দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত ঋতু। শিশুদের বসন্তের অসুস্থতা মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে। বেশিরভাগ সময়, ঠান্ডা আবহাওয়াকে শিশুদের অসুস্থতার জন্য দায়ী করা হয় কিন্তু বসন্তেও শিশুরা অসুস্থ হতে পারে। সাধারণত বসন্তে শিশুরা যেসব স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়।
১. সিজনাল অ্যালার্জি
আপনি কি জানেন, শিশুরা সিজনাল অ্যালার্জিতে ভুগতে পারে? সিজনাল অ্যালার্জির সবচেয়ে বড় কারণ হলো গাছ, ঘাস এবং ফুলের রেণু। শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, পোস্ট নেজাল ড্রিপ, (নাকের মিউকোসা দ্বারা অত্যধিক শ্লেষ্মা উৎপন্ন হওয়া) নাক বন্ধ হওয়া এবং চোখ চুলকানো। কিছু সাধারণ অ্যালার্জি চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিহিস্টামাইন এবং ডিকনজেস্ট্যান্ট।তবে প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনো ওষুধ দেওয়ার আগে সর্বদা আপনার সন্তানের শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
২. শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস
রেসপিরেটরি ভাইরাস, বা RSV, একটি খুব সংক্রামক ভাইরাস যা বসন্তের শুরুর দিকে শরতের শেষ থেকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আরএসভি দ্বারা আক্রান্ত বাচ্চাদের শ্বাসকষ্টের হতে পারে। সাধারণত, আরএসভি এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে চলে যায়। আপনার সন্তানের যদি খুব বেশি জ্বর, শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নেবার সময় বুকে গড়গড় শব্দ হয়, অবিলম্বে তাদের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন।
৩. সাইনাস সংক্রমণ
একইভাবে অ্যালার্জির মতো, বসন্তেও বাচ্চাদের সাইনাস সমস্যা হতে পারে। সিডিসি-এর মতে, সাইনাসে (মাথার হাড়ে থাকা বায়ুথলি) তরল জমা হলে একটি সাইনাস সংক্রমণ ঘটায়, যাকে সাইনুসাইটিস বলে। যা জীবাণুগুলিকে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস উভয়েই সাইনুসাইটিস এর জন্য দায়ী। ছোট বাচ্চাদের মধ্যে, সাইনুসাইটিস সর্দির মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। বয়স্ক বাচ্চাদের মধ্যে, উপসর্গগুলির মধ্যে দাঁত বা কানের ব্যথা, নাকের দুপাশে অথবা কপালে ব্যথা। সাইনুসাইটিস থেকে ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া বা কানের ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই শ্রেয়।
৪. পোকামাকড় অ্যালার্জি :
যেহেতু শীতের তুলনায় বসন্তে তাপমাত্রা ও দিনের পরিধি বারে তাই অনেক সময় পোকামাকড়ের বিস্তার বাড়তে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পোকা কামড়ালে বা হুল ফোটালে ব্যথা, লালভাব, চুলকানি এবং আক্রান্ত স্থান ফুলে যেতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ কয়েক ঘণ্টা বা দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যান। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে মারাত্মক অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফিল্যাক্সিস) দেখা দিতে পারে ফলে অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। জরুরি চিকিৎসা ছাড়া, অ্যানাফিল্যাক্সিস থেকে মৃত্যুও হতে পারে।
৫. কনজেক্টিভাইটিস
কনজেক্টিভাইটিসকে আমরা সাধারণত চোখ ওঠা নামে চিনি। ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা কনজেক্টিভাইটিস হয় যা মারাত্মক ছোঁয়াচে। তবে অ্যালার্জিক কনজেক্টিভাইটিস ছোঁয়াচে না। কনজেক্টিভাইটিসের লক্ষণগুলির মধ্যে সাধারণত চোখে কাঁটা কাঁটা অনুভূতি, লাল চোখ, চোখ জ্বলা, চুলকানি, চোখের কোনায় কেতর আসা, চোখের পাতা ফোলা এ সব উপসর্গ থাকতে পারে।
বসন্তে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানোর উপায় :
• বাচ্চাকে প্রচুর পানি পান করান ও হাইড্রেটেড রাখুন, বিশেষ করে বাইরে খেলাধুলার সময়। • বাচ্চাকে প্রচুর স্বাস্থ্যকর খাবার, মৌসুমি ফল খাওয়াতে হবে। • রোদে যাওয়ার সময় সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। • যে সকল খাবারে অথবা বস্তুতে অ্যালার্জি আছে এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
• ধুলোময় স্থানে গেলে ফেস মাস্ক পরিধান করতে হবে। • মাঠে খেলার সময় ভাল মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন। • ফ্রিজের পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। • চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। • তোয়ালে এবং বিছানা নিয়মিত ধুতে দিতে হবে।
• রুমে পর্যাপ্ত রোদ ধুঁকতে দিতে হবে। • এয়ারকন্ডিশনার ফিল্টার নিয়মিত পরিবর্তন করুন। • উপসর্গ শুরু হওয়ার আগে অ্যালার্জির ওষুধ খাওয়ান যাতে উপসর্গ না বারে। • লক্ষণ ব্রিদ্ধি পেলে সর্বদা একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।
লেখক : ডা. আকলিমা আক্তার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
মন্তব্য করুন