ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫৫ পিএম
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ড. ইউনূসের সম্পূর্ণ ভাষণ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

প্রিয় দেশবাসী, দেশের সব শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, পুরুষ, মহিলা, সবাইকে সালাম জানাচ্ছি। আসসালামু আলাইকুম।

আপনাদের সবাইকে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে সিক্ত নতুন বাংলাদেশে স্বাগত জানাচ্ছি।

গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সবার প্রতি। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়ে আমি আপনাদের কাছে কিছু কথা বলতে চাই।

স্মরণাতীত কালের ভয়াবহ বন্যায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বা যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন, যারা দুঃসহ জীবনযাপন করছেন তাদের স্মরণ রেখে আজকের কথাগুলো বলছি। বন্যাদুর্গতদের জীবন দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেয়ার আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতে সব ধরনের বন্যা প্রতিরোধে আমাদের অভ্যন্তরীণ ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে যাতে যৌথভাবে নেয়া যায়, সে আলোচনা শুরু করেছি।

প্রিয় দেশবাসী, আপনারা জানেন বিপ্লবী ছাত্র-জনতা জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে আমাকে এক গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছে। তারা নতুন এক বাংলাদেশ গড়তে চায়। নতুন প্রজন্মের এ গভীর আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার সংগ্রামে আমি একজন সহযোদ্ধা হিসেবে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। দেশের সকল বয়সের, সকল পেশার, সকল মতের, সকল ধর্মের সবাইকে বিনা দ্বিধায় এ সংগ্রামে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রিয় দেশবাসী, লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এবং লক্ষ লক্ষ মা বোনের আত্মদানের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছিলাম, তা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের হাতে ধ্বংস হয়ে গেছে। আপনারা দেখেছেন আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তারা কীভাবে শেষ করেছে। দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে দুর্নীতি। এমন এক দেশে আমাদের দেশ রূপান্তরিত হয়েছে যেখানে স্বৈরাচারের পিয়নও দুর্নীতির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ করার মতো অকল্পনীয় কাজ করে গেছে নির্বিবাদে। শিক্ষা খাতকে পঙ্গু করে দিয়েছে, ব্যাংকিং ও শেয়ারবাজার খাতে লুটপাট, প্রকল্প ব্যয়ে বিশ্ব রেকর্ড, অবাধ সম্পদ পাচার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে নিজ দলের পুতুলে রূপান্তর, বাকস্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার হরণ এসবই হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ফ্যাসিবাদী সরকার খর্ব করেছে জনগণের সাংবিধানিক ক্ষমতা ও অধিকার। দুঃশাসন, দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার-নিপীড়ন, বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যম জনসুরক্ষা বিপন্ন করেছে। জনগণকে নির্যাতন, বঞ্চনা ও বৈষম্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের মানুষসহ কোটি কোটি মানুষের ভোটাধিকারকে বছরের পর বছর হরণ করেছে। মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে স্বৈরাচার তার নিজের, পরিবারের ও দলের কিছু মানুষের হাতে দেশের মালিকানা তুলে নিয়েছে।

প্রিয় দেশবাসী, কিন্তু এ দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েই আমাদের গড়তে হবে স্বপ্নের বাংলাদেশ। বৈষম্যহীন, শোষণহীন, কল্যাণময় এবং মুক্ত বাতাসের রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আমি তাদের সেই স্বপ্নপূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। আপনাদের সবাইকে এ শুভলগ্নে তাদের স্বপ্নপূরণে সমস্ত শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের স্বপ্ন আমাদের স্বপ্ন। জাতীয় জীবনে তরুণরা একটি মহাসুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমরা সবাইকে সুযোগ ব্যবহার করার কাজে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছি।

গণরোষের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারপ্রধান দেশ ত্যাগ করার পর আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে পুরোপুরি সুরক্ষিত। আমাদের লক্ষ্য একটাই—উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমরা এক পরিবার। আমাদের এক লক্ষ্য। কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত করতে না পারে সেজন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার মাত্র দুই সপ্তাহ শেষ হলো। কর্মযাত্রার প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে আপনাদের কাছ থেকে যে সমর্থন পাচ্ছি সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা অনুধাবন করছি যে আমাদের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা অনেক। এ প্রত্যাশা পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর। যদিও দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রহীনতা, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গিয়েছে। কিন্তু এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করতে আপনাদের সামনে এসেছি। শুধু আমি বলব আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এখনই সব দাবি পূরণ করার জন্য জোর করা, প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যক্তিবিশেষকে হুমকির মধ্যে ফেলা, মামলা গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা, বিচারের জন্য গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে হামলা করে আগেই একধরনের বিচার করে ফেলার যে প্রবণতা তা থেকে বের হতে হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের গৌরব ও সম্ভাবনা এসব কাজে ম্লান হয়ে যাবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টাও এতে ব্যাহত হবে।

