বর্তমানে বাংলাদেশ সস্তা শ্রমের মাধ্যমে রেমিট্যান্সে সফল হলেও, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও বড় সুযোগ অপেক্ষা করছে। সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়ে এই খাতকে কাজে লাগালে বাংলাদেশের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন আইসিটি শ্রমবাজার তৈরি করা সম্ভব।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) জানাচ্ছে, প্রতি বছর ২০ লক্ষের বেশি শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছেন। এদের বেশিরভাগই শারীরিক শ্রমে নিয়োজিত। অথচ, বিশ্বের উন্নত দেশে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ শ্রমের প্রচুর চাহিদা আছে। যদি এ দক্ষতায় প্রশিক্ষিত ২০ লক্ষ তরুণকে বিদেশে পাঠানো যায়, তাহলে মাসে তারা গড়ে ৩-৪ লক্ষ টাকা উপার্জন করতে পারবে। এই আয়ের একটি বড় অংশ দেশে পাঠানো হলে প্রতি বছর ৬৫ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত রেমিট্যান্স আনা সম্ভব।
বাংলাদেশে ১৫-২৪ বছর বয়সী ৪ কোটি তরুণ রয়েছে, যার মধ্যে অনেকেই শ্রমবাজারের বাইরে। তাই এখনই তাদের আইসিটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে তারা যদি আধুনিক সাইবার সিকিউরিটি, এআই, ব্লকচেইন, রোবটিক্স, ক্লাউড কম্পিউটিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে পারে, তাহলে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশ একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
প্রাথমিক শিক্ষায় আইসিটি-ভিত্তিক শিক্ষা জরুরি
বাংলাদেশে প্রযুক্তিভিত্তিক মেধা শ্রমবাজার গড়ে তুলতে হলে, শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। প্রথম শ্রেণী থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এটি তখনই সম্ভব, যখন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিবে। উদাহরণস্বরূপ, ‘A’ for ‘Apple’ এর পরিবর্তে ‘A’ for ‘Abacus’ শেখানো যেতে পারে।
আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ : তরুণ প্রজন্মের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ
আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী, ১ হাজরের বেশি আইসিটি শিক্ষক, ৩ হাজারের বেশি আইসিটি অ্যাম্বাসেডর এবং ৬১টির বেশি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি সংযুক্ত আছেন। এই প্লাটফর্মটি ২১টি তথ্যপ্রযুক্তি সেগমেন্ট নিয়ে কাজ করছে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হলো তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে জনপ্রিয় করা। এটি শুধুমাত্র কোন ইভেন্ট বা প্রতিযোগিতা বা কোর্স করানোর জন্য নয় বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং তাদেরকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তোলাই এর প্রধান উদ্দেশ্য।
আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায় থেকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে।
শুধুমাত্র হাইটেক পার্ক, ফ্রিল্যান্সিং বা ডিজিটাল ট্রেনিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না; বরং শিক্ষার্থীদের এআই, ব্লকচেইন, রোবটিকস, ক্লাউড কম্পিউটিং, সাইবার সিকিউরিটি, ওয়েব ৩, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং , মেশিন লার্নিংয়ের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করতে হবে এর সঙ্গে সঙ্গে টেকনোলজিতে ব্যবসা বা টেক অনট্রাপ্রেনিওরশীপ, সোশ্যাল বিজনেস ও এগ্রো বিজনেস এ কিভাবে টেকনোলজির ব্যবহার বাড়ানো যায় আর সাথে কলেজ থেকেই টেক ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হবে আর সেটা শুরু করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই। প্রযুক্তিগুলোর জ্ঞান অর্জন করতে হলে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নতির জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন। সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রসারে একসাথে কাজ করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারে।
পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব বাড়ানো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উপযুক্ত প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত আইসিটি শিক্ষক নিশ্চিত করা দরকার। মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান এবং তার দল এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যাতে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে একটি শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করতে পারে। তাদের দলের বিশ্বাস , আজ শিশুটি আইসিটি সম্পর্কে শুনবে , কাল সে বুজবে এবং পরশু সে আইসিটিতে দক্ষ হবে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার পথে
তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে একটি শক্তিশালী রপ্তানি পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ দরকার। শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই তথ্যপ্রযুক্তিতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। তাহলেই একদিন বাংলাদেশ আইসিটি শ্রমবাজারে বিশ্বে সেরা অবস্থানে পৌঁছাবে।
লেখক : মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান, ফাউন্ডার, আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন