তিন দশকের সংগীত জীবনে গায়ক ও সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদারের রয়েছে স্রোতাদের কাছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। পুরস্কার হিসেবে স্রোতাদের কাছ থেকে পেয়েছেন ভালোবাসা। তারই প্রতিদান হিসেবে দর্শক হৃদয়ের খোকার মেটাতে দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক জনপ্রিয় গান। যা বর্তমানে অন্যান্য সংগীত শিল্পীদের থেকে আলাদা। যেখানে অনেকে শ্রোতের সাথে গা-ভাসিয়েছেন, যেখানে তিনি তার নিজস্বতা ধরে রেখে সামনে পথ চলছেন। তারই প্রাপ্তি হিসেবে এবারও পেয়েছেন সংগীতে যৌথভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সম্প্রতি কালবেলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে কথা হয় বর্তমান সময়ের সংগীতের নানান বিষয়ে।
এসময় বাপ্পা মজুমদার বলেন, আমি গান ভালোবাসি, গান ভালোবেসে সুর করি। আমার ভেতরে কিছু বোধের জায়গা আছে। অবশ্যই যেহেতেু আমি উচ্চাঙ্গ সংগীতের মধ্যে বড় হয়েছি। আমার গানের মধ্যে সম্ভবত ওয়েস্টার্ন টাচ আছে, আমি প্রচুর বিদেশি গান শুনেছি তারও হয়তো প্রভাব আছে। আমার গানের মধ্যে এই দুইয়ের কম্বিনেশনে হচ্ছে গানের সাউন্ডটা। আমার কোনো একটি পরিচয়কে যদি হাইলাইট করতে বলা হয় সেটা আমার জন্য খুব মুসকিল হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আমি সেই সবগুলো কাজই করি। আমি যখন সুর করি, মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টও করি, আমি নিজে গান করি, আমার কাছে সবগুলো সমান গুরুত্বপূর্ণ। এটার কোনোটাকে যদি ফেলে দেওয়া হয় তাহলে আমার অস্তিত্বও থাকবে না। আমার কাছে মনে হয় আমার সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার ভালোলাগার ও ভালোবাসার।
এত কিছু একসাথে কীভাবে সামাল দেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত আমি গান খুব কম লিখি। গান লিখার জন্য যেই মেধা দরকার আমার মনে হয় সে মেধা নাই বলেও জানান গুণি এই সংগীতশিল্পী। সুতরাং আমি গান লিখি খুব কম। আর যেহেতু নিজের ব্যান্ড আছে, নিজের সোলো ক্যারিয়ার আছে দুটি পাশাপাশি কাজ করছি। তাই আমার কাছে পুরো প্রসেসটা খুবই ভালোলাগে, আমি খুবই ইনজয় করি কাজ করতে।
আমার মনে হয় মূল কাজই হচ্ছে আমি যদি আমার কাজকেই ভালোবাসি এবং সেটা যদি আমি ভালোবেসে করি তাহলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। আমার মনে হয় সেটাই হয়তো সফলতার কারণ।
বিশ্বব্যাপী গানের ক্রাইসিসের কথা উল্লেখ করে গুণী এই সংগীতশিল্পী বলেন, গানের ক্ষেত্রে আগে লেভেল ছিল, আগে মিউজিক কম্পানিগুলো ডিল করত। আর এখন মিউজিক লেভেলগুলো নানাবিধ কারণে হোক, অস্বচ্ছতা কিংবা টেকনিকেল বা যে কোনো কারণে হোক শিল্পদের সাথে তাদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। লেভেল গুলো সেই অর্থে কাজ করছে না, এখন একেক জন আর্টিস্ট নিজেই লেভেল হয়ে গেছে, তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যালেনসহ নানা ডিজিটাল মাধ্যম রয়েছে।
বাপ্পা মজুমদার বলেন, আমরা এখন কাজ করছি ক্লাউডে এতে করে যে বিষয়গুলো দাঁড়িয়েছে আসলে কতজন সত্যিকারে গান শুনছে আমি এটি জানতে পারছি না। যেটা জানাটা খুব জরুরি এবং যে রেভিনিউটা আসছে সেটা খুবই সামান্য। এটা অনেকে খুবই ঢালাওভাবে প্রচার করে। কিন্তু একটা গান থেকে যে রেভিনিউটা আসে এটার এমাউন্টটা এতই নগন্য, ওটাকে ওইভাবে ফিগারে আনা যায় না। সে কারেণ আর্টিস্টরা বা সৃষ্টিশীল কাজের সাথে যারা জড়িত তারা সবাই সাফার করছে। আমার মনে হয় গ্লোবালি এখানে একটা সিস্টেম দরকার আর বাংলাদেশে সেটা খুবই জরুরি। কারণ বাংলাদেশে এখন যেহেতু কোনো মিউজিক কোম্পানি নাই। তার কারণে গানের সাথে সংশ্লিস্ট মানুষগুলো গীতিকবি, সুরকার, মিউজিশিয়ান যারা আছে এরা ভিশন রকম সাফার করছেন। এখন মূল আয়ের জায়গাটি হচ্ছে লাইভ ‘শো’ এখানে একটি বড় পরিবর্তন দরকার। এখন এটা কী হতে পারে বা কী মেকানিজম দরকার যারা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ তারা এটাকে ভালো ধারণা দিতে পারেন বলেও মনে করেন বাপ্প মজুমদার।
মন্তব্য করুন