দৈনিক কালবেলায় ২৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত ২০টি মতামত প্রকাশ করা হলো।
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন পাঠকদের একটি অংশ। তবে তারাও মনে করেন এর ফলে রাজনীতির মাঠ ছাপিয়ে সামগ্রিকভাবে দেশের ওপর প্রভাব পড়বে। আলম হোসাইন নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘যে নিষেধাজ্ঞা দিছে এতেও যদি সরকারি দল সংশোধন না হয় তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য আরও বড় খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে। যা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত তার মিত্র দেশগুলোকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে মন্তব্য করে এসএম মেহেদী হাসান লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব প্রতিটি খাতে পড়বে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোরও ভিসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন নামের এক পাঠক কয়েকটি দিক বিবেচনায় এ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বলছে বাংলাদেশের কারা এ ভিসা নীতির আওতায় আসবেন তাদের তথ্য গোপন রাখা হবে। জনসম্মুখে সেসব নাম প্রকাশ করা হবে না। এতে কিছু ভালোর পাশাপাশি মন্দ দিকও রয়েছে। প্রথমত, শুরু থেকেই এ নীতির প্রায়োগিক দিকটির নিরপেক্ষতা বা স্বচ্ছতার কোনো ভিত্তি নেই। সুতরাং এ নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা বা প্রশ্ন রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। দ্বিতীয়ত, আমেরিকার ভিন্ন ধরনের গোপন অভিলাষ থাকতে পারে। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের ওপর দায় চাপতে পারে। তৃতীয়ত, ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এ ভিসানীতি বহুমুখী অস্থিরতা বাড়াতে পারে। রাজনীতি মেরুকরণে যুক্তরাষ্ট্রের অভিপ্রায় মুখ্য হয়ে উঠতে পারে। ভুলভাবে ব্যবহার ও প্রয়োগের ঘটনা ঘটতে পারে। চতুর্থত, চূড়ান্ত বিচারে ভিসানীতিকে কেন্দ্র করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে। এ প্রক্রিয়া দেশের জন্য হিতে বিপরীতও হতে পারে।’
শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয় বরং বাংলাদেশের কল্যাণ চাইলে দুর্নীতিবাজদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চান এমএইচ ইউসুফ। তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যারা টাকা পাচার করেছে তাদের টাকা বাজেয়াপ্ত করা হোক।’
দেশের কল্যাণ প্রসঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলে মানিক সাত্তার লেখেন, ‘কাজের কাজ কিছুই হবে না। নিজেরা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো সময়ই বাংলাদেশের মঙ্গল চায়নি। এখনো চায় না।’
একই ধরনের মত নাসির উদ্দিন নুরের। তিনি লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে যে কথাগুলো বলতেছে সেটা বর্তমান সময়ের জন্য ভালো। কিন্তু ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য ভালো হবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিকারের মানবাধিকার রক্ষায় দৃষ্টি দিত তাহলে সর্বপ্রথম ফিলিস্তিন-কাশ্মীরের সমর্থনে পদক্ষেপ নিত।’
এত আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও পাঠকদের একটি অংশ মনে করেন এ নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সহজ হবে। পাঠকরা লেখেন,
ইমরান মিয়া : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে স্বাগত জানাই। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দেশটির এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।
মো. আব্দুল্লাহ ফকির : গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানাই। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ তাদের ‘ভোটের অধিকার’ ফিরে পাবে।
আকরাম হোসাইন : বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে বর্তমান ব্যবস্থার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি অবশ্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে।
জহির আহমেদ ঝন্টু : গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে, যারা মানুষের ভোটের অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করে, যারা গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিলে দেশের জনগণ শান্তি পাবে।’
গিয়াস উদ্দিন : এ সরকার প্রতিটি সেক্টরকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতিকে অপরাধ মনে করে না। এটাই যেন নীতি। এ থেকে উত্তরণের বড় ভূমিকা রাখবে এ ভিসানীতি। এটা দেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এ ভিসানীতিকে সাধুবাদ জানাই।
মো. নুর হোসাইন : স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমরা রাজনৈতিকভাবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। যার প্রতিফলন আজকের ভিসানীতি।
খন্দকার মোহাম্মাদ জুয়েল : যারা ভিসানীতিতে অসন্তোষ তারা চিহ্নিত অপরাধী। কারণ, ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে অপরাধীদের জন্য। কোনো সাধু ব্যক্তি এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।
কামাল খান শাকিল : যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশের অগ্রগতির চেয়ে দলীয় ও ব্যক্তি কল্যাণ সাধন করেছে। তাই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য একটি রূপরেখা প্রস্তুত করতে পারেনি। আজ বহির্বিশ্বের কাছে আমাদের অর্জন ম্লান। একই সঙ্গে জাতি হিসেবে আমরা কেমন তাই যেন প্রকাশিত হলো।
এএইচএম মাহফুজ : আগে দেশ বাঁচানো দরকার। পরে রাজনৈতিক দল বাঁচালেও চলবে। সবাইকে নিরপেক্ষ হয়ে চিন্তা করতে হবে। সামনে খুবই খারাপ দিন আসবে। যদি আমেরিকা, ইউরোপ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয় তবে কী হবে।
আসাদুল্লাহ নোমান : ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুরু করাটা ঠিক আছে। কিন্তু তারা কাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছে তার তালিকা প্রকাশ করবে না। তারা যদি তালিকা না প্রকাশ করে তাহলে বিরোধী দলের আন্দোলন বেগবান করতে কষ্ট হতে পারে। কারণ, কোন কোন রাঘববোয়ালদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তা জাতি জানতে পারবে না। যদি জানত তবে বিরোধী দলের আন্দোলনে ব্যাপক গতি আসত। জনমনে যে শঙ্কা রয়েছে তা অনেকটাই কেটে যেত।
মো. মাহদি হাসান : অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা দেশের জন্য অমঙ্গল। এমনিতেই দেশের তাল-মাতাল অবস্থা। আগে ছিল র্যাবের ওপর, এখন ভিসা নিষেধাজ্ঞা। কিছু দিন পরে যদি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয় তখন দেশের অবস্থা খুবই খারাপের দিকে চলে যাবে। দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করে এর একটা সমাধান বের করা উচিত রাজনৈতিক কারণে দেশের মানুষ বিশৃঙ্খলভাবে জীবনযাপন করুক, এটা আমরা সাধারণ মানুষ কখনই চাই না।
মো. আসাদুজ্জামান রনি : এটাতে দেশের এবং সাধারণ জনগণের কোনো ক্ষতি হবে না। শুধু কিছু আমলা এবং রাজনৈতিক বড় নেতা এবং তাদের পরিবারের লোকজন সাময়িকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে। যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দরকার। তবেই না বাংলাদেশের উপকার হবে।
জহিরুল ইসলাম নাহিদ : ভিসা নিষেধাজ্ঞার ফলে আগামী নির্বাচনকে যারা একতরফা ও অগণতান্ত্রিক বানাতে সাহায্য করার কথা ভেবেছিল, তারা এখন সতর্ক ও আতঙ্কে থাকবে। এই বুঝি আমার ভিসা বাতিল হলো! তাই ভিসা নিষেধাজ্ঞা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বড় সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করবে।
গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম
মন্তব্য করুন