দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে ৮ অক্টোবর (রোববার) ‘ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করল ইসরায়েল’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত ২০টি মতামত প্রকাশ করা হলো।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন বিশেষ করে গাজাবাসী নিপীড়নের শিকার। এবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস হামলার সূচনা করল। এর প্রতিক্রিয়ায় যুদ্ধের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। পাঠক ওসমান শেখ লেখেন, ‘ইসরায়েল যখন যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে তখন হামাসের লড়াই চালিয়ে যাওয়া উচিত। আলোচনা কখনোই ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। কাজেই আলোচনা বাদ দিয়ে যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করা অনেক গৌরবের। আর আলোচনা যদি করতেই হয় তাহলে দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক আলোচনা করতে হবে। ইহুদিদের জন্য ইসরায়েল এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে মুসলিমদের জন্য ফিলিস্তিন। দ্বি-রাষ্ট্র গঠন করা একমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায়। দ্বি-রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।’
এদিকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনিদের সামরিক এ হামলায় বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় বইছে। ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়লে উদ্যাপনে মাতে গাজাবাসী। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই গাজায় বরাবরের মতো কান্নাকাটি শুরু হয়। এ পরিস্থিতির জন্য হামাসের সিদ্ধান্তকে দায়ী করছেন আরেক পাঠক জয় দেবনাথ। তিনি লেখেন, ‘ইসরায়েলকে শেষ করতে গিয়ে গাজাবাসী নিজেরাই শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। হামাস যুদ্ধ লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।’
ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে মো. স্বাধীন মালিক লেখেন, ‘ইসরায়েল আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করায় যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হবে। বিশ্ব আরও একটি ভয়াবহ যুদ্ধের সাক্ষী হবে। একদিকে মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে যাবে, অন্যদিকে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন দেবে। তখন যুদ্ধের ধরণ ও কৌশল পাল্টে যাবে। শান্তি আলোচনা ব্যহত হবে।’
এ ছাড়া পাঠকরা নিজেদের অভিমত প্রকাশ করে সপক্ষে নানা যুক্তি দিয়ে লেখেন,
ফজলে রাব্বি : ইসরায়েল বার বার ফিলিস্তিনিদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল বাহিনী ফিলিস্তিনিদের বিভিন্নভাবে জিম্মি করে রেখেছে। মসজিদ আল-আকসায় নামাজরত মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। যার ফলে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের সুখ-শান্তি ও স্বাধীনতা হারিয়ে সংগ্রামী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে। নিজেদের স্বাধীন করতে মরনপণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এটি তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই। আমরা ফিলিস্তিনের সফলতা কামনা করি এবং সেই সঙ্গে সব মুসলিম দেশকে ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই।
আইয়ুব আলী : রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এই যুদ্ধে পড়বে। পশ্চিমারা ইউক্রেনকে যেভাবে সাহায্য করছে তেমনি রাশিয়া ও তার মিত্ররা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াবে বলে মনে হয়।
নিয়ামুল হোসাইন : এখন ফিলিস্তিনকে শক্তভাবে প্রস্তুত হয়ে নিজদের রক্ষা করতে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। একটি রাষ্ট্র কত দিন জুলুমের স্বীকার হবে? ফিলিস্তিনিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন শুধু সামনে আগাবার পালা। কিন্তু এভাবে আর কতদিন! এর কী সমাধান হবে না? মূল সমস্যা হলো ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা কিছু ইস্যুতে মোটেও একমত হতে পারছে না। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ব্যাপারে কী হবে, পশ্চিম তীরে যেসব ইহুদি বসতি স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো থাকবে না কি সরিয়ে নেওয়া হবে, জেরুজালেম নগরী কি উভয়ের মধ্যে ভাগাভাগি হবে, সবচেয়ে জটিল ইস্যু হচ্ছে, ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্ন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রায় তিন দশক ধরেই শান্তি আলোচনা চলছে। কিন্তু সংঘাতও বন্ধ নেই। কোনো সমাধান এখনো মেলেনি। তাহলে ভবিষ্যৎ কী? খুব সহসা এই পরিস্থিতির কোনো সমাধান মিলবে না। সংকট সমাধানে সবশেষ একটি উদ্যোগ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এটিকে 'ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি' বলে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা এই উদ্যোগকে নাকচ করে দিয়েছিলেন। অভিযোগ করেছিলেন একতরফা উদ্যোগ বলে। ফলে ট্রাম্পের সেই উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসেনি। ভবিষ্যতের যেকোনো শান্তিচুক্তির আগে দুপক্ষকে জটিল সব সমস্যার সমাধানে একমত হতে হবে। সেটি যত দিন না হচ্ছে এই সংঘাত চলতেই থাকবে।
