দৈনিক কালবেলায় ১ অক্টোবর (রোববার) ‘বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় বিদেশিরা : শামা ওবায়েদ’ শিরোনামে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত ২০টি মতামত প্রকাশ করা হলো।
বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ না হলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। জ্বালাও-পোড়াওয়ের এ অবস্থা দেশের জনগণের মতো বিদেশিরাও চায় না বলে মন্তব্য করেছেন পাঠকরা। জসিম উদ্দিন নামের এক পাঠক লেখেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ ভয়াবহ। অবাধ সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে সংঘাত হানাহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে এবং বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে বিশ্বাসযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বিদেশিরা।’
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সদস্য শামা ওবায়েদ বিদেশিদের প্রসঙ্গ টানায় চটেছেন পাঠক মো. আবদুল হামিদ। তিনি লেখেন, ‘শামা ওবায়েদের কাছে প্রশ্ন, আপনারা কি বিদেশিদের জন্য রাজনীতি করেন; নাকি সাধারণ মানুষের জন্য করেন। যদি সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেন বিদেশিদের প্রসঙ্গ না আনলেও পারতেন। কারণ, গত নির্বাচনে আমার মা-বাবা, ভাই-বোন কেউই ভোট দিতে পারেননি। ২০১৪ সালে তো ভোটকেন্দ্রেও বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। সব বাদ দিলাম, স্থানীয় যে নির্বাচনগুলো হয় সে নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেননি তারা। কারণ, সে সময়েও ঝামেলা হওয়ায় কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছিল। এ পরিস্থিতিতেও আপনি বিদেশিদের কথা কেন বলছেন। বলবেন দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে। যদি এ সরকার বা কোনো দলীয় সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দেয়, তাহলে মানুষ কেন্দ্রেও যাবে না।’
অপরদিকে দেশে একটি পক্ষ সহিংসতা সৃষ্টি করলে সবাই ভুগবে বলে ইঙ্গিত করে শহিদ উল্লাহ সফিক লেখেন, ‘কোনো ধরনের রক্তপাত ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জনগণ যাকে ভোট দেন দেবে। কিন্ত মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও কোনো সভ্য দেশের জন্য কাম্য নয়। আমাদের দেশের রাজনীতি স্থিতিশীল থাকলে কেউ আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না । জয় হোক বঙ্গবন্ধুর মেহনতি মানুষের অধিকার মুক্তির সংগ্রাম।’
রাজনৈতিক একটি পক্ষ স্বার্থসিদ্ধির পাঁয়তারা করছে বলে মনে করেন বিএম হানিফ হোসাইন। তিনি লেখেন, ‘বিদেশিরা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। শুধু বিদেশি নয়, সবার চাওয়া নির্বাচন যেন বিশ্বাসযোগ্য হয়। কিন্তু যখন কোনো একটি দল নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা রকম অপচেষ্টা চালায় তখন একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনও অনেকের কাছে অবিশ্বাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গলদটা ওই স্বার্থান্বেষী মহলের মধ্যে। যাদের নিজেদের স্বার্থরক্ষা না হওয়ায় তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবৃদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে।’
এ প্রসঙ্গ আরেকটু স্পষ্ট করে সাইদুল ইসলাম লেখেন, ‘আপনাকে পাস করালেই মনে হবে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।’
বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিয়ে আলোচনার সময় এখন নয় মনে করেন বাকী বিল্লাহ। কারণ হিসেবে তিনি লেখেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের চাওয়াটাই মূলত সবার। বিতর্ক শুধু নির্বাচনী সিস্টেম নিয়ে। তাই এ মুহূর্তে গ্রহণযোগ্য উপায়ে নির্বাচনী প্রসেস নিয়ে আলোচনা করা এবং তা বাস্তবায়ন করা উচিত।’
এ ছাড়া পাঠকরা নিজেদের মতের সপক্ষে যুক্তি দিয়ে লেখেন,
মো. পারভেজ : বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায় । তারা ভোট দিতে চায়। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে যে সরকার আসবে তাকে বাংলার মানুষ মেনে নিতে প্রস্তুত। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন কাম্য।
মো. সোহাগ মিয়া : শামা ওবায়েদের কথাতে রাজনীতি থাকতে পারে। কিন্তু বিদেশি রাষ্ট্রের পাশাপাশি আমরা দেশের সাধারণ জনগণও একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। আমরা নিজেদের ভোটের অধিকার চাই। আমরা তরুণ প্রজন্ম ভোট দিয়ে সরকার গঠনে ভূমিকা রাখতে চাই।
