দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্ককরণে ১৯ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ‘বছরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৫ হাজার’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত ২০টি মতামত প্রকাশ করা হলো।
কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবে দেখতে চান ফজলে রাব্বি নামের এক পাঠক। তবে এতে যেন ধনী-গরিবের বৈষম্য আরও প্রকট না হয় সেদিকে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি লিখেছেন, ‘দেশে কোটিপতি বেড়েছে, নিশ্চয়ই তা দেশের জন্য ভালো এবং ইতিবাচক সংবাদ। পক্ষান্তরে যদি সাধারণ মানুষ দরিদ্র থেকে আরও হতদরিদ্র হয়ে যায়, তাহলে ওই ধনীদের কোটিপতি হওয়া দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। এখন ধনীরা ব্যবসা করে সিন্ডিকেটের মারফতে সহজেই কোটিপতি হতে পারে, কিন্তু গরিব-মধ্যবিত্তরা ভ্যাট-ট্যাক্সের বোঝা, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। যদি দেশের সার্বিক জনসাধারণের সমহারে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হতো এবং তাদের মধ্যে থেকে কোটিপতি হতো তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় থাকত। কিন্তু একশ্রেণি কোটিপতি হচ্ছে অপর শ্রেণি হচ্ছে হতদরিদ্র।’
সংবাদটির প্রতিক্রিয়ায় মো. নুর হোসাইন নামের এক পাঠক নিজের দুরবস্থার কথা লিখেছেন। তিনি লেখেন, ‘২০১৭ সালে একটি ব্যবসা শুরু করেছিলাম কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে পুঁজি স্বল্পতায় ব্যবসার অবস্থা খারাপ। বর্তমানে ব্যবসা চালু রাখতে হিমশিম খাচ্ছি।’
কোটিপতির হিসাবের প্রসঙ্গ উঠে আসায় একই সময়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে যাওয়াদের তালিকা করার আহ্বান জানিয়েছেন পাঠকদের একটি অংশ। আইএইচ খান ইমু লেখেন, ‘আমি মনে করি, কোটিপতি কত বাড়ল সেই হিসাব না করে দেশে গরিব ও একেবারে নিম্নশ্রেণির মানুষ বাড়ল না কি কমল সেই তালিকাটি করা উচিত।’
নুর উদ্দীন লেখেন, ‘গরিব কত শতাংশ হয়েছে তা তালিকাভুক্ত করা জরুরি। যারা কোটিপতি হয়েছে তারা কীভাবে কোটিপতি হয়েছে, তাও খতিয়ে দেখবেন।’
কেউ কেউ উপদেশ দিতেও ভোলেননি। মো. আবু হাসনাত লেখেন, ‘জীবনের প্রতিটি সিঁড়িতে পা রেখে ওপরে উঠা উচিত। ডিঙিয়ে উঠলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
কোটি টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীদের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে মো. খালিদ হাসান লেখেন, ‘এ কোটিপতিদের আয়ের উৎস কী এবং তারা ঠিক কত দিনের উপর্জন দিয়ে কোটিপতি হলেন; এ বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য চাই। এ ছাড়া দেশে এ ধরনের কোটিপতি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে এক শ্রেণির মানুষ দারিদ্র্যসীমার মধ্যে চলে যাচ্ছে কি না সেটাও দেখার বিষয়। সম্পত্তির সুষ্ঠু বণ্টন হোক এবং দেশের অর্থ নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছে যেন পুঞ্জিভূত না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’
একই প্রসঙ্গে ঠাট্টা করে আজাদ রহমান চৌধুরী লেখেন, ‘আলাদিনের চেরাগ পাইছে! তাইতো কোটিপতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ওই সবাই স্লোগান ধর।’
মো আকতার মিয়া : কেমন স্বাধীন দেশে আমরা বসবাস করি! একদিকে বছরে পাঁচ হাজার লোক কোটিপতি হয়। অপরদিকে কত লাখো মানুষ অসহায়ের মতো জীবনযাপন করছে, এটার হিসাব কেউ করে না।
মো. স্বাধীন মালিক : গরিবেরা আরও গরিব হচ্ছে। অন্যদিকে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। অথচ দেশে স্বাস্থ্যসেবা তলানিতে। বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। ঠিক এ সময় পাঁচ হাজার কোটিপতি বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?’
