কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:৩২ পিএম
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, রাজপথে সহিংসতা এবং আমাদের শিশুদের শিক্ষাজীবন

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

দৈনিক কালবেলায় ৬ নভেম্বর (সোমবার) ‘রাজনৈতিক সহিংসতায় আতঙ্ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।

মাহমুদুর রহমান : ২০০৭ ও ২০২৩-এর মধ্যে পার্থক্য অনেক। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। করপোরেট সেক্টরে কর্মজীবী বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সব রাজনৈতিক দল ক্ষমতার লোভে হরতাল-অবরোধ যে দিচ্ছে অফিস কি বন্ধ থাকছে? না অফিস-স্কুল সবই খোলা থাকছে। মাঝখানে পরিবার থাকছে আগুন আতঙ্কে। রাজনৈতিক দলগুলো জোর করে চাচ্ছে হরতাল সফল হোক। কিন্তু আগুন, ককটেল দিয়ে আতঙ্ক করে কীসের বার্তা দিতে চাচ্ছে তারা। এখন তো এক দল জোর করে ক্ষমতা দখল করতে চাচ্ছে। অপরদিকে আরেক এক দল জোর করে ক্ষমতায় থাকবে। মাঝখানে জনগণ কী চায় ওইটা কেউ জানতে চায় না। সবাই চায় ক্ষমতা আর টাকা।

এম কে রঞ্জু : মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক অধিকারগুলো রয়েছে তার সবগুলোই আজ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কোমায় রয়েছে। সুতরাং এ অবস্থায় শুধু শিক্ষা নিয়েই পড়ে থাকলে কীভাবে হবে? আমার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, নিরাপত্তা এগুলোর কী হবে!

নাসির মাহমুদ : সহিংসতা কখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থেমে থাকেনি। কাজেই বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলুক এটাই মুক্তিকামী জনতা চায়।

গোলাম ফারুক সরকার সুমন : হারানো ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর সচেতন নাগরিকের আতুরঘর হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই শান্তিপূর্ণভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া উচিত। সহিংস বা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

মো. মামুনুর রশিদ : বর্তমান রাজনীতি বলতে কিছু নেই। আছে শুধু নোংরামি। সে জন্য এখন আর ভালো মানুষ রাজনীতি করে না।

গ্র্যাজিং ল্যান্ড : প্রত্যক নাগরিকের সমাবেশ করার ও মিটিং-মিছিল করার অধিকার রয়েছে। তা যদি যথার্থ কারণে হয়ে থাকে তবে আমি ওই সমাবেশ সাধুবাদ জানাই কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই সভা-মিছিলের নাম করে দেশব্যাপী সহিংসতা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলশ্রুতিতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ গত ৮-১০ দিন ধরে আমি ক্লাসে যেতে চাই কিন্তু আমাকে বাসা থেকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, রাজনৈতিক সহিংসতায় পরিবার আতঙ্কিত। তো একজন ছাত্র হিসেবে আমার অনুরোধ আপনারা আপনাদের অধিকার পালন করেন এতে আমাদের অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক : আমার মতামত হলো, সব রাজনৈতিক দলের মিছিল-সমাবেশ করার অধিকার আছে। তবে সেটায় কোনো ব্যক্তি বা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির কারণ হওয়া ইতিবাচক বলে মনে করি না। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করে আগামীর বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শিক্ষিত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবে।

মো. সাব্বির : বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যে অবস্থা তাতে আগামী ছয় মাস বন্ধ থাকলেও কোনো ক্ষতি নেই। ক্যাম্পাসে গেলে মনে হয়, কর্তপক্ষের কারো কোনো দায়বদ্ধতা নেই। স্বাধীনতার প্রশ্নে নাই-বা গেলাম। আমাদের ক্যাম্পাসে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য থাকে পড়াশুনা করা, গবেষণা করা এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চর্চা করা। সেখানে আমরা নির্দিষ্ট দলের পক্ষে তাৎক্ষণিক সাড়া না দিলে ক্যাম্পাসে থাকার সুযোগ নেই। অমুক ভাইয়ের জন্মদিনের মিছিলে না গেলে মাইর খেতে হয়। তমুক ভাই আসছে রাজপথ কাঁপছে না বললেও ক্যাম্পাসে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ দেশের উদীয়মান তরুণদের দেখলে মনে হয় জীবনে খাওয়া-দাওয়া ঘুম আর রাজনীতি ছাড়া কোনো কাজ নেই। নেই কোনো স্বপ্ন, কীভাবে নিজেকে নিয়ে ভাবা যায়, পরিবার নিয়ে ভাবা যায়- এসব তাদের চিন্তায় নেই। কথাগুলো একক কোনো দল বা গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে নয়, সবাই একই। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা মনে হয় বদলে গেছে। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়।

সফিকুল আলম : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে আতঙ্কমুক্ত রাখা উচিত। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব দলের নেতা থেকে কর্মীর ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, আত্নীয়-স্বজন পড়ালেখা করে। তাই সবার স্বার্থেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক সহিংসতামুক্ত রাখা উচিত।

