২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। জনবান্ধব বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের উপকার হবে। এই বাজেটে অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। সার্বিকভাবে এটিকে আমি ভালো বাজেট বলে মনে করি।
অর্থনীতির নানা প্রতিকূলতা স্বত্তেও প্রবৃদ্ধির গতি ছিল ভালো। সন্দেহ নেই, প্রবৃদ্ধির এই গতিধারা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তির পরিচয় দেয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ গতি আগামী দিনে ধরে রাখার লক্ষ্যে কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন উৎসাহিত করতে সব ধরনের যৌক্তিক সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটি। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নীতি সহায়তা বজায় রাখা হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার মধ্যমেয়াদে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য এর পাশাপাশি রাজস্ব নীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হবে বলে প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আমাদের গৃহীত এসব নীতি-কৌশলের ফলে আশা করছি, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
বর্তমান সরকার সব সময় দারিদ্র মানুষের দিকে দৃষ্টি রেখে বাজেট প্রণয়ন করেছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে ১০ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হবে।
নতুন অর্থবছরে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্যনিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে এ খাতে প্রায় ৭ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে, যার পরিমাণ ২ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। কৃষি উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত রয়েছে এবং তা অদূর ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। সারে ভর্তুকি প্রদানের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যান্ত্রিকীকরণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের আয়কর অব্যাহতির সুবিধা পুরোপুরি প্রত্যাহার করেনি সরকার। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত দিয়ে বলা হয়েছে যে শর্ত পালন করলে বেশির ভাগ ব্যবসাতেই আগামী তিন বছরের জন্য কর অবকাশের সুবিধা পাওয়া যাবে। একটি উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০১১ সাল থেকে কর অব্যাহতির সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে পরে সরকার এ সুবিধার মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ায়। এ সুবিধা আগামী বছরও থাকছে।
সকল বাজেটের মতো এবারের বাজেটেরও চ্যালেঞ্জ হবে অর্থ জোগাড় করা। এটি চিরন্তন চ্যালেঞ্জ, নতুন কিছু না। এটি মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে বাস্তবায়ন করা হলো বড় চ্যালেঞ্জ। টাকা জোগাড় করা তুলনামূলক সহজ। আসল হলো নিজেরা কাজ করে সময়মতো বাস্তবায়ন করা, ভালো মানের কাজ করা। এই জায়াগাটিতে আমাদের ভালো সুনাম নেই। এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতির গতি বাড়ানো হবে আগামী বাজেটের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এডিপির আকার প্রকৃত অর্থে বাড়েনি। টাকার পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকার মূল্যমান আগের জায়গায় নেই মূল্যস্ফীতির কারণে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে এডিপির আকার তেমন বাড়েনি। কাজের মান উন্নত ও মিত্যব্যায়িতার নীতি অনুসরণ করতে হবে। অপচয় ও জৌলুস পরিহার করতে হবে। অহেতুক ব্যয়, অপচয় বন্ধ করতে হবে। আমি মনে করি এটাই হবে বাজেটের মূলমন্ত্র।
এম এ মান্নান, এমপি: সংসদ সদস্য ও সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী
মন্তব্য করুন