রাতারাতি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কঠিন। নড়বড়ে এক কাঠামো, আমি বরং বলব জনস্বার্থের বিপরীতমুখী এক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে। আমরা এখান থেকেই বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেন এ দেশে জনগণই সত্যিকার অর্থে সব ক্ষমতার উৎস হয়। বিশ্বদরবারে একটি মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে সমাদৃত হয়। তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও জনতার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে সফল আমাদের হতেই হবে। এর আর কোনো বিকল্প নেই।

প্রিয় দেশবাসী, আপনারা এরই মধ্যে জেনেছেন জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুথানে বল প্রয়োগ ও হতাহতের যে দুঃসহ ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধানকে বাংলাদেশে এসে তাদের তদন্ত শুরু করতে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তদন্তের এ প্রক্রিয়া এ সপ্তাহেই শুরু হবে। তাদের প্রথম দল এরই মধ্যে এসে গেছে।

আমরা এরই মধ্যে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে যে শত শত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছিল তার অধিকাংশ প্রত্যাহার করেছি এবং আটক ছাত্র-জনতার মুক্তিলাভের ব্যবস্থা করেছি। পর্যায়ক্রমে মিথ্যা ও গায়েবি সব মামলার ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষকে দুঃসহ ভোগান্তি থেকে মুক্ত করা হবে।

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গণ-অভ্যুথানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। সব আহত শিক্ষার্থী ও জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী দুজন উপদেষ্টার সহায়তায় একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এ কার্যক্রমের জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার অতি দ্রুত জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন”নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে এনেছে। আপনাদের সবার এবং বিদেশে অবস্থানরত ভাই-বোনদের অনুদান এ প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ গ্রহণ করেছি।

প্রিয় দেশবাসী, আপনারা লক্ষ্য করেছেন দায়িত্ব গ্রহণ করেই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা অঙ্গনে অস্থির পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থনে দেশপ্রেমিক সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজে যোগ দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকার প্রশাসনে চরম দলীয়করণ করার ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। আমরা এরই মধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছি। তবে প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে এবং একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সময় প্রয়োজন। সেজন্য সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জনগণের আস্থা ফিরে পায় সেটি আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

লুটপাট ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এ খাতে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা স্থাপন, ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং জনগণের জীবনযাপন সহজ করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ আমরা সচল করেছি।

ব্যাংক খাতে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে। আর্থিক খাতে সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংস্কার বিষয়ে একটি রূপকল্প তৈরি করা হবে, যা দ্রুত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। শেয়ারবাজার, পরিবহন খাতসহ যেসব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ ও আয়নাঘরের মতো চরম ঘৃণ্য সব অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সবার বিচার নিশ্চিত করা হবে। তালিকা প্রস্তুত করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের বিচার করা হবে।

আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে জনমুখী ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিতামূলক কাঠামো সৃষ্টির লক্ষ্যে পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে। জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সব সংস্থা ও জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে কমিশনের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। বাংলাদেশকে আর কোনো দিন কেউ যেন কোনো পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত না করতে পারে তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। ফ্যাসিবাদী সরকার গণমাধ্যমের ওপরও দলীয়করণ ও নির্যাতনের বোঝা চাপিয়েছিল। জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তথ্যের প্রবাহে বিদ্যমান আইনি ও অন্যান্য বাধা অপসারণ করা হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করে এমন সব আইনের নিপীড়নমূলক ধারা সংশোধন করা হবে। এরই মধ্যে এ ধরনের আইনগুলো চিহ্নিত করে এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

বিদেশী সংবাদকর্মীদের এ দেশে আসার ওপর যে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল এরই মধ্যে আমরা তা তুলে নিয়েছি। বিদেশী সাংবাদিকদের দ্রুত ভিসা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীরা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চালিয়ে যাবেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠিত করে গেছে বিগত সরকার। আমরা তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের উদ্যোগ নেব। এটা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। আপনারা জানেন দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল, নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার। একই সঙ্গে পাঠ্যক্রমকেও যুগোপযোগী করার কাজও দ্রুত শুরু করা হবে।

গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা হবে এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা হবে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে সফল পরিণতি দিতে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা খাত এবং তথ্য প্রবাহে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হবে। এর লক্ষ্য হবে দুর্নীতি, লুটপাট ও গণহত্যার বিরুদ্ধে একটি জবাবদিহিতামূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা।

বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমাদের সব উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে এটি সব সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক করা হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে প্রতিশ্রুত ন্যায়পাল নিয়োগে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হবে।