সাইদ রাজু আহমেদ : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কারা? শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে, শিক্ষার্থীরা বেয়াদব হয়ে গেছে। গভর্নিং বডি-ই তো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিচিত হয়ে গেছে। শিক্ষকরা টাকা কামানোর প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত।

মো. ফরিদ সরকার : বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধ করে অনেক গাড়ি ভাঙচুর ও জ্বালানো হচ্ছে। আবার অনেকে মারাও যাচ্ছে। তাই আমি মনে করি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়া উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক : বিএনপি রাজনীতি শিখেছে আওয়ামী লীগের থেকে। সুতরাং যা হওয়ার তাই হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য যদি বিএনপির মূল ইস্যু হতো তাহলে এক কোটি লোক সমাগম হতো। যেই ইস্যু নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে তা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়।

আবদুল বাসেত : বিপর্যস্ত অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকারবিরোধী দলের যুদ্ধংদেহী মনোভাব জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। তার ওপর এই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাবের ঢাকা শহরে শিশুদের স্কুলে কীভাবে পাঠাব। বার্ষিক পরীক্ষার্থীরা কীভাবে পরীক্ষা দেবে। এর সমাধান কী?

সিদরাতুল মুনতাহা রিফা : এমপি, মন্ত্রী, শিল্পপতিদের সন্তান বিদেশে পড়াশোনা করে। ওখানে তো হরতাল, অবরোধ, মারামারি, গোলাগুলি নেই। তাই তাদের এ ব্যাপারে কোনো সমস্যাও নাই। যত সমস্যা সাধারণ মানুষের।

মো. মুকুল মিয়া : দেশের এই অবস্থার জন্য সরকার ও বিরোধী দল দুই-ই দায়ী। তবে সরকার বেশি দায়ী। সরকারের একঘেয়েমির জন্য আজ দেশের এই অবস্থা।

মো. বদরুদ্দোজা : আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। হিংসাত্মক রাজনীতির বলি এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কেনো এমন হবে? রাজনীতি যদি হয় সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপ্রিয় ও আদর্শিক তবেই এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমি আশা করব, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকে। একাডেমিক কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়। অনেক বছর যাবৎ সেশন জট নেই বললেই চলে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

দেওয়ান মো. রাশেদ রানা : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাক। কেউ তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করে না। তবে মা-বাবাদের একটু বেশি সচেতন হতে হবে।

নুর আহমাদ সিদ্দিকী : রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অর্থনীতিতে যেমন ধস নামে ঠিক তেমনি বিঘ্নিত হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। হরতাল-অবরোধের কারণে শিক্ষার্থীদের চরম ক্ষতি হয়। কিন্তু দেশে যখন মানুষের ভোটাধিকার থাকে না, বাকস্বাধীনতা থাকে না তখন রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য হয়ে কঠিন কর্মসূচির দিকে যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি ক্ষমতাসীনদের অধীনে হয় তাহলে সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে, দেশকে শান্ত করতে এখন প্রয়োজন নির্বাচনকালীন একটি দলনিরপেক্ষ সরকার। যদি ফের ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন হয় তাহলে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হবে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ, সমঝোতা হওয়া উচিত। সেই জন্য দরকার নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকারে।

রকি আহমেদ : করোনায় শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পাঠদানে ব্যাহত হয়েছে তাদের পড়াশোনা। বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতা যেভাবে সারা দেশে শুরু হয়েছে তাতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে অভিভাবকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় শিক্ষকরাও পাঠদান দিতে পারছে না। নভেম্বরজুড়েই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। দ্রুত চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ না হলে আবারও চরম হুমকির মুখে পড়বে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ থাকবে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সহিংসতা বন্ধ করুন।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: হরতাল-অবরোধ
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাবি ও জাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জামায়াতের বিবৃতি

ভারতের পেসারদের তোপে প্রথম সেশন শেষে বিপদে বাংলাদেশ

বৃষ্টি হবে কবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

লেবাননে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা

বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত তোফাজ্জল

দুপুর থেকে চলবে মেট্রোরেল, খুলছে কাজীপাড়া স্টেশন 

জাবিতে পিটিয়ে হত্যা, ৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

টাইগার পেসারদের দৃঢ়তায় দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই অলআউট ভারত

যশোরে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত ১

১০

কেন কিনবেন আইফোন ১৬, যেসব কারণে সেরা এ মডেল

১১

টাঙ্গাইলে নায়েবের চেয়ারে স্থানীয় যুবক, ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না

১২

অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান গ্রেপ্তার

১৩

ড. ইউনূসকে মামলা দিয়েছিল জেলে রাখার জন্য : মির্জা ফখরুল

১৪

চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের মিলনমেলা

১৫

অস্বস্তিকর গরম, সুসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস

১৬

লেবানন থেকে ইসরায়েলে ১৭ হামলা

১৭

শেখ হাসিনা দেশটাকে ‘ফোকলা’ করে গেছেন : মির্জা ফখরুল

১৮

২০ সেপ্টেম্বর : নামাজের সময়সূচি

১৯

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

২০
X