয়েছিল। কিন্তু তারা দেশকে কিছু দিতে পারলেন না বলে মন্তব্য করেন এ পাঠক।
মো. খোবায়েব আহমেদ : বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের বেতন তার ব্যক্তিগত পারফরমেন্স ও দলগত সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া উচিত। তাহলে হয়তো তাদের মধ্যে ভালো খেলার একটা তীব্র ইচ্ছা জাগবে। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা পায় তো; ভালো খেললেও লাখ টাকা, খারাপ খেললেও লাখ টাকা। তাই হুঁশ থাকে না। সাধারণ মানুষের মতো কয়েক মাস ১০-১৫ হাজার টাকা বেতন পেলে বুঝতো জীবন কী জিনিস। তাহলে জীবনের তাগিদে হলেও ভালো খেলবে তারা। কোচ, নির্বাচকদের জন্যও একই নিয়ম করতে হবে।
জিৎ এসকেএম : আমরা ক্রিকেট খুব ভালোবাসি। আশার চেয়ে তারা খুব বেশি ব্যর্থ হয়েছে। সবাই অকথ্য সমালোচনার পুনরাবৃত্তি না করি। ভুল ও দুর্বলতার জায়গা থেকে খেলোয়াড় ও টিম ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা নিক। আগামী ম্যাচ ও সিরিজগুলো খুব ভালো খেলুক। খেলোয়াড়দের মানসিকতায় খুব ভালো খেলার প্রতিযোগিতা গড়ে উঠুক। বাজে সমালোচনা হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। পরিশেষে ভালো খেলা দেখতে পেয়ে আমরা খুশি থাকতে চাই।
সাইফুল ফেনী : এটা কখনোই দুঃস্বপ্ন ছিল না। ক্রিকেটটায় কয়েকজন লোক সিন্ডিকেট বানিয়ে ফেলেছে। ইচ্ছে আর তদবির বাণিজ্যে খেলোয়াড় নির্বাচন, আজীবন পদ মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা, খেলোয়াড় নির্বাচনে যোগ্যতাকে মূল্যায়ন না করে তদবির বাণিজ্যে নির্বাচিত করা দায়ী। আরো নানা কারণে এই অবনতি বলে আমি মনে করি। এখন আর ক্রিকেট দেখার সেই রকম আগ্রহ নেই। তাই দেখিও না।
ইংল্যান্ড ইস্যু টেনে আশিক আহমেদ লেখেন, ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ নিলেও ২০২৩ সালে তারা সেমিফাইনালে আসতে পারেনি। আর আমার দেশ বাংলাদেশ তো ৯ ম্যাচ খেলে দুইটা জিতে পয়েন্ট টেবিলের ৭ নম্বর অবস্থানে আছে। অন্যদিকে ইংল্যান্ড ৮ ম্যাচ খেলে দুইটা জিতে পয়েন্ট টেবিলের ৮ নম্বর অবস্থানে আছে। এদিক দিয়েও তো বাংলাদেশের অবস্থা ইংল্যান্ডের চেয়ে ভালো। তাহলে বাংলাদেশকে নিয়ে ট্রল করার আগে ইংল্যান্ডের অবস্থার কথা চিন্তা করে দেখুন তো। অপরদিকে বাংলাদেশের খারাপ পারফরম্যান্স হওয়ায় আপনি সরাসরি খেলোয়াড়দের দোষ দিতে পারেন না। যদি আপনি ক্রিকেট খেলা দেখে থাকেন আর কি। বাংলাদেশ হারবে, বাংলাদেশ জিতবে। তাদের নিয়ে ভালোমন্দ অনেক কথাই হবে। তাই তাদেরকে নিয়ে ট্রল না করে নিজের দেশের ক্রিকেটকে ভালোবাসুন। সেই সঙ্গে তাদের সাপোর্ট দিয়ে তাদের পাশে থাকুন। সবার স্বপ্ন বিশ্বকাপ। তাই ব্যর্থতা ভুলে নিজের দেশকে সাপোর্ট করুন।
মন্তব্য করুন