ভারি বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। দেখা দেয় অচলাবস্থা। ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত ২০টি মতামত প্রকাশ করা হলো।
ঢাকায় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার পেছনে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, রাজধানী ও এর চারপাশের নালা-খাল-নদী দখল, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি এবং নাগরিকদের অসচেতনতাকে দায়ী করছেন পাঠকদের বড় একটি অংশ। এসব সমাধানের মাধ্যমে সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। আনোয়ার হোসেন নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘ঢাকার আশপাশে এবং ঢাকার ভেতরে যত ডোবা-খাল রয়েছে, সেগুলো দখলমুক্ত করা হোক। এগুলো আবর্জনামুক্ত করে পানি প্রবাহের গতি ফিরিয়ে দিক।’
নাগরিকদের অসচেতনতাকে দায়ী করে শেখ বুলবুল আহমেদ লেখেন, ‘জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের সহায়ক মনোভাবাপন্ন হতে হবে। ড্রেনগুলো আমরাই ময়লা করি। কোথাও পানি বেঁধে গেলে তা না সরিয়ে আমরা সরকারকে গালি দেই।’
নগর পরিকল্পনায় গাফিলতি দেখছেন আব্দুস সালাম খান নামের এক পাঠক। তিনি লেখেন, ‘রাস্তার নকশা সহজ করে কাজগুলো ঠিকভাবে যদি করা হতো এবং টাইম ম্যানেজ করত, তাহলে এ পানি আটকাতো না। সবকিছু গাফিলতির জন্য হয়েছে। নেতাদের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’
একই প্রসঙ্গে সফিকুল আলম লেখেন, ‘ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিদের উচিত ‘কথা কম কাজ বেশি’ নীতি পালন করা।
পানি নিষ্কাশনে কর্তৃপক্ষের করণীয় প্রসঙ্গে মো. ঈসা মিয়া লেখেন, ‘ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে বৃষ্টির পানি সরানোর জন্য প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার খোলা নালা এবং ৪ হাজার কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ নালা রয়েছে। কিন্তু এসব নালা পরিষ্কার থাকে না। এতে ৪০ ভাগেরও বেশি ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে। তাই পানি নিষ্কাশনের জন্য এসব নালা পরিষ্কার করতে হবে। এতে কিছুটা হলেও পানি নিষ্কাশন করা যাবে।’
মো. কামরুল হাসান মণ্ডল লেখেন, ‘সব রাস্তার সঙ্গে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যাতে করে ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে রাস্তাঘাটে পানি জমতে না পারে।’
মো. সজীবুর রহমান সজীব : আধা ঘণ্টা একটানা বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে। মানুষ কীভাবে চলাফেরা করবে। ফুটপাত ধরে হাঁটতে গেলে দেখা যায় যেখানে-সেখানে গর্ত। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে। মানুষকে দেখানোর জন্য কোনো উন্নয়নের প্রয়োজন নেই। জীবনমানের উন্নয়ন প্রয়োজন। আমরা সাধারণ জনগণ এটাই চাই।
রবীন আল হাসান : বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেল। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু লোক মারা গেল। এদের দায়ভার কে নেবে?
মো. স্বাধীন মালিক : সরকারের উন্নয়ন কেন কাজে আসছে না। কেন ঢাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা, যানজট। ঢাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ কোথায়।
মাসুদ অফিশিয়াল : শহরের ভেতরে জমা পানি শহরের বাইরে বের হওয়ার সংযোগ তৈরি করে দিতে হবে। যাতে ড্রেনের মাধ্যমে পানি দ্রুত শহরের বাইরে খাল-নদীতে চলে যায়। কর্তৃপক্ষের উচিত ড্রেনগুলোর যত্ন নেওয়া।
হুমায়ুন কবির রুস্তম : নগরায়ণে বাংলাদেশ বরাবরই ব্যর্থ। সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত অবকাঠামো বাস্তবায়নের ফলস্বরূপ জলাবদ্ধতা। যাইহোক পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রতিনিয়ত ড্রেন পরিষ্কারের কোনো বিকল্প নেই। বৃষ্টির সময় সিটি করপোরেশনের লোকদের জলাবদ্ধ অঞ্চলগুলোতে দেখা যায় না। আগুন লাগলে যেমন ফায়ার সার্ভিস কাজ করে ঠিক তেমনি জলাবদ্ধ জায়গায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
হুমায়ুন কবির : ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেললে এমন জলাবদ্ধতা হবে না বলে আশা করি।
এইচআর রানা : অপরিকল্পিত নগরে আপনি যতই পরিকল্পিত নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করেন না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না। এতে ভোগান্তি আরও বাড়বে।
আসাদুল্লাহ নোমান : সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুর্নীতি বাদ দিতে হবে। তাদের যে কাজ তা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করতে হবে।
আহমাদ মনসুর শেখ : যতদিন আমরা সাধারণ জনগণ সচেতন না হবো ততদিন দুর্ভোগ চলবেই। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ না হলে এই অল্প পানিতেও কষ্ট করতে হবে। সবার আগে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
ফারিদুল ইসলাম : নাজিরা বাজারে ড্রেনের কাজ এক মাস আগে শেষ হইছে। কিন্তু এখনও মাটি ভরাট করা হয়নি। এতে ময়লা জমে প্রচুর দুর্গন্ধ। গত দুই বছরে অনন্ত চারবার এ ড্রেনের কাজ করা হয়েছে। এমন অবস্থা ঢাকার প্রতিটি সড়কের। দেখার যেন কেউ নেই।
হাসিবুল ইসলাম : ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো থাকলে বৃষ্টির সময় রাস্তাঘাটে ঘটে যাওয়া অসংখ্য দুর্ঘটনা থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবে।
রায়হান রাজ : বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর দ্রুত পানি নিষ্কাশনে কাজ শুরু করা আবশ্যক। স্থানীয় সরকারের সুপারিশ ও নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুসরণ করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানুষের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক হবে।
কাজী আল মোহাইমিন সাকিন : ঢাকা শহর যানজটের শহর। যেখানে আছে বিশাল অট্টালিকা। মানুষের সমাগম তো আছেই, নেই কোনো ফাঁক-ফোকড়। অল্প বৃষ্টি হলেই যেখানে লেগে থাকে জলাবদ্ধতা। ভারি বর্ষণ হলে তো হয়ে যায় সাময়িক বন্যা। জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হলো পানি যাওয়ার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা। পর্যাপ্ত পরিমাণ ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকা। রাস্তার নামে আসা অনুদান সঠিক ব্যবহার না করে পকেট ভারি করাও কারণ। শহরের বিভিন্ন জায়গায় সঠিক নিয়মে সুন্দর কাজ হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে ঢাকা শহর। থাকবে না কোনো জলাবদ্ধতা। হবে না অচলাবস্থা।
শাফিউল আলম : প্রতি সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো সিটি করপোরেশনের কর্মচারী দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং জনসাধারণের উচিত ড্রেনে পরিত্যক্ত কাগজ, বোতল ইত্যাদি না ফেলা। জনগণ সচেতন না হলে পানি নিষ্কাশন সম্ভব নয়।
গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম
মন্তব্য করুন