কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাজনৈতিক দলের দাবি আদায়ে কেন জনদুর্ভোগের কর্মসূচি

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

বিএনপির ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর)। এ দিনই আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ পালনের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রাজনৈতিক দলের এ ধরনের জনদুর্ভোগের কর্মসূচির বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।

মীর কাশেম : বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও আন্দোলন করার অধিকার রাজনৈতিক দলগুলোর আছে। তবে দাবি-দাওয়া অবশ্যই দেশ ও জনকল্যাণকর হতে হবে। দল ও ব্যক্তি স্বার্থে কিংবা কেবল ক্ষমতা দখলের জন্য ধ্বংসাত্মক হরতাল-অবরোধ করা অযৌক্তিক। এসব রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা হয়। জনসাধারণের চলাফেরার স্বাধীনতা বিনিষ্ট হয়; ব্যবসা-বাণিজ্য ও জানমালের ক্ষতি হয়। সর্বোপরি দেশ ও জনগণের ক্ষতিই হয়। ৯০ দশক থেকে নির্বাচনের আগে সরকার পতনের আন্দোলনের এই হরতাল-অবরোধে সন্ত্রাস-সহিংসতার কুফল দেখেছি। তাই ধ্বংসাত্মক হরতাল-অবরোধ না করে সংলাপে বসে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর সমঝোতায় আসা উচিত। মনে রাখতে হবে, সবার আগে বাংলাদেশ।

হামিদুর রহমান : দাবিটা যদি হয় দেশের মানুষের জন্য তাহলে যৌক্তিক। কিন্তু যদি এটা হয় দলের স্বার্থ হাসিলের জন্য তাহলে অযোক্তিক বলে মনে করি। দেশের মানুষের প্রতি চিন্তা করে মাঠে নামলে অবশ্যই সাধারণ জনগণ সর্মথন করবে।

জহির আলিম : আমরা সাধারণ জনগণ হিসেবে উভয় দলের মধ্যে সমঝোতা চাই। সবাই ক্ষমতার চিন্তা করে আমাদের মতো সাধারণ জনগণের চিন্তা কেউ করে না।

মো. রুবেল হোসাইন : জনদুর্ভোগ ৫ অথবা ১০ দিন হলে তাতে কি সারা জীবন সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবো?

পলাশ মিয়া : হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি দেশের সাধারণ মানুষ মেনে নিয়েছে। দেশের সার্বিক অবস্থা বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার; এসব থেকে সাধারণ মানুষ আজ বঞ্চিত। দেশের সাধারণ মানুষ এর থেকেও কঠিন কর্মসূচি চায়। সাধারণ মানুষ আজ বাকস্বাধীনতা প্রকাশ করলে তাদের ওপর হামলা করা হয়।

মনিরুজ্জামান হুজাইফা : সরকার যখন জনগণের আওয়াজ শুনে না বরং শোনার ভান করে তখন এর চেয়ে কঠিন কর্মসূচি প্রয়োজন।

মোহাম্মদ হানিফ : ক্ষমতায় যেই দলই আসুক, সমস্যা নেই। তবে আসতে হবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে। আর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করি। তাই দাবি আদায় করতে গিয়ে হরতাল অবরোধ নতুন কিছু নয়।

নারায়ণ মিশ্র : গত ১৫ বছর মেনে নিয়েছি আর না হয় ১৫ দিন মেনে নেব। আমার ভোট আমি দেব, রাতে নয় দিনে দেব।

রায়হান আহমেদ : যখন সরকার গণমানুষের দাবি মেনে নিতে অপারগতা প্রকাশ করে, তখন অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এই দায়ভার সরকার এড়াতে পারে না।

আবদুল হালিম : সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে না হাঁটে তাহলে তো হরতাল-অবরোধের বিকল্প নেই। বিরোধী দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে আর সরকারি দল সেই জনদাবি পাশ কাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দলের আর কিছু করার নেই।

মো. আরিফ : এই দেশে টেবিলে বসে আলোচনা করে কোনো দিন দাবি আদায় হয়নি। কারণ, আমরা এখনো সেই মানসিকতার মানুষ হইনি।

খন্দকার রেজাউল পারভেজ : অযৌক্তিক। কারণ, অবরোধে জনগণ তো দূরে থাক বিএনপির নেতাকর্মীরাই রাস্তায় নামে না।

মো. নাজমুল : আমি একজন স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক। তাই আমার স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার আছে। কিন্তু আজকের এই দিনে সেটা বলা যায় না। তাই আমার বা সাধারণ মানুষের স্বাধীনভাবে চলতে যা প্রয়োজন তাই করতে হবে। সেটা অবরোধ হোক বা সমাবেশ হোক আমার বা সাধারণ মানুষের অধিকার আমাদের নিজেদের আদায় করে নিতে হবে।

সাঈদ সরোয়ার : বিএনপি সহিংসতা চায়নি বা সক্ষমতা না থাকার কারণে মাত্র কয়েকটি আসন নিয়েও সংসদে যোগদান করেছে, যা নজিরবিহীন। কিন্তু বিএনপির সরলতা বা বোকামিতে আওয়ামী লীগ ধরেই নিয়েছে এবারও তারা তান্ত্রিকদের মতো করে তথাকথিত নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে পারবে। দুর্নীতি ও নির্যাতনের পর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে চলমান এ আন্দোলনে দিন দিন সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততায় এ আন্দোলন ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