রাজু হাসান রাজন : দখলদার ইজরায়েলকে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড ত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি মুসলিম দেশের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করে এক হতে হবে।
আমিনুল ইসলাম : এই যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে ধস নামতে পারে। অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে ফিলিস্তিনিরা।
মো. ইমন আহমেদ : ফিলিস্তানিরা কখনই ইচ্ছাকৃত হামলা করেনি। তাদের নিজের ভূখন্ড ও বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য হামলা করতে বাধ্য হয়েছে। আজ বা কাল ফিলিস্তিনেরই জয় হবে।
বিএম হানিফ হোসাইন : ইসরায়েল অনানুষ্ঠানিকভাবেই দীর্ঘদিন একচেটিয়া যুদ্ধ করে যাচ্ছে। তারা ফিলিস্তিনের অসহায় মুসলমানদের নির্যাতন করে হত্যা করে তাড়িয়ে তাদের ভূখণ্ড দখল করে রাখছে। ইসরায়েলের এ শক্তির প্রধান উৎস আমেরিকা। আমেরিকা অস্ত্রসহ সব সহোযোগিতা করে ইসরায়েলকে এসব করার সুযোগ করে দিচ্ছে। ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি ফেরাতে হলে আগে আমেরিকাকে হটাতে হবে। আমেরিকা সমর্থন না দিলে ইসরায়েল হামাসের কাছে এক সপ্তাহ টিকবে না। সময় এখন দখলদারত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার, মুসলমানদের এক হওয়ার।
এমএসআই সবুজ হোসেইন : ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনিদের হামলা সঠিক ছিল। কোনো মধ্যস্থতাকারীর কথায় যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত হবে না। নীতি হোক, হয় তারা মরবে না হয় তারা জয়ী হবে।
জান্নাতুল ফেরদাউস আদন : ইসরায়েল শরণার্থী হয়ে ফিলিস্তিনে ঢুকে ফিলিস্তিনিদেরই শরণার্থী বানিয়ে ছেড়েছে। এত দিন অঘোষিতভাবে তারা যুদ্ধ চালিয়ে অসংখ্য ফিলিস্তিনির জীবন নাশ করে জেরুজালেমকে দখল করে রেখেছে। এ ধরণের অন্যায় কোনো দেশ বা জাতি মেনে নিতে পারে না। স্বাধীন ফিলিস্তিনকে আন্তর্জাতিক সব গোষ্ঠী স্বীকৃতি না দিলে এবং জেরুজালেমকে মুক্ত না করলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। বরং বহু হানাহানি হতে থাকবে এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে।
আরিফুল ইসলাম রাকিব : ফিলিস্তিনিদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা আর মৃত্যুকে ভয় পায় না। মাতৃভূমি রক্ষায় বর্বর ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তারা। মধ্যপ্রাচ্যের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ঘোষণা করতে হবে।
হাজেফ মো. আকরাম হোসাইন : ইসরায়েলের মতো সামরিক শক্তিধর দেশের সঙ্গে যে ফিলিস্তিনিরা বছরের পর বছর যুদ্ধ করে টিকে রয়েছে, এটাই তো ফিলিস্তিনিদের জন্য জয় স্বরূপ।
ফিরোজ চৌধুরী : মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান সমস্যা শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব। এই সমস্যার জন্য ইসরায়েল ও আমেরিকা এই অঞ্চলে সুবিধা নিচ্ছে। এর মূল দায় সৌদি আরব ও ইরানের।
নজরুল ইসলাম : মুসলিম বিশ্ব আর কত কাল ঘুমিয়ে থাকবে? আর কত কাল তারা এই অনৈক্যের বেড়াজালে বন্দি থাকবে? আর কত কাল বিধর্মীরা এটার ফায়দা লুটবে? এখনো কি সময় হয়নি জেগে উঠার? স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের এটাই সঠিক সময়। আলোচনার কোনো বিকল্প নেই।
মাহমুদুল হাসান : বিশ্ব মোড়লপনা ধরে রাখার জন্য নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বরং ভূমি দখল করতে ইসরায়েলকে সর্বপ্রকার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। আর মুসলমানরা নেতৃত্বের লোভে নিজের অধিকার ভুলে মোড়লিপনার তোষামোদ করছে। নিজেদের ভেতরে তৈরি করছে ফাটল। এই সুযোগে তারা মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন করছে, সম্পদ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। যেমনটা করেছে ইরাক, আফগানিস্তানে।
এইচ এম রাকিব হাসান : অনৈক্য, স্বার্থপরতা ও কৌশলগত আচরণের কারণে সরাসরি কোনো মুসলিম দেশ অন্য কোনো নিপীড়িত মুসলিম দেশের পাশে দাঁড়ায় না। যার কারণে ইহুদিদের দমন-পীড়ন, আল-আকসা মসজিদে বার বার আক্রমণ করার পরও নামমাত্র প্রতিবাদ দেখা যায়। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ মূলত আমেরিকার দাস।
শাওন ইসলাম : এই যুদ্ধে রাশিয়ার লাভ বেশি হবে। খুব তাড়াতাড়ি ইউক্রেন দখলের পথে হাঁটবে রাশিয়া। এর কারণ হলো, পশ্চিমারা এখন ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়বে। ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ কমিয়ে দেবে। এ সুযোগ নেবে রাশিয়া।
মো. আরিফুল ইসলাম বিজয় : ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ঘুমের মধ্যে রেখেই হামাসের এ আক্রমণটিকে ইতিহাসের স্মরণীয় ঘটনা বলছেন বিশ্লেষকরা। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও এবারের সমীকরণ হবে ভিন্ন। কারণ, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আগের তুলনায় বর্তমানে যথার্থ শক্তিশালী। নিঃসন্দেহে এ লড়াই দীর্ঘ হবে। ইতিমধ্যেই লড়াই পশ্চিম তীরেও ছড়িয়ে পড়েছে। লেবাননের হিজবুল্লাহও যদি এই যুদ্ধে কোনোভাবে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তিন দিক থেকে ইসরায়েল কোনঠাসা হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যেই ইরান, কাতার, সৌদি আরব ও তুরস্ক তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে পারবে না। ফলে যুদ্ধটি হবে দীর্ঘস্থায়ী।
গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম
মন্তব্য করুন