ড. হারুন-অর-রশিদ 
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ

বিরূপ পরিস্থিতিতে ভালো নির্বাচন

অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ। ছবি : সৌজন্য
অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ। ছবি : সৌজন্য

দুপুর পর্যন্ত নির্বাচন ভালোভাবেই এগিয়ে চলছে। দুই একটি জায়গায় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে এ রকম একটি প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে এত বড় একটি নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। শুধু ঢাকার চিত্র দিয়ে সারা দেশের নির্বাচনের পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। সারা দেশে মানুষ যেভাবে সারিবদ্ধভাবে ভোট দিচ্ছেন তাতে আমার ধারণা, ৩৫-৪০ শতাংশ ভোট পড়বে। যদি ৩৫-৪০ শতাংশ ভোটও পড়ে তাহলে সেটাকে অন এভারেজ একটি ভালো নির্বাচন বলা যায়। তবে কত শতাংশ ভোট দিল না দিল এর ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনের মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। বিরূপ পরিস্থিতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। ১৯৭০ সালে নির্বাচনেও ভোট পড়েছে ৫০ শতাংশ, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সুতরাং বাংলাদেশের বিগত দিনের ভোটের ইতিহাস এমনটাই বলে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, এবারের নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে একটি প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোট বর্জন করেছে এবং নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য চেষ্টা করছে। তবে বিএনপির ভোট বর্জন সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ভোট প্রক্রিয়া চলমান। আমি কয়েকটা ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেছি, সেখানে মানুষ সারিবদ্ধভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোট প্রদান করছেন।

সারা দেশে যেখানে ৪২ হাজার ভোট কেন্দ্র রয়েছে সেখানে কোথাও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটতেই পারে। কোথাও সমস্যা হলে সেখানে ভোট গ্রহণ স্থগিত হবে। নির্বাচনের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে, ভোট কিনতে টাকা দেওয়ার সময়েও গ্রেপ্তার হয়েছে কয়েকজন। বিগত দিনের আমাদের ভোটের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এখন পর্যন্ত ভোট গ্রহণ ভালোভাবেই হচ্ছে।

নির্বাচন কতটুকু প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে সেটা বোঝা যাবে ফল ঘোষণার পর। এতদিন আমরা যে ধরনের নির্বাচনী প্রচার এবং কার্যক্রম দেখেছি তাতে মনে হয়েছে নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে। সারা দেশে সরকারি দলের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে না আসলে প্রতিযোগিতার মাত্রা কিছুটা কমে যাবে এটা স্বাভাবিক। তারপরও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন।

একটা নির্বাচনকে বিশ্লেষণ করতে হয় বাস্তব পরিস্থিতির ক্যানভাসে। কি সেই বাস্তব পরিস্থিতি? একটা বড় দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি এবং তারা নির্বাচন প্রতিহত করার পাঁয়তারা করছে। নির্বাচনের দিন তারা হরতাল ডেকেছে। তাদের হরতাল ডাকার মানে হচ্ছে ভোটাররা যাতে নির্বাচন কেন্দ্রে না আসতে পারে। সুতরাং এই ধরনের একটি পরিস্থিতির মধ্যেই নির্বাচনটি সংগঠিত হচ্ছে সেটা আমাদের মনে রাখা দরকার। বিএনপির অবস্থান এমন ছিল যে- সরকার যেন নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করতে না পারে। ফলে একটি চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং জনগণ তাদের ভোট দিচ্ছেন। আমরাও ভোট দিয়ে এসেছি। সব মিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখতে হবে।

নেতিবাচক পথ পরিহার করে যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এমন সকল রাজনৈতিক দলের উচিত নির্বাচন এলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। তাদের উচিত জনগণের কাছে যাওয়া এবং জনগণের মধ্যে শক্তির ভিত্তি গড়ে তোলা। মনে রাখতে হবে জনগণই সকল শক্তির উৎস। বাইরের কোনো রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হওয়া এবং তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা গণতান্ত্রিক কোনো রাস্তা নয়।

