নির্বাচন কেন্দ্রগুলোয় যথেষ্ট নিরাপত্তা ছিল। শান্ত ছিল—অতি শান্ত (প্রথম বেলায়)। শুধু ছিল না ভোটার। অনেক মানুষ ভেতরে ও বাইরে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে। অনেকের বুকে কার্ড ঝুলছে—প্রার্থীর ক্যাডার ও সাপোর্টার; জিজ্ঞাসা করতেই তারা জানাল। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশে কেন্দ্রের ভেতর এবং বাইরে এত মানুষের জমায়েত মঞ্জুর করে না (code of conduct)। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে বহিরাগত ছিল ভোটারের চেয়ে অনেক বেশি।
সময় ১১টা ৪৫—তিতুমীর কলেজ। বড় রকমের ভিড় গেটের কাছে বহিরাগতদের। ২০-২৫ জন ভোটার দেখা গেছে। একই চিত্র বনানী মডেল হাইস্কুলে। অনেক লোকের সমাগম। গুটিকয়েক ভোটার।
আমার দৃষ্টিতে বড়জোর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচন কমিশনও এখন বলছে ১২ শতাংশ ভোট পড়েছে। শুধু মানারাতে দেখা গেছে (১১টার দিকে) বহিরাগত কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। এমনকি প্রেসকেও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। এটা ছিল অস্বাভাবিক।
একটি দলের ক্যাডার ও একটি দলের এজেন্টের (অন্য এজেন্ট পাইনি, আর বাকিদের যাচাই করা যায়নি, কারণ তাদের পরনে কোনো ব্যাজ ছিল না) উপস্থিতিতে একটি অস্বচ্ছ নির্বাচন হলো। সব সময়ের মতো বুথে জিজ্ঞাসা করেছি কটা ভোট পড়ল? এবার কেউই জবাব দিতে আগ্রহী হলো না। ভোটারের অনুপস্থিতি শুধু ভোটের অনীহা নয়, অনাস্থাও বটে। প্রতিটা স্টেশনে ক্যাডারদের সমাবেশ দেখা গেছে।
বিষয়টি নিঃসন্দেহে অন্যদের জন্য ভীতিকর হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের এটি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এই নির্বাচন মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। ১০০ জনের মধ্যে ৮৮ জনই এই নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এটি সহিংসতামুক্ত নির্বাচন ছিল না। বিকেল ৩.৩৪-এর দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমের (হিরো) ওপর কিছু ছেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে পিটিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। ঘটনার ৫ মিনিট পর আমি সেখানে পৌঁছাই। কেউ এগিয়ে এলো না। এত পুলিশ কেউ এটাকে রুখল না। কোথায় পুলিশ, কোথায় নির্বাচন কমিশন, কোথায় কোড অব কন্ডাক্ট, কোথায় আমাদের সভ্যতা? আর কোন পথে চলেছে আমাদের গণতন্ত্র আর রাজনীতি। এর বিরুদ্ধে বিজয়ী প্রার্থীর হুঙ্কার তোলা উচিত ছিল। সেই ঔদার্য দেখতে পেলাম না। আমরা প্রমাণ করে দিলাম কতখানি নিকৃষ্ট ও অসভ্য হতে পারি। এর বিচার হওয়া প্রয়োজন।
মনে পড়ে সেই biblical কাহিনি। ছোট বেলায় পড়েছিলাম David and Goliath। ছোট্ট দাউদ কীভাবে একটি ৯ ফুট দানবকে পরাজিত করেছিল পেশিশক্তি দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়ে। ভবিষ্যতে যে এমন একটি সাধারণ ঘরের ছেলে এসে সাহস ও বুদ্ধি দিয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে পরাভূত করবে না, তা কে বলতে পারে। ১২ শতাংশ ভোটারের এ উপনির্বাচনে এই জিত বিজয়ীর গলায় বিষাদের মালাই হয়ে থাকবে।
শারমিন মুরশিদ : নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
মন্তব্য করুন