এবার কৃষি খাতের কথা একটু বলি। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষকের স্বার্থ যেন সুরক্ষিত থাকে, কৃষক যেন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান তা নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসী শ্রমিকেরা যেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছেন মুক্তিকামী জনগণ তা কৃতজ্ঞচিত্রে স্মরণ করে। তাদের প্রতি সকল পর্যায়ে সম্মানজনক আচরণ নিশ্চিত করা হবে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত খাত। জনগণের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে। এ খাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং সেখানে সরকারি ডাক্তারসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা যাতে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত না থাকে, দেশের সব অঞ্চলের মানুষ সমান স্বাস্থ্যসেবা পায় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।

বর্তমান প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন বিষয়ে তারা ওয়াকিবহালই শুধু নয়, তারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা যে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে তা টেকসই ও পরিবেশবান্ধব। প্রকৃতি ধ্বংসকারী উন্নয়ন নয়। শুধু জিডিপি একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়, বন, মাটি আর বাতাস ধ্বংস আর দূষিত করে যে উন্নয়ন হয় তা দীর্ঘমেয়াদি টেকসই নয়। জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে আমাদের সরকারের অবস্থান সামঞ্জস্যপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ একটি পৃথিবী রেখে যেতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। আমাদের সরকার পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। এ কার্যক্রমে তরুণ সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা হবে।

এরই মধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বর্তমান সরকারের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হবে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা। আমরা মানবাধিকার আইনসহ সব আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের পক্ষ থেকে গুমবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির পক্ষরাষ্ট্র হওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পক্ষভুক্ত এমন সব আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা বাস্তবায়ন করে যাব।

আমাদের সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাবে।

আমরা জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাসী। প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐক্যের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করা হবে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সবাই এ দেশের নাগরিক এবং সমান আইনের সুরক্ষার অধিকারী। তাদের সবার মানবিক অধিকারসহ অন্যান্য সব অধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য আমি উপদেষ্টা পদমর্যাদাসম্পন্ন একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছি, যার দায়িত্ব হবে জাতীয় সংহতি উন্নয়ন।

বন্যাকবলিত এলাকার সব মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সঠিক সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারের যত কার্যক্রম আছে তাদের সচল করেছি। এরই মধ্যে উপদেষ্টারা বিভিন্ন এলাকার দায়িত্ব নিয়ে এলাকায় গেছেন। আমার কার্যালয়ে একটা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। বন্যা-পরবর্তী কার্যক্রম নেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য করণীয় কী স্থির করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাবকে গুম, নির্যাতনের কাজে লাগিয়ে তাদের কলঙ্কিত করা হয়েছে। তারা দেশের গৌরব। তাদেরও কিছু অতি উৎসাহী সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীকে আমরা কলঙ্কিত দেখতে চাই না। আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে চাই এবং তাদের শাস্তি দিতে চাই। যেন ভবিষ্যতে কারো হুকুমে দেশপ্রেমিক কোনো বাহিনীর, পুলিশের, র‍্যাবের কোনো সদস্য হত্যাকাণ্ড, গুম ও অত্যাচারে জড়িত হওয়ার সাহস না করে। তাদের কাছে হুকুম যত বড় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই আসুক না কেন তারা তা উপেক্ষা করবে। ভবিষ্যতে ওপরওয়ালার হুকুমে এমন ঘৃণ্য কাজ করতে বাধ্য হয়েছে এমন ব্যাখ্যা কারো কাছে গৃহীত না হয় তার ব্যবস্থা করা হবে।

আমি দেশরক্ষা বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য সব বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি তারা তাদের মধ্যে যারা হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন বা শারীরিক, মানসিক অত্যাচারে সরাসরি জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে। যারা গুম হয়েছে, হত্যার শিকার হয়েছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে। তাদের পরিবারসমূহকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার নেই। তাদের জীবনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। আমি সব দেশরক্ষা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের ওপর জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনতে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছি। গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর, প্রকল্পের নামে লুটপাট ইত্যাদি তথ্য নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আমি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং করে যাচ্ছি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশ গঠনের জন্য সকল প্রকার আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য তাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। তারা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের কাছে আমাদের প্রস্তাব প্রণয়ন করে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদেরও অনুরোধ জানিয়েছি তারা যেন পরিস্থিতির কারণে অতি দ্রুত অর্থ ছাড় করার ব্যবস্থা নেন। তাদেরও বলেছি, যে অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি তা যেমন একটি দুর্যোগপূর্ণ সময়, তেমনি এটি জাতির জীবনে মস্ত বড় সুযোগ। এ সুযোগকে যেন পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারি সেজন্য তাদের সহযোগিতা চেয়েছি।

