ক্যাডার বৈষম্য ও পদোন্নতিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন দাবিতে ২ অক্টোবর (সোমবার) কর্মবিরতি পালন করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এ খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবিকে সমর্থন করেন পাঠকদের একটি অংশ। তবে তা আদায়ে কর্মবিরতির মতো কর্মসূচির পক্ষে নন অনেকেই। অপরদিকে পাঠকরা মনে করেন, শিক্ষাব্যবস্থার অন্যান্য ক্ষেত্রেও বৈষম্য রয়েছে। শুধু বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবি মেনে নেওয়ার মধ্যেই বৈষম্য নিরসন সীমাবদ্ধ নয়। বাকী বিল্লাহ নামের এক পাঠক লেখেন, ‘পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই বর্তমানে আইসিইউতে রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক থেকে শুরু করে উচ্চতর শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা চালু করা উচিত। ক্যাডার বৈষম্য এবং পদোন্নতিসংক্রান্ত সমস্যা যেহেতু সৃষ্টি হয়েছে, তা আলোচনা সাপেক্ষে যৌক্তিক সমাধানে যাওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক লেভেলের বেতন বৈষম্য নিয়েও ভাবা যেতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে আরও বহুবিধ সমস্যা রয়েছে, যা দূরীকরণ ব্যতীত শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তাই পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবি।’
নূর আহমাদ সিদ্দিকী লেখেন, ‘বাংলাদেশে কোথাও বর্তমানে নীতি-নৈতিকতা নেই। অনিয়ম যেখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে সেখানে দাবি আদায়ে শিক্ষা ক্যাডারদের কর্মবিরতি যৌক্তিক। বর্তমানে শিক্ষকরাই বেশি বৈষম্যের শিকার। তাই শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব যৌক্তিক দাবি সরকারের মেনে নেওয়া উচিত বলে মনে করছি।’
অপরদিকে কর্মবিরতির পক্ষে নন এসএম সাখাওয়াত। তিনি মনে করেন, আন্দোলনকারীরা অন্যদের তুলনায় সুবিধাভোগী। এ পাঠক লেখেন, ‘দেশের মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারছে না। অপরদিকে বিসিএস ক্যাডার শিক্ষার কর্মকর্তাদের সরকার যথেষ্ট সুবিধা দিয়ে রেখেছে। এত সুবিধা পেয়েও যদি কর্মবিরতি করতে হয় তাহলে নিম্নআয়ের মানুষকে তাদের দাবি আদায়ে সরকারি সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় নামা উচিত। কারণ, এসব সরকারি কর্মকর্তার চেয়ে নিম্নআয়ের মানুষ আরও অনেক গুণ বেশি কষ্টে রয়েছে। আমার মনে হয়, সরকারের উচিত বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের জন্য কিছু না করে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কোনো কিছু করা যায় কি না তা দেখা উচিত।
‘টুকিটাকি’ লেখেন, ‘এমনিতেই দেয় ক্লাস ফাঁকি। তার ওপর কর্মবিরতি। এ ক্লাস কবে পোষাবে? দাবি থাকলে যথাযথ জায়গাতে করুক। তারা তো সরকারি লোক।’
একই মত শামীমা ফারজানার। তিনি লেখেন, ‘তারা তো সব সময়ই কর্মবিরতিতে থাকেন। এটা আর নতুন কি? এ ভ্যাকেশন ক্যাডাররা আর কী-ই-বা করতে পারে।’
এর মাঝে ভিন্ন আলোচনাও তুলেছেন কেউ কেউ। এইচবি বিপ্লব সরকার লেখেন, ‘আমি জানতে চাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা দিন দিন কেন নষ্ট হচ্ছে?’ মেজবাহ উল হক লেখেন, ‘শিক্ষা ক্যাডারের নাম পরিবর্তন করে ‘বিসিএস মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা ক্যাডার’ রাখা উচিত। প্রতিবেশীর থেকে ধার করা লবণ দিয়ে সারা জীবন রান্না করা যায় না। তেমনি স্ব স্ব ক্যাডার কর্মকর্তা বাদে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়ে দপ্তর কল্পনা করা যায় না।’
মো. আবদুল হামিদ লেখেন, ‘তাদের দাবি অনুযায়ী কোথায় বৈষম্য নেই বলুন। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী একজন ডাক্তার। অপরদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তা নন। তাকে যদি কোনো কর্মকর্তা ডাক্তারি শব্দে কিছু বলেন তাহলে তিনি তা কতটুকু বুঝবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নজর দিন। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান না পেলেও তারা চা-সমুচা-সিঙ্গারা কম টাকায় পাচ্ছেন, সে জন্য গর্ববোধ করেন।’
প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে সোমবার দেশের সব সরকারি কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষা বোর্ডসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরে এই কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। কর্মসূচির কারণে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকলেও কোনো কাজে অংশ নেননি। কলেজগুলোতে ক্লাস, পরীক্ষা, ভর্তিসহ সব কাজ বন্ধ ছিল।
আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান এবং ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নিয়োগবিধি বাতিল, শিক্ষা ক্যাডার তপশিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডারবহির্ভূতদের প্রত্যাহার, জেলা-উপজেলায় শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রশাসন সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় পদ সৃজন। দাবি পূরণ না হলে আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবরও সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন কালবেলার প্রতিনিধিরা। আন্দোলনকারীদের মধ্যে ইডেন মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামিমা নাসরিন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব মন্ত্রণালয়ে অন্য ক্যাডার থেকে নিয়োগ হয়, কিন্তু আমাদের যোগ্য শিক্ষকরা সেই মর্যাদা পান না। আমি সাড়ে ১০ বছর ধরে পদোন্নতি পাচ্ছি না। কবে পাব সেটাও জানি না। একজন শিক্ষক যদি ১৩-১৪ বছর পদোন্নতি না পান, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার পাঠদানে আগ্রহ কমে যাবে। এর ফল ভোগ করতে হয় শিক্ষার্থীদের।’
চাটখিল পাঁচগাঁও মাহবুব সরকারি কলেজে সংযুক্তিতে থাকা ৪০তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ আল আসাদ বলেন, ‘বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। শিক্ষা ক্যাডারকে বিলুপ্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। তাই নিরুপায় হয়ে কর্মবিরতি পালন করছি।’
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি করা হয়েছে, সেখানে শিক্ষা ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ এটি আমাদের ক্যাডার শিডিউলভুক্ত পদ। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরের পদগুলো দখলে নিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন ক্যাডাররা। আমাদের আশঙ্কা, এ অধিদপ্তরও (মাউশি) তারা দখলে নেবে।’
আন্দোলনকারী এসব কর্মকর্তার সঙ্গে একমত মো. স্বাধীন মালিক নামের এক পাঠক। তিনি লেখেন, ‘বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা যে সাতটি দাবি তুলে ধরেছেন, তা যৌক্তিক। কারণ, যোগ্য স্থানে অযোগ্যরা স্থান পায়। এতে যোগ্যদের কোনো মূল্য থাকে না। তাই তাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য দূর করা হোক।’
গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম
মন্তব্য করুন