আধুনিক ক্রিকেট মানেই চার-ছক্কার। আধুনিক ক্রিকেটে ব্যাটারদের মারা এক একটি চার ছয় যেমনিভাবে গ্যালারীতে থাকা দর্শকদেরকে আনন্দ দেয় ঠিক তেমনিভাবে নিজ দলের রানের চাকাও সচল রাখে। রানের এই চাকা পুরো ম্যাচ জুড়েই সচল রাখতে ক্রিকেটে এক ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যাতে করে ব্যাটাররা তাদের ব্যাটিং ইনিংস শেষে দলীয় সংগ্রহে বেশি বেশি রান জমা করতে পারে এবং খেলা দেখতে আসা দর্শকদের জন্য ম্যাচটা উপভোগ্য করে দিতে পারে। কারণ লো স্কোরিং ম্যাচ সবসময় দর্শকের উপভোগের কারণ হতে পারে না বরং সব শ্রেণীর দর্শক লো স্কোরিং ম্যাচ দেখতে খুব একটা পছন্দও করেন না।
আর আজকের এই লেখাতে আমরা ক্রিকেটের সেই পদ্ধতি সম্পর্কেই জানতে যাচ্ছি - যাকে ক্রিকেটের ভাষায় “পাওয়ারপ্লে” বলা হয়ে থাকে। মূলত পাওয়ারপ্লে দ্বারা সীমিত ওভার ক্রিকেটে মাঠে ফিল্ডার স্থাপনের ওপর আরোপিত সীমাবদ্ধতার নিয়মাবলিকে নির্দেশ করা হয়। ক্রিকেটে পাওয়ারপ্লে এর ইতিহাস অনেক আগের। ১৯৭০ এর দশক জুড়েই ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতার বিবর্তন ঘটেছে, বিশেষ করে বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে। ওডিআই ম্যাচে প্রথম তার প্রচলন ঘটে অস্ট্রেলিয়ায়, ১৯৮০ সালে। সবচেয়ে প্রচলিত নিয়মটি ছিল, ইনিংসের প্রথম পনেরো ওভারে ৩০-গজ বৃত্তের বাইরে দুজন ফিল্ডার থাকতে পারবে, অবশিষ্ট ওভারগুলোতে সর্বোচ্চ পাঁচজন ফিল্ডার বৃত্তের বাইরে রাখা যাবে।
কিন্তু ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃক পাওয়ারপ্লে পরিভাষাটির প্রচলন ঘটে, যেখানে ফিল্ডিং এ সীমাবদ্ধতাকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়: ইনিংসের প্রথম দশ ওভার বাধ্যতামূলক পাওয়ারপ্লে এবং পাঁচ-ওভার করে আরও দুটি পাওয়ারপ্লে, যার সময় ফিল্ডিংরত দলের ইচ্ছাধীন ছিল। বাস্তবে যদিও পরের পাওয়ারপ্লে দুটিও ইনিংসের শুরুর দিকেই নিয়ে নেওয়া হত, ফলে ইনিংসের প্রথম বিশ ওভারই পাওয়ারপ্লে'র অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত। এই চর্চা কমানোর উদ্দেশ্যে, ২০০৮ সালে ব্যাটিংরত দলকে একটি পাওয়ারপ্লে'র সময় বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
১ অক্টোবর ২০১১ হতে, ব্যাটিং ও বোলিং পাওয়ারপ্লে'র নিয়মে আইসিসি আরও কিছু পরিবর্তন আনে। নতুন আইনের অধীনে, কোন ৫০-ওভারের ম্যাচে, ১৬তম ওভারের আগে কোন পাওয়ারপ্লে-ই নেওয়া সম্ভব ছিল না, এবং উভয়ই আবার ৪১-তম ওভার শুরুর আগেই সম্পন্ন করার নিয়ম করা হয়েছিল। সুতরাং, ১১ থেকে ১৫ ওভার এবং ৪১তম থেকে ৫০তম ওভারে কোনো পাওয়ারপ্লে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
