ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছেন অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। তিনি সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত হয়ে শনিবার (৪ নভেম্বর) দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। নতুন উপাচার্যের কাছে দল-মত নির্বিশেষে সবার প্রত্যাশা আকাশচুম্বী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ একে অন্যের পরিপূরক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সূচনালগ্ন থেকে ঐতিহাসিকভাবে শতবর্ষী এ বিশ্ববিদ্যালয় গর্বিত অংশীদার। বলা হয়, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কোন পথে এগিয়ে যাবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও এর রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর। স্বাভাবিকভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সবিস্তর আলোচনা হয়ে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান যিনি হবেন, তাঁকে অবশ্যই অন্তত ততটুকু প্রজ্ঞাসম্পন্ন হতে হবে যা একইসাথে একজন রাষ্ট্রনায়ক ও একজন শিক্ষাবিদের থাকা আবশ্যক।
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক মাকসুদ কামালের বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলার সম্ভ্রান্ত একটি রাজনৈতিক পরিবারে। তাঁর প্রয়াত সহোদর বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এ কে এম শাহজাহান কামাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পার্লামেন্টের কনিষ্ঠ সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ছিলেন।
অর্থাৎ, ছোটবেলা থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর মানবতাবাদী ও রাজনৈতিক দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আসছেন। তিনি ছাত্রজীবনে সক্রিয় রাজনীতি করেছেন। শিক্ষক নেতা হিসেবে সুদীর্ঘ সময় ধরে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র ৩ বার সাধারণ সম্পাদক ও ৪ বার সভাপতি ও সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন’র ১ বার মহাসচিব ও ৩ বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এ সময় তিনি শিক্ষকদের যুগপৎ অধিকার আদায়ে নজিরবিহীন অবদান রেখে শিক্ষক সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হন। তা ছাড়া তিনি দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ৪ মেয়াদে ডিন ও মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য প্রায় সব দায়িত্বশীল পদে আসীন থেকে যে অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করেছেন তাঁর আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারবেন।
নেতৃত্বের পাশাপাশি গবেষণাতেও তিনি সমানভাবে অবদান রেখে চলেছেন। নেদারল্যান্ডসের University of Twentte থেকে দ্বিতীয় এমএসসি ডিগ্রি ও জাপানের Tokyo Institute of Technology থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া তাঁর ৫০টিরও বেশি প্রবন্ধ মানসম্মত দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং দুই শতাধিক কনফারেন্সে তিনি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। এ ছাড়াও, অনেক স্বনামধন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানে তিনি যৌথ গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন। ড. মাকসুদ কামাল তাঁর বাবা-মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘ফরিদ-মাছুমা জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। আবার দুর্যোগকালীন সময়ে অসহায় মানুষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে তিনি এগিয়ে আসেন এমন খবরও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়। ফলে তাঁর মধ্যে উপযুক্ত সব গুণের যথাযথ সমন্বয় লক্ষণীয়। তিনি একইসাথে একজন সুদক্ষ প্রশাসক ও বিশ্বমানের একাডেমিশিয়ান।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল মানুষ হিসেবে একজন জনহিতৈষী-মানবিক মানুষ, শিক্ষক হিসেবে একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক ও বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ, নেতা হিসেবে একজন প্রজ্ঞাবান ও ক্যারিশম্যাটিক নেতা- এটি সর্বজনবিদীত । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃঢ় বিশ্বাস, অধ্যাপক মাকসুদ কামাল তাঁর দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অদূরেই বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাতি হয়ে উঠবে বাস্তবসম্মত। দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় তিনি টাইমস হাইয়ার এডুকেশনের র্যাংকিংয়ের পূর্বশর্তগুলো উল্লেখ করে মানসম্মত গবেষণার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
এ ছাড়াও শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করে, তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আবাসন সংকটের সন্তোষজনক সমাধানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ ফিরে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খাবারের মানবৃদ্ধি ও মেডিকেল সেন্টারের যথোপযুক্ত সংস্কার ও চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত হবে। বিশ্বমানের টিচিং লোড ক্যালকুলেশন অনুসরণ করে শিক্ষার্থীর অনুপাতে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি নতুন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ক্লাসরুম সংকট নিরসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দৃষ্টান্তমূলক সদর্থক পরিবর্তন আনয়ন করে এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আশীর্বাদকে ব্যবহার করে ‘স্মার্ট ক্যাম্পাস’ গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দীর্ঘদিনের যে আক্ষেপ সেটাও এবার ঘুচবে বলে সবার বিশ্বাস। আমরা জানি, হাজারো সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমূল-পরিবর্তন আসতে কিছুটা সময় প্রয়োজন হবে। তবে সেদিন হয়তো আর বেশিদূর নয় যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য হয়ে উঠবে।
এসব প্রত্যাশা কেবল শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাই নয়, তাঁদের প্রবল বিশ্বাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বিশ্বাস করে তিনিই পারেন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে। বাংলাদেশের সব সচেতন নাগরিক প্রত্যাশা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ একসময় ‘আলোকিত বাংলাদেশ’ হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি পাবে। তাঁর প্রদর্শিত পথ ধরে একসময় বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রকৃত শিক্ষার আলো পৌঁছে যাবে৷ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্প বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পথপ্রদর্শক হবে। এরই প্রেক্ষিতে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে অধ্যাপক মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কল্পিত ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
মন্তব্য করুন