হোসেন মীম সরকার : বাংলার মানুষ আজ ভোট দিতে চায়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট দিতে না পেরে তাদের মনে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল র্নিদলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে জনগণের ভোটধিকার ফেরত পাওয়ার মাধ্যমে পূরণ হতে পারে। জনগণই ঠিক করবে কোন দল বিজয়ী হবে। শামা ওবায়েদের সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করছি। তিনি সঠিক কথাই বলেছেন। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আজ তাদের ভোটাধিকার ফেরত চায়।
রবিন আল হাসান : শুধু বিদেশিরা নয়, দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ বিশ্বাসযোগ্য এবং শান্তিময় নির্বাচন চায়। আমরা দিনের ভোট দিনেই দিতে চাই। জনগণের ভোটের মাধ্যমে আসা সরকার চাই। শান্তিপূর্ণ ভোট চাই।
মো. স্বাধীন মালিক : বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায় বিদেশিরা। শামা ওবায়েদের সঙ্গে আমি একমত। বাংলাদেশের ৯০% মানুষও চায় সুষ্ঠু নির্বাচন। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’- এ স্লোগান বাস্তবায়নে বিদেশিরা কাজ করে যাচ্ছে। গত দুটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় বিদেশিরা।
রোমান খান : প্রত্যন্ত গ্রামের বৃদ্ধও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায়। খাবার টেবিলের বাবা-ছেলের মুখেও ভোট না দিতে পারার আক্ষেপের সুর। সদ্য ভোটার হওয়া নাগরিকও চান ভোটের অধিকার। এদিকে গাঁয়ের বৃদ্ধরাও মুক্ত বাতাসের মতো কথা বলতে চান। অথচ তারা আজ ভীত। এ অবস্থায় বিদেশিরা কেন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাইবে না!
হেফাজ মোরশেদ : কে কী বলল, না বলল তা নিয়ে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই।
এম মহিন উদ্দিন : আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের দাবি। সরকারের অনমনীয়তা দেশ ও আগামীর প্রজন্মকে একটি ভয়াবহতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ইমরান নাজির : জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা দুটোই হারিয়ে গেছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আদৌ এটা সম্ভব কি না জানি না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না বলে মনে করি।
মুহাম্মদ রিয়াদ : তরুণরা অবশ্যই একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ভোটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের জীবনের প্রথম ভোট যেন কোনো বাধা ছাড়াই দিতে পারে, সেটিই আমাদের সবার চাওয়া।
মাসুদ খান : নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ, দলীয় সরকারকে যে আমি বিশ্বাস করব সেই বিশ্বাসের বোধ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আমার মন থেকে উঠে গেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারই আসুক তাকে স্বাগত জানাব।
জাবেদ খান : বাংলাদেশ সার্বভৌম স্বাধীন দেশ। এ দেশের মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান ইত্যাদি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার এগুলো শতভাগ নিশ্চিত করতে পারছে না। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। যাতে এসব অধিকার নিশ্চিতে মনোযোগ দেয় বলে মন্তব্য করেন এ পাঠক।
আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ : অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে জনসমর্থনের শক্তি থাকে। এতে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারে। অনির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে বিদেশিরা ভয় দেখিয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে। এতে বিদেশিরাই লাভবান হয়। অথচ আমাদের দেশে এখন এটাই মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে যে, বিদেশিরা কী চায় বা না চায়। এর জন্য দায়ী তারাই, যারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ক্ষমতার ব্যবসা করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছে। আমরা আমাদের চারপাশে তাকালেই এসব আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠা লোকদের দেখতে পাই।
রফিকুল ইসলাম রফিকুল : আওয়ামী লীগ সমর্থন করে এমন ৯০ ভাগ মানুষও নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায়। আমরা সব দলের মানুষ দেশের প্রতিটি অঞ্চলে মিলেমিশে একসঙ্গে বসবাস করতে চাই। বর্তমানে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সংঘর্ষ হয়। তাই এসব জায়গায় যাওয়া হয় না। আমরা কেউ এসব চাই না। আমরা আমাদের আগের সহনশীল ঐতিহ্য ফিরে পেতে চাই। চালু রাখতে চাই আমাদের সামাজিক সব কাজকর্ম। রাষ্ট্র থাকবে, সরকার থাকবে, বিরোধী দল থাকবে, মতবিরোধও থাকবে কিন্তু সেখানে যেন ভালোবাসাও থাকে।
গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম
মন্তব্য করুন