যদি একটি বা উভয় দলই তাদের পাওয়ারপ্লে'র সময় বেছে না নিত, সেক্ষেত্রে সর্বশেষ সম্ভাব্য সময়ে স্বয়ক্রিয়ভাবেই আম্পায়ার পাওয়ারপ্লে শুরুর সংকেত দিতেন (উদাহরণস্বরূপ, যদি ৫০-ওভার ম্যাচের কোন ইনিংসে একটি ৫-ওভারের পাওয়ারপ্লে না নেওয়া হয়, তাহলে ৩৬তম ওভার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঐ পাওয়ারপ্লে শুরু হয়ে যাবে)। ২৯ অক্টোবর ২০১২ হতে, আইসিসি পাওয়ারপ্লে আইনের উপর্যুপরি সংশোধন করে পাওয়ারপ্লে তিনটি থেকে কমিয়ে দুটি ভাগে নিয়ে আসে। ১৯৯২ হতে ২০১২ পর্যন্ত, পাওয়ারপ্লে-বহির্ভূত ওভারগুলোতে সর্বোচ্চ পাঁচজন ফিল্ডার বৃত্তের বাইরে রাখার বিধান ছিল।
অক্টোবর ২০১২ তে তা কমিয়ে চারজন করা হয়। এছাড়াও, ১৯৯২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত, প্রথম পনেরো ওভারে দুইজন ফিল্ডারকে ক্যাচিং এর অবস্থানে রাখা বাধ্যতামূলক ছিল। জুলাই ২০০৫ থেকে, এই বাধ্যবাধকতা ১৫ ওভার থেকে কমিয়ে প্রথম ১০ ওভার পর্যন্ত বহাল করা হয়েছে। ৫ জুলাই ২০১৫ হতে, আইসিসি নিয়ম পুনরায় সংশোধন করে ইনিংসে তিন পাওয়ারপ্লে প্রথা পুনর্বহাল করে, তখন পূর্বে সূচিত ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে বাতিল হয়ে যায়। প্রথম পাওয়ারপ্লে-তে দুজন ক্যাচিং ফিল্ডার রাখার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করা হয়।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এক দিনের আন্তর্জাতিক খেলায় প্রতিটি দল পঞ্চাশ ওভারের ইনিংস খেলার সুযোগ পায়। আর এই ৫০ ওভার কে ৩টি পাওয়ারপ্লে তে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যার ফলে প্রতি ইনিংসে, প্রথম দশ ওভারে (১-১০) ফিল্ডিং দলের সর্বোচ্চ দুই জন খেলোয়াড় ৩০-গজ বৃত্তের (২৭ মিটার) বাইরে অবস্থান করতে পারবে। একে প্রথম পাওয়ারপ্লে বলা হয়। একাদশ থেকে চল্লিশতম ওভার (১১-৪০) পর্যন্ত, ৩০-গজ বৃত্তের বাইরে সর্বোচ্চ চারজন ফিল্ডার থাকতে পারবে। একে দ্বিতীয় পাওয়ারপ্লে বলা হয়। শেষ ১০ ওভারে (৪১-৫০), ৩০-গজ বৃত্তের বাইরে সর্বোচ্চ পাঁচজন খেলোয়াড় থাকতে পারবে। একে তৃতীয় ও শেষ পাওয়ারপ্লে বলা হয়।
অন্যদিকে টি-২০ খেলায় প্রতিটি দল বিশ ওভারের ইনিংস খেলার সুযোগ পায়।আর এই ২০ ওভার কে ২টি পাওয়ারপ্লে তে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যার ফলে কোন ইনিংসের প্রথম (১-৬) ওভার হচ্ছে বাধ্যতামূলক পাওয়ারপ্লে, এই সময় ৩০-গজ বৃত্তের বাইরের মাত্র দুজন ফিল্ডার রাখা যাবে। একে প্রথম পাওয়ারপ্লে বলে। ৭ ওভার থেকে শুরু করে ২০ ওভার পর্যন্ত, অনধিক পাঁচজন খেলোয়াড় ৩০-গজ বৃত্তের বাইরে অবস্থান করতে পারবে। একে দ্বিতীয় পাওয়ারপ্লে বলে।
ইন্জিনিয়ার মো. সাইফুল ইসলাম শিবলু : ক্রিকেটার, ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড
মন্তব্য করুন