এ গণ-অভ্যুত্থানে বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতি তাদের অবদান বিশেষভাবে স্মরণ করবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে আমরা তাদের অংশগ্রহণ চাইব।

আমাদের একটি লক্ষ্য হবে বিদেশগামী ও প্রত্যাবর্তনকারী প্রত্যেক প্রবাসী শ্রমিককে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে দেশে আসা এবং যাওয়া নিশ্চিত করা। সে ব্যাপারে শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিদেশে অবস্থানরত সবার কাছে আমার আবেদন, তারা যেন তাদের উপার্জিত অর্থ অফিশিয়াল চ্যানেলে দেশে পাঠান। দেশের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে এ অর্থ বিশেষভাবে প্রয়োজন। কী কী ব্যবস্থা নিলে তাদের জন্য অফিশিয়াল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হবে সেটা সম্বন্ধে আমরা তাদের পরামর্শ নেব।

সারা দেশ ঘুসের মহাসমুদ্রে নিমজ্জিত। কীভাবে ঘুস থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি তার জন্য আমাদের পরামর্শ দিন। শুধু এ কাজটা নিয়ে অগ্রসর হতে পারলেই আমি মনে করি দেশের জন্য এ সরকার একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছে বলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি কথা দিচ্ছি, এ ব্যাপারে আমি আমার সর্বশক্তি নিয়োজিত করব।

আমাদের দায়িত্ব দেশের সব মানুষকে একটি পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। পরিবারে মতভেদ থাকবে। বাগ্‌বিতণ্ডা হবে। কিন্তু আমরা ভাই-বোন, আমরা বাবা-মা। আমরা কেউ কারো শত্রু না। কাউকে তার মতের জন্য শত্রু মনে করব না। কাউকে ধর্মের কারণে শত্রু মনে করব না। কাউকে লিঙ্গের কারণে শত্রু মনে করব না। আমরা সবাই সমান। কেউ কারো উপরে, কেউ কারো নিচে না। এ ধারণা আমরা জাতীয় জীবনে সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে। গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখ-কষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটা আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন তাহলে এ দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব। কিন্তু আমাদের ঘেরাও করে এ গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না। সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।

একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদের বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই। দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে এ দায়িত্ব পালন করব। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এ লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই মিলে একটা টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব যাতে হঠাৎ করে এ প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চাল যাব। আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।

আমরা বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাব, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এ আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিকনির্দেশনা পেতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে। এ দিকনির্দেশনা না পেলে আমরা দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারছি না।

আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমরা আমাদের পক্ষ থেকে মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো প্রশ্ন তুলব না। আমরা আপনাদের সকলের দোয়া চাই। যে ক’দিন আছি সে সময়টুকু উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রত্যেকে নিজ নিজ সাধ্যমতো দেশের এ সংকটকালে, সংকট উত্তরণে যেন নিজ নিজ মেধা সাধ্যমতো কাজে লাগাতে পারি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করলাম, আমরা আমাদের মতানৈক্যের কারণে সেটা যেন হাতছাড়া না করে ফেলি এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এ সুযোগ এবার হারিয়ে ফেললে আমরা জাতি হিসেবে পরাজিত হয়ে যাব। শহীদ, আহত ও জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই আমরা এ অর্জনকে কিছুতেই হারিয়ে যেতে দেব না। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর একটি শ্রদ্ধেয়, সব দিকে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি। সব শেষে আবারো আমাদের দেশের সব মানুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ সবার কাছে দোয়া চাইছি যেন আমরা আমাদের সকলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সফল হই।

আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমাদের সবার মঙ্গল করুন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (২৫ আগস্ট ২০২৪ জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণ)

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজকের দিনটি কেমন কাটতে পারে? জেনে নিন রাশিফলে

থানচিতে জরায়ু ক্যান্সারের টিকা পাবে ১২৩৫ কিশোরী

কিউবায় তিন দিন পর বিদ্যুৎব্যবস্থা স্বাভাবিক

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আশরাফুল মুনিম

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা

২২ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি 

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

চাঁদপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

অটোমেটেড মেশিনের দিকে ঝুঁকছে পোশাক কারখানার মালিকরা

১০

ব্যারিস্টার সুমন গ্রেপ্তার

১১

মধ্যরাতে ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিও বার্তা

১২

ব্যারিস্টার সুমন কি গ্রেপ্তার হয়েছেন?

১৩

আইটেক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ভারতে গেলেন ১০ কর্মকর্তা

১৪

চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৩

১৫

শুরু হলো আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ৭১ কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্প

১৬

বাবা হত্যার দায়ে ছেলের মৃত্যুদণ্ড

১৭

দৌলতদিয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আটক

১৮

বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেল কিশোরের

১৯

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বেরোবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

২০
X