মো. দলীল উদ্দিন : দাবি আদায়ে অবরোধ কর্মসূচি যদি জনদুর্ভোগ হয় তা হলে এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ, আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। সেটা যদি গণতন্ত্রের নাম দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয় তাহলে এটা ঠিক নয়। তারপরও যদি চালিয়ে যায় তা হলে তারা সন্ত্রাসী কাজ করল।

রাকিব মাহমুদ : দাবি আদায় যৌক্তিক একটি বিষয়। তবে সাধারণ মানুষের যদি ক্ষতি না হয় তাহলে এটি নির্ভরযোগ্য কাজ বলে মনে করি। দেশের মানুষ আজ অবহেলিত হয়ে গেছে, বঞ্চিত হয়ে গেছে এবং সব কিছু সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। আর এসবের জন্য দাবি হলে সেটি ন্যায্য বলে মনে করি।

মো. জীবন মাহমুদ : মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবার অধিকার। ভোট দেওয়া সবার অধিকার। আন্দোলন করা সব রাজনীতিক ফোরাম ও দলের অধিকার। কিন্তু মারামারি, হত্যা, গাড়িতে আগুন, বাড়িঘরে আগুন, এটা কোনোভাবে সমর্থন করতে পারি না। বাংলাদেশে বাইরে আসার পরে বুঝলাম, ইউরোপে প্রতি পাঁচ বছর পরে ভোট হয় কিন্তু আমাদের দেশের মতো বা এশিয়ার মতো এত মারামারি মৃত্যু দেখি না। এর কারণ তারা মূলত জনগণের জন্য রাজনীতি করে। আর আমাদের দেশের রাজনীবিদরা শুধু রাজনীতি করেন তাদের পরিবার ও নিজের জন্য। বাংলাদেশে একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বচন হোক। তার জন্য রাজনীতিতে সমাঝোতা লাগবেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমাঝোতা যদি না করে এবং বৈঠকে না বসে তাহেল আজীবন এর মূল্য আমাদের মতো গরিবকে দিতে হবে। সুস্থ ও গ্রহণযোগ্য ভোট করতে হলে যা যা করতে হবে বলে মনে করি তা হলো, শাক্তিশালী নির্বচন কমিশন গঠন, পুলিশকে নিরপেক্ষ রাখা, বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে মাঠে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, এসপি ও ওসিদের নিরপেক্ষভাবে সব দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে, সব দলকে সমানভাবে রাজনীতি করার অধিকার দিতে হবে।

হৃদয় খান : দাবি আদায়ে অবরোধের মতো কর্মসূচি কখনোই যৌক্তিক নয়। এমন কর্মসূচির ইতিবাচক দিকের থেকে নেতিবাচক দিকই বেশি। সঙ্গে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দাবি আদায় করতে চাইলে সেই কর্মসূচির প্রতি জনগণের সমর্থন কমে আসবে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং অতীতে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিবেচনা করলে হয়ত এই কর্মসূচি যোক্তিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু কর্মসূচি চলাকালীন সাধারণ জনগণ ঠিক কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটি একটি বিবেচ্য বিষয়। আমার ব্যক্তিগত অভিমত থেকে বলছি এই সরকার অতীতেও বিরোধী দলের এমন কর্মসূচি প্রতিহত করে আসছে। তাই এমন কর্মসূচি যে এইবার সরকারকে চাপে ফেলার ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রভাবকের ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আমি মনে করি না। বরং এমন কর্মসূচি বর্তমানে জণগণের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেবে। তাই এমন পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছেড়ে বিরোধী দলগুলোকে আরও বেশি গঠনমূলক এবং কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: হরতাল-অবরোধ
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি

নড়াইলে বিএনপির অফিস ভাঙচুর, গুলিবিদ্ধসহ আহত ২

বেলিংহ্যামের রেকর্ড ভাঙলেন ইয়ামাল

হবিগঞ্জে নাশকতার মামলায় আসামি ৫ সাংবাদিক

বিবিসির প্রতিবেদন / ইউক্রেন যুদ্ধে ৭০ হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহত

আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা : পুলিশ সদরদপ্তর

মোনাকোর কাছে হারের পর নিজের দোষ স্বীকার করলেন বার্সা গোলকিপার 

গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যানকে চেনেন না মামলার বাদীরা!

তোফাজ্জল হত্যা নিয়ে আশফাক নিপুণের আবেগাপ্লুত পোস্ট

চেন্নাইয়ে হাসানের ইতিহাস

১০

তোফাজ্জল হত্যা নিয়ে যা বললেন মৌসুমী 

১১

ঢাবি ও জাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জামায়াতের বিবৃতি

১২

ভারতের পেসারদের তোপে প্রথম সেশন শেষে বিপদে বাংলাদেশ

১৩

বৃষ্টি হবে কবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৪

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

১৫

লেবাননে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা

১৬

বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত তোফাজ্জল

১৭

দুপুর থেকে চলবে মেট্রোরেল, খুলছে কাজীপাড়া স্টেশন 

১৮

জাবিতে পিটিয়ে হত্যা, ৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

১৯

টাইগার পেসারদের দৃঢ়তায় দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই অলআউট ভারত

২০
X