দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে ৪ অক্টোবর (বুধবার) ‘অপতথ্য প্রচারিত হলে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত ২০টি মতামত প্রকাশ করা হলো।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘অপতথ্য’ নেতৃত্ব বাছাইয়ে ভোটারদের দ্বিধান্বিত করতে পারে। বিভ্রান্ত হয়ে জনগণ দুর্নীতিবাজদের দেশপ্রেমিক ভেবে নির্বাচিত করতে পারে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যেতে অপতথ্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তবে তা বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। এ ছাড়া সহিংসতা উসকে দেওয়ার ঘটনার আশঙ্কাও করছেন পাঠকরা।
এ বিষয়ে মো. হাসান লিখেছেন, ‘সত্য তথ্যই সঠিক দেশপ্রেমি এবং জনকল্যাণমুখী নেতৃত্ব বাছায়ের মাধ্যম। অপতথ্য দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন, দেশদ্রোহী নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনতে পারে। এতে দেশপ্রেমি ও জনকল্যাণমুখী নেতৃত্ব বিকশিত হতে বাধাগ্রস্থ হতে পারে। তাই অপতথ্য নয়, সঠিক সত্য তথ্যই দেশ ও মানবতার কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের জন্য নির্বাচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
বাকী বিল্লাহ : অপতথ্য কেবল নির্বাচন নয়, সর্বক্ষেত্রে বিপদজনক। অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যাঙেরছাতার মতো গজিয়ে উঠা অনলাইন নিউজ পোর্টালের সুবাদে আজ সাংবাদিকে ভরে গেছে দেশ। বেশির ভাগের আবার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যারা অনেকটা কপি-পেস্ট ক্যাটাগরির সাংবাদিক। একটা কিছু পেলেই যাচাই-বাছাই না করে তা ছড়িয়ে দেয়, যা অনেক সময় মারাত্মক সংঘর্ষ বা খুনাখুনিতে গিয়ে পৌঁছায়। কাজেই অপতথ্য রোধে সবার আগে অপ-সাংবাদিকতা রোধ করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যত্রতত্রে গজিয়ে উঠা অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সামনে যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন রয়েছে, সে ক্ষেত্রে অপতথ্য প্রচারের ব্যাপারে অধিকতর সচেতন থাকা জরুরি। সামান্য অপতথ্য প্রচার নির্বাচনে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম, যার অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক সচেতন মহল ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে গেলে জেনে-বুঝেই এসব অপতথ্য প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। যার ফলে, তা সহজে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই অপতথ্য প্রচার ব্যাপারটাকে ছোটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অপতথ্য প্রচার রোধে সামাজিক সচেতনতামূলক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন এবং তা অত্যন্ত জরুরি।
আবদুল কাইয়ুম রাকিব : সঠিক তথ্য প্রকাশের ফলে জনজীবনকে যেমন সহজ ও গতিশীল করে তেমনি গুজব বা ভিত্তিহীন অপতথ্যের কারণে মানুষ ধোকায় পড়ে প্রতারিত এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কারণ, অপতথ্যগুলো এমন মেক-আপ বা রং মিশিয়ে মিষ্টি ভাষায় প্রচার করা হয়, যাতে সাধারণ মানুষ আকৃষ্ট হয়। মনে রাখতে হবে, চকচক করলে সোনা হয় না। তাই আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু গুজব বা অপতথ্য প্রচার হতে পারে। যেটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়ন সাধনে ভূমিকা রাখতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানাচ্ছি।
মো. নজরুল ইসলাম : কোনটা তথ্য আর কোনটা অপতথ্য পাবলিক এখন বোঝে। অপতথ্য নির্বাচনে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। সবচেয়ে বড় প্রভাব বিস্তার করে বিদেশি হস্তক্ষেপ।
বি এম হানিফ হোসাইন : অপতথ্য প্রচারিত হলে নির্বাচন প্রভাবিত হতেই পারে। একটি দল নিজেদের স্বার্থ রক্ষা ও ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে দেশের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচার করছে এবং বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম গাইছেন। যাতে করে একটি স্বাধীন দেশের ওপর পশ্চিমারা হস্তক্ষেপ করে। এর ফলস্বরূপ তারা হয়তো ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে কিন্তু নিজের দেশের ১২টা বাজিয়ে এটা কোনো দিনই ঠিক নয়। আর যেকোনো অপপ্রচার-ই দেশের জন্য ক্ষতিকারক।
সজীবুল ইসলাম রিফাত : প্রভাবিত শব্দটি আমরা যেভাবে লিখি তার কতটুকু মানা হয় বা প্রসাশন এ ব্যাপারে কেমন জানে তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা উঠলেই আমাদের সবার আগে মনে পড়ে, সরকারি দলের কোনো অন্যায়ে প্রসাশনের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ না করা। যে দেশের প্রসাশনের ঠিক নেই, যে দেশে সরকারি দলের লোকেদের বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে সিল মারার অভিযোগ আসার পরেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, নির্বাচন এলেই বিরোধী দলের নেতাদের নামে মামলা দিয়ে আটক করা হয়; সে দেশে অপতথ্য আবার কীভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। যেখানে প্রসাশন আগে থেকেই তাদের প্রভাব নির্বাচনের ওপর সম্পূর্ণরূপে বিস্তার করে রাখে। এ দেশের সব কিছু বাদ দিয়ে যদি শুধু প্রসাশনটা ঠিক রাখা হতো, তাহলে আমাদের নির্বাচন নিয়ে বাইরের দেশের কোনো হস্তক্ষেপ লাগতো না। এতে এমনিতেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতো কোনো অপতথ্যই কোনো প্রভাব ফেলতে পারত না। এক কথায় বলতে গেলে এ দেশে যদি এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন না করা যায়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো নির্বাচনের মানে কী সেটাই বুঝবে না।