মোশাররফ হোসেন : এটা তো শুধু একটি তালিকা। এর বাইরে যারা রয়েছেন তারা হলেন কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে স্টেশনের মালিক সমিতির সভাপতি। তালিকাভুক্ত নয় কিন্তু এমন অনেকেই কোটিপতি।
রিয়াদ ফেনী : কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃত মানুষের সংখ্যা বাড়েনি। বেকারত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে।
এনামুল হক : যতদিন রাজনীতির ময়দানে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকবে তত দিন কোটিপতির সংখ্যা বাড়বে। বছর বছর দারিদ্র্যসীমার নিচে যাবে আরও কয়েক কোটি মানুষ।
গোলাম জাকারিয়া নাফলু : দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারী ও অসৎ মুনাফাখোররা এ তালিকায় আছে নিশ্চয়ই! কতিপয় গোষ্ঠী আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। অপরদিকে সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফীতির দুর্বিষহ কষ্ট নিয়ে দিনযাপন করছে।
ওমর ফারুক : প্রতিবেদনটি যথাযথ। একটি বিশেষ শ্রেণি কোটিপতি হচ্ছে। কিন্তু সে সঙ্গে ব্যাপক একটি সংখ্যায় মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত হয়েছে।
মো. এএইচ মিশু : নতুন করে পাঁচ হাজার মানুষ কোটিপতি হয়েছে। নতুন করে কত লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে, এর একটি তালিকা হওয়া দরকার। সমাজে দিন দিন বৈষম্য বাড়ছে। কিন্তু এর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। কিছু মানুষ বিভিন্ন অবৈধ পথে সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে। আর আগে যারা নিম্নমধ্যবিত্ত ছিল তারা এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। সমাজের এই অনৈতিক ব্যবস্থাগুলো বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নয়তো এভাবে চলতে থাকলে দেশ বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
মাসুম বিল্লাহ : আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখেছি। ১০ বছর আগে বিড়ি খাওয়ার টাকাও ছিল না, এখন তিনি কোটিপতি। এগুলো তদন্ত করে দেখা হোক। তাহলে গোমর ফাঁস হয়ে যাবে।
সাজিদ : প্রকৃতপক্ষে কোটিপতি পাঁচ হাজার বাড়লেও গরিবের সংখ্যা হয়তো পাঁচ কোটি বেড়েছে। দুর্নীতি, মাদক কারবার কোটিপতি বাড়ার প্রধান কারণ বলে মনে করি। কোটিপতির তালিকা করলে দেখা যাবে, চাকরিজীবীই বেশি। অথচ তাদের সারা জীবনের বেতন কোটি টাকা নয়।
ইমরান আলী : এদের ৯০ শতাংশ সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। এদের উপার্জনের টাকা ৯৫ শতাংশই হারাম। নবীর সুন্নত তরিকায় ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া দুরূহ ব্যাপার।
হামিদ : এ টাকাগুলো গরু বিক্রির টাকা নয়। এসব চাষির টাকা। চাষিরা আলু বিক্রি করে ১০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৬০ টাকায়। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা মানছে না। সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?
আনোয়ার হোসেন : ব্যবসায়ীরা কোটিপতি হচ্ছে। বর্তমানে ব্যবসায় সিন্ডিকেট করে একশ্রেণির লোক কোটিপতি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আটকে রেখে বাজারে দাম বাড়িয়ে তারা লাভবান হচ্ছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের টাকা চুষে তারা কোটিপতি হচ্ছে।
গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম
মন্তব্য করুন