দিনশেষে জনগণের কাছেই ফিরে যেতে হবে। কেউ আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারে কিন্তু নির্বাচনকেও আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবে দেখতে হবে। সবাই মিলে যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চাওয়া হয় তাহলে তো গণতন্ত্র ধ্বংস হবেই। তারা ভোটের দিন হরতাল ডেকেছে কারণ তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায়। তারা তাদের দাবি এবং বক্তব্যে আন্দোলন করেছে কিন্তু তাদের সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ তাদের পক্ষে থাকলে তাদের আন্দোলন সফল হতো। সুতরাং জনগণ তাদের সঙ্গে ছিল না।

রাজনীতি এক দিনের কোনো ব্যাপার নয়। বিএনপির উচিত ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকে তাদের কর্মকাণ্ডকে পরিচালনা করা। কিন্তু সেটা না করে তারা নেতিবাচক পন্থায় হেঁটেছে। তারা মানুষকে নির্বাচন কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু মানুষ নির্বাচন কেন্দ্রে যাবে এজন্য তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছে হরতাল দিয়ে। তারা মানুষকে ভোট দিতে না দেওয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগ করতে চেয়েছে। শক্তি প্রয়োগ কি কখনো গণতন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, আমরা সব সময় মুখে গণতন্ত্র চর্চা করি কিন্তু কার্যত আমরা শক্তি নির্ভরশীল। এটা যতদিন চলতে থাকবে, যতদিন আমরা গণতন্ত্রকে একটি জীবনবোধ এবং মূল্যবোধ হিসেবে গণনা করতে না পারব ততদিন এই সংকট চলতে থাকবে। মানুষ মারা যাক কিন্তু তাদের ক্ষমতা চাই এটাই হলো তাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি।

যারা সরকারের পতন চায়, যারা নির্বাচন কমিশনের পতন চায়, যারা ক্ষমতা ছাড়া আর কোনো কিছু ভাবতে পারে না তাদের কাছে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অনেক উৎকণ্ঠা ও আপত্তি রয়েছে। তারা বিদেশি স্যাংশনসহ আরও অনেক বাধার কথা প্রচার করছে। নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা বলব। ২০১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের জানা আছে। সেই সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেছে। এবারও নির্বাচনের পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। নির্বাচনের পর নির্বাচনবিরোধীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করবে কিন্তু এগুলো কোনো কাজে আসবে না।

যে দল সরকার গঠন করবে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো তাদের সঙ্গেই সম্পর্ক তৈরি করবে। তবে বিএনপি'র নির্বাচন বর্জন এবং অসহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই পরস্পর সাংঘর্ষিক রূপ হয়তো অনেকদিন ধরে চলতে থাকবে।

অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইয়াং অ্যাক্টিভিস্ট সামিট ২০২৪ লরিয়েট সম্মাননা পেলেন বাংলাদেশি তরুণ

ছায়ানটের লোকসংগীত আসরে দেশসেরা ৫ গীতিকবির গান

চাঁদাবাজদের ধরে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পুলিশে দিন : হাসনাত আবদুল্লাহ

বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী : রিজভী 

ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বোলিংয়ে টাইগাররা

সর্বস্তরের নারী প্রতিনিধিত্ব রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে না

লালপুরে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ভুয়া মামলা, স্ত্রীসহ ৩ জন পুলিশ হেফাজতে

মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ : ধর্ম উপদেষ্টা

হঠাৎ কেন ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়াল ইরান

১০

দলকে আরও শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন : যুবদল সভাপতি

১১

গ্লোবাল ক্লাইমেট মিডিয়া নেটওয়ার্কের নির্বাহী কমিটি গঠন

১২

মেহেরপুর ইসলামি আন্দোলনের উর্বর ভূমি : গোলাম পরওয়ার

১৩

রেলপথ যেভাবে পাল্টে দিয়েছে সময়ের ধারণা

১৪

‘সেন্টমার্টিনে নিষেধাজ্ঞা পর্যটনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না’

১৫

‘মুডিসের প্রতিবেদনে জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতিফলন নেই’

১৬

সব টেলিভিশনে ‘জুলাই অনির্বাণ’ ভিডিওচিত্র প্রচারের নির্দেশ

১৭

‘বিপ্লব-পরবর্তী দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যের বিকল্প নেই’

১৮

ঐক্যবদ্ধভাবে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে : আহমদ আবদুল

১৯

ম্যানেজার নেবে বিকাশ, থাকছে না বয়সসীমা

২০
X