মো. আবদুল হামিদ : বাংলাদেশের নির্বাচন শুধু অপতথ্যের কারণে প্রভাবিত হয় না। সর্বশেষ এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৭০০-এর বেশি ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে। যেগুলোর লেখকও ভুয়া। এটা সরকার জনগণের টাকা খরচ করে করেছে, যাতে বিদেশিদের সমর্থন টানা যায়। লোকজন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভালো, ভদ্র, নম্র ও সৎ মানুষ মনে করে। এ মানুষটাকে নিয়ে সরকারি দল থেকে ‘নোংরা তথ্য প্রচারে’ আমি লজ্জিত। আমরা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে ব্যর্থ।
মাহফুজ বাবু : দেশের মানুষ এখন নির্বাচন, নির্বাসন প্রহসন নিয়ে ভাবে না। কারন, কয়লার এপিঠ ওপিঠ দুটোই কালো। খবর নেন, আপাতত আলু, তেলের দাম নিয়ে চিন্তিত জাতি।
এটিএম সেলিম : দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে কী আসছে। আমার মনে হয়, যথাসময়েই আরেকটি প্রহসনের সাজানো একতরফা নির্বাচন, জরুরি আইন জারির মাধ্যমে নির্বাচন প্রলম্বিত, তৃতীয় শক্তির ক্ষমতায় আরোহণ, বিদেশি চাপ ও আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাসীনদের পতন, রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।
এসএ সুরুজ : অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম ক্ষমতাসীনদের ভয়ে সঠিক সংবাদ অপকৌশলে প্রচার করে।
নূর মোহাম্মদ সিদ্দিকী : অপতথ্য প্রচার হলে নির্বাচন তো প্রভাবিত হবেই। কিন্তু কেমন অপতথ্য? নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ভুল তথ্য দিলেই তারা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সেটা বললেও কি তিনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন? সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচনের নমুনা দেখে বুঝা যায়, এই কমিশন নির্বাচন পরিচালনায় অদক্ষ এবং ব্যর্থ। তাদের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চিত্র দেখুন। সেখানে দেশের একজন প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় সিইসি বলেছেন, তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন? সেই থেকে দেশের সাধারণ মানুষ এই কমিশনের নাম দিয়েছেন ইন্তেকাল কমিশন। দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বুধবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর দারুস সালামে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের ‘ফ্যাক্ট চেকিং অ্যান্ড ভেরিফিকেশন টেকনিকস ফর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট মহাপরিচালক নূরুন নাহার হেনা।
এতে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট মহাপরিচালক নূরুন নাহার হেনা বলেন, ‘তথ্য প্রবাহের অবাধ গতি জনজীবনকে যেমন সহজ করেছে ঠিক তেমনি ভুয়া ও অপতথ্যের কারণে মানুষ প্রতারিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে অপতথ্য প্রচারিত হলে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে। তাই ফ্যাক্ট চেকিং অ্যান্ড ভেরিফিকেশন টেকনিকস সম্পর্কে সাংবাদিকরা সচেতন হলে জাতি উপকৃত হবে।’ তিনি ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে জাতির উন্নয়ন সাধনে ভূমিকা রাখতে সাংবাদিকদের উৎসাহ প্রদান করেন।
ওই অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক আবু রুশদ মো. রুহুল আমিন ভুয়া সংবাদ প্রচার প্রতিহত করার জন্য তথ্য যাচাইয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। সেই সঙ্গে তথ্য যাচাই-বাছাই করার বিভিন্ন টুলস, সফটওয়্যার সম্পর্কে সাংবাদিকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। ক্রাইম রিপোর্টাররা খুব সংবেদনশীল ক্ষেত্রে কাজ করেন বলে এই ক্ষেত্রে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি সাংবাদিকদের সচেতন করেন।
ওসমান এহতেসাম : অপতথ্য বলতে কোনো সত্যকে গোপন করে জনমতের ওপর প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল বা মিথ্যা তথ্য কূটকৌশলে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটিকে বোঝায়। অপতথ্য অপরাধ সংগঠিত করে। অপতথ্য কখনই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। আনতে পারে না। তথ্য প্রবাহের অবাধ গতি জনজীবনকে যেমন সহজ করেছে ঠিক তেমনি ভুয়া ও অপতথ্যের কারণে মানুষ প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অপতথ্য একটি সুশৃংখল রাষ্ট্রকে কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশৃংখল রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে। শান্ত প্রিয় জনগণকে উত্তপ্ত করতে পারে। কাজেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বার্থন্বেষী মহল অপতথ্য রটাবেন। আর এতে তারা সফল হলে নির্বাচনও ভিন্নদিকে প্রভাবিত হতে পারে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা বিক্ষোভ, কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পুরোনো ছবি-ভিডিও বা খবরের স্ক্রিনশট শেয়ারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ২৮ ও ২৯ জুলাই সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘটনায়ও এমনটিই দেখা গেছে। সামাজিকমাধ্যমে পুরোনো খবরের স্ক্রিনশট অথবা পুরোনো ছবি ও ভিডিওকে সাম্প্রতিক বলে প্রচার করেছে দুই পক্ষই। যা কখনোই প্রত্যাশিত না।
পলাশ রব্বানী : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো এখন অপতথ্যের কারখানা। মূলধারার সংবাদমাধ্যমের চেয়ে মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্যের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এত সব অপতথ্যের ভিড়ে আসল তথ্য খুঁজে নেওয়াটাই মুশকিল হয়ে গেছে। অপতথ্য শুধু নির্বাচনকে প্রভাবিত করে না বরং সমাজকেও প্রভাবিত করে বটে।
গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম
মন্তব্য করুন