বিএনপি তার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একদফা দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা- গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার ও সুষম অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির এই পদযাত্রা। মানুষের এসব অধিকার বাংলাদেশ থেকে আজ উধাও হয়ে গেছে। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের জন্য, আমার ভোট আমি দেওয়ার জন্য বিএনপি বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা একটি অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার।
ব্যাংকিং সেক্টর থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব সেক্টরে অবাধে লুণ্ঠন চলছে। মাফিয়ারা বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এজন্যই বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। যারা ব্যাংক থেকে চার লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠন করেছে, যারা দেশ থেকে চৌদ্দ লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে, এদের ব্যাপারে সরকার কোনো বিধি ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হলে, বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ফিরে আসলে এই লুটেরাদের বিচার হবে। দ্রব্যমূল্যসহ সবকিছু একটা নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে ফিরে আসবে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির সুষম বণ্টন প্রতিষ্ঠিত হবে।
আজ সারা বাংলাদেশের অর্থনীতি মাত্র পাচ শতাংশ মানুষের হাতে বন্দি হয়ে গেছে। এদের বিরুদ্ধেই ১৯৭০ সালে পাকিস্তান আমলে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। সেই সময় ২২টি পরিবারের হাতে দেশের বেশিরভাগ সম্পদ মুঠিবদ্ধ ছিল। তেমনি এখনো কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠন করেছে অনেক পরিবার। সরকার সংসদে দাঁড়িয়ে তাদের দায় মুক্তি দিয়েছে।
এসব কিছুর বিরুদ্ধে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিটি দেশের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাসহ দেশের ভেতর বাংলাদেশের জনগণের অধিকার রক্ষার আন্দোলনই হলো বিএনপির এই পদযাত্রা।
হরতাল, অবরোধ ও ধর্মঘটবিহীন শান্তিপূর্ণ আমাদের এই আন্দোলন। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা দোষে দশ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার মুক্তি, আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা- এসব কিছুই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আমাদের এই আন্দোলনে। বাংলাদেশের প্রায় ৩৯টি রাজনৈতিক দল সবাই আমাদের এই যুগপৎ আন্দোলনে শামিল হয়েছে। সবার একটাই দাবি, তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
২০১৪ সালে বিনা ভোটে ১৫৪ জন সংসদে গিয়ে যে সরকার গঠন করেছিল সেটি ছিল অবৈধ। ২০১৮ সালের ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখে প্রশাসনের মাধ্যমে কারচুপি করে নিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে তারা। বিশ্বের সব দেশ বলেছে, বাংলাদেশে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার নেই বরং একটি অবৈধ সরকার বসে আছে। এ কারণেই শুধু আমরাই নয় বরং জাতিসংঘসহ সমগ্র বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো চাইছে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এই সরকারের অধীনে কখনোই একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় সেটা এই সরকার বারেবারে প্রমাণ করেছে। সেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যই আমাদের এই আন্দোলন।
বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে, গত ১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনে মাত্র ৫-৬ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। এবং সেখানে হিরো আলমের মতো একজন ব্যক্তিকেও গুন্ডারা হামলা করে আহত করেছে। সব কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। তার ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়নি। একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দিয়েছে। এই নমুনাগুলোই আমাদের দেখায়- এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কেমন হতে পারে। আমরা ২০১৮ সালেও এই সরকারকে বিশ্বাস করে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। আমার নির্বাচনী এলাকায় আমার সামনে প্রকাশ্যে আমার নেতাকর্মীদের গুলি করা হয়েছে। আমরা সেদিন ভোটকেন্দ্রে যেতে পারিনি।
গতকালকের আমাদের পদযাত্রায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে মিরপুরের বাংলা কলেজের ছাত্রলীগের গুন্ডারা কীভাবে লাঠিসোটা রামদা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। লক্ষ্মীপুরে আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় গুলি চালিয়ে একজনকে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছে কয়েকশ মানুষ। কিশোরগঞ্জ, পিরোজপুর, বগুড়া, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলায় আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় হামলা চালানো হয়েছে।
মানুষ দেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কিছু ছেলে শামীম ওসমানকে অবৈধ সরকারের প্রতিনিধি বলায় বাংলাদেশে তার পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
সরকার এই দেশটিকে যেভাবে মাফিয়া রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছে তার থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে বিএনপি'র একদফা একদাবি- এই সরকারকে পদত্যাগ করে একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এ দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটিই বিএনপির পদযাত্রার মূল দাবি।
বরকতউল্লাহ বুলু: ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, বিএনপি
মন্তব্য করুন