ইতোপূর্বে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত যে কোনো নির্বাচনের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা কম ঘটছে- যা একটি ইতিবাচক দিক। তবে নব্বই পরবর্তী অন্যান্য সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম এবং পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি কম। তরুণ ভোটাররা কেন ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেনি সেটা খুঁজে দেখা প্রয়োজন।
নির্বাচনে ভোটরদের উপস্থিতি কম হওয়ার পেছনে একাধিক ফ্যাক্টর কাজ করেছে। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরোধী দলের ব্যাপক প্রচারণা, নির্বাচনে সহিংসতা বা গুপ্ত হামলা হতে পারে-এমন সম্ভাবনা ভোটারদের মনোজগতে প্রভাব বিস্তার করে থাকতে পারে। এই নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল অংশগ্রহণ করলে নির্বাচনের পরিবেশ অন্য রকম হতে পারেতা।
বিএনপি দাবি করে তাদের প্রচার-প্রচারণা এবং ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটারগণ ভোট দিতে যায়নি। আমি তাঁদের এই বক্তব্যের সাথে ভিন্ন মত পোষণ করি। আমি মনে করি, বিগত বছরগলোতে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের ভুল কর্মসূচী, মিথ্যা আশ্বাস এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক দলগুলোর নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তরুণরা রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছে। এর দায়ভার সকল রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের। নাগরিকদের মধ্যে রাজনীতি সর্ম্পকে ইতিবাচক মনোভাব তৈরী করতে না পারলে আগামীতে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনম ঘটার সম্ভাবনা কম।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, নতুন সরকার গঠিত হবে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে- এমনটি বলা যাবে না। সামনের দিনগুলোতে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিদেশী সংস্থা বা অন্য কোনো দেশের সরকার কী করবে কী বলবে তার চেয়েএই দেশের মানুষের প্রত্যাশাকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে সেগুলো সফলভাবে মোকাবেলা করার জন্য রাজনৈতিক সমঝোতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
আমরা জানি নির্বাচন সরকার বদল করার একটি প্রক্রিয়া। জনগণ ভোট দিয়ে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করে। নির্বাচন যদি সুষ্ঠূ না হয় তবে সরকার গঠনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনা এবং সরকারের সাথে জনগণের দূরত্ব তৈরী কর। সুশাসনের জন্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আগামীতে তরুণদেরকে রাজনীতিমূখী করতে হবে। আর তা না হলে নুতন নেতৃত্ব তৈরী হবে না, দেশে নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশনকে আইনে যে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে তাদেরকে সেটা সাহসের সাথে প্রয়োগ করতে এগিয়ে আসতে হবে।
নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি নাগরিকদের আস্থাহীনতা দূর করতে হবে। নাগরিকরা যদি ক্রমাগত নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে সেটা দেশের জন্য ইতিবাচক নয়। পৃথিবীর কিছু দেশ রয়েছে যেখানে নির্বাচনে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
ড. কে. এম. মহিউদ্দিন : প্রফেসর, সরকার রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন