আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব। চাকরি জীবনে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা।
কালবেলা : ২৮ অক্টোবর ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আওয়ামী লীগও সেদিন সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন আপনি?
আলী ইমাম মজুমদার : নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি দেশে এ ধরনের বড় সভা সমাবেশ হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা যদি ভারতের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, লোকসভা এমনকি বিধানসভার নির্বাচনেও একই দিনে দুই দলের বড় বড় সভা-সমাবেশ হয়। এমনও হয়েছে দুই পার্টি কাছাকাছি জায়গায় সমাবেশ করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা একটি ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
কত তারিখের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে তার একটি সাংবিধানিক সীমারেখা রয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে তপশিল ঘোষণা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচন আয়োজন করতে বাধ্য। সরকার এবং তাদের সমর্থক কিছু দল নির্বাচন করতে চাচ্ছে এবং তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অন্যদিকে মাঠের প্রধান বিরোধীদল এবং তাদের যুগপদের শরিক দলগুলো চাইছে নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তারা বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং সরকার ব্যবস্থার মধ্যে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন চাইছে। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। যে কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
মানুষের মধ্যে বড় রকমের একটি কৌতূহল রয়েছে। তবে এখানে বড় ধরনের শঙ্কার কিছু রয়েছে বলে মনে করি না। এমনিতেই রাজধানী ঢাকা যানজটের শহর। এখানে বড় ধরনের কোনো সমাবেশ বা কিছু হলে তাতে যানজট আরও অনেক বেড়ে যায় এবং মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। মানুষের যাতায়াত সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এ ধরনের কিছু শঙ্কা রয়েছে বটে, তবে তা বড় নয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটা স্বাভাবিক।
কালবেলা : নির্বাচন এলে একটি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও এই সংস্কৃতি থেকে রাজনৈতিক দলগুলো বের হতে পারছে না কেন?
আলী ইমাম মজুমদার : এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা একটি সিস্টেম দাঁড় করাতে পারিনি। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি সিস্টেম দাঁড় করানোর কথা ছিল আমাদের। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে একটি সিস্টেম করা হয়েছিল। সেই সিস্টেম অনুসারে ’৯৬ সালের নির্বাচন হয়, ২০০১ সালের নির্বাচন হয়। কিন্তু ২০০৬ সালের শেষে এসে যখন সরকারের মেয়াদ শেষ হয় তখন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন সেটা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বড় ধরনের একটি বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই বিরোধ অনেকটা প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছিল। আর এর পরিণতিতেই তখন ১/১১-এর মত একটি বিশেষ ব্যবস্থা আসে। ১/১১ এর সরকারের ব্যাপারে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। তবে তারা একটি যুগান্তকারী কাজ করে গেছে সেটি হলো ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন। আমাদের বর্তমান ন্যাশনাল আইডি কার্ড তাদেরই প্রণয়ন করা। ২০০৮ সালের নির্বাচন হয়। এরপর আর আমরা নির্বাচন ব্যবস্থাকে সুস্থ করতে পারিনি। সংবিধানের সেই ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল হয়ে যায়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসেন তারা ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে ধরে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ের মধ্যে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে কিছুটা ছাড় দেওয়া ছিল। কিন্তু সেটা না মেনে তৎকালীন সরকার সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে। পরে তারা তাদের সংশোধিত সেই সংবিধান ব্যবস্থার আলোকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করেন। সেই ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো বর্জন করে। বিএনপির নির্বাচন বর্জন করার পরিণতিতে ১৫৩টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকার সমর্থক প্রার্থীরা জয়লাভ করে। বাকি আসনগুলোতে নির্বাচন হয়, না হওয়ার মতোই। অর্থাৎ সেখানে তেমন ভোটারের অংশগ্রহণ ছিল না।
এরপর আসে ২০১৮ সালের নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি জোট করে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে। সরকার প্রধান নিজেই সেই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। একাধিক দফায় আন্দোলন হয়েছিল। সেখানে বিএনপিসহ বিরোধী জোটকে একটি প্রভাবমুক্ত ভোটের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবে সরকার পক্ষ সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে সরকারের বিপক্ষে যারা অংশগ্রহণ করেছিল তারা দেখতে পায় তাদের প্রতি সুবিচার করা হয়নি। নির্বাচনের আগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা দলগুলোকে জনগণের কাছে তাদের কর্মসূচি নিয়ে যেতে হয়। মিটিং মিছিল সমাবেশ করতে হয়। এর জন্য যে স্পেসটা প্রয়োজন সেটা বিরোধীদের দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের সময় দলের কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে। তারা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের দলের পক্ষে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করে। সেই সুযোগও তাদের দেওয়া হয়নি। আর আমরা যদি নির্বাচন কমিশনের কথা বলি, এটা ঠিক যে নির্বাচন কমিশন আম্পায়ারিংয়ে থাকেন। কিন্তু সরকার না চাইলে নির্বাচন কমিশন তেমন কিছু করতে পারে না বলেই আমরা বারংবার দেখেছি।
এরপরে আসে নির্বাচনের দিন। ভোট কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা দলগুলোর এজেন্ট থাকতে হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের বিরোধীদলের এজেন্ট থাকার ব্যাপারে সরকার অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি দেখায়। কেন্দ্রগুলো থেকে বিরোধীদলের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আগের রাতে সরকারি দলের পক্ষে ব্যালট পেপারের সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার অভিযোগও রয়েছে। সুতরাং এই বিষয়গুলোকে ভিত্তি করে বিরোধীদল বলছে এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে পারে না। তারা এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
নির্বাচনে গেলে বিরোধী দল সুবিচার পাবে সেই আস্থা তৈরি করার জন্য নির্বাচন কমিশন বা সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে বিএনপি যেভাবে একটি অনড় অবস্থানে রয়েছে সেটাও ঠিক নয়। আলোচনার জন্য পূর্ব শর্ত দেওয়া যেতে পারে; তবে সেখানে সবকিছুই মেনে নিতে হবে এ ধরনের পূর্ব শর্ত দেওয়া ঠিক নয়। রাজনীতি এবং রাজনীতির আলাপ-আলোচনা সাদা পরিবর্তনশীল একটি বিষয়। আলোচনা করতে হবে খোলা মনে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েক মাস আগে থেকেই সরকারি দল এবং বিরোধীদলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করা উচিত ছিল। যদিও নির্বাচন কমিশনের এখানে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার কথা নয় তবুও যেহেতু তারা নির্বাচনে আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব পালন করে সুতরাং তারা সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পারত। এটা দোষের কিছু ছিল না। আমরা যেমন মাঠের বিরোধীদলের পক্ষ থেকে কোনো নমনীয়তা দেখতে পাইনি তেমনি সরকারিদলের পক্ষ থেকেও আলোচনার কোনো আগ্রহ আমরা দেখিনি।
কালবেলা : সরকার নিজের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর। বিএনপিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিতে অনড়। এতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংসতার পথে যেতে পারে বলে মনে করেন কী?
আলী ইমাম মজুমদার : রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই জাতীয় একটি অচলাবস্থা কোনো দেশের জন্যই সুখকর নয়। বলা হয় জনগণ অংশ নিলেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়। কিন্তু এখানে আরও অনেক কিছু ভাবার রয়েছে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সলিড ভোটার সংখ্যা প্রায় সমান সমান। এ ছাড়া অন্যান্য দলের কিছু ভোটার রয়েছে। বাকিরা হলেন হলেন ফ্লোটিং ভোটার। অর্থাৎ তারা ঠিক ভোটের আগেই সিদ্ধান্ত নেন কাকে ভোট দেবেন।
দেশের প্রধান বিরোধীদল এবং তাদের সমমনা দলগুলো যদি নির্বাচন বর্জন করে, নির্বাচন কেন্দ্রে যদি শুধু সরকারি দল এবং তাদের সমমনা কিছু দল অংশগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম হতে বাধ্য। সাম্প্রতিককালে গুলশানের একটি উপনির্বাচনে আমরা দেখেছি মাত্র ১০-১১ শতাংশ ভোট পড়েছে। কারণ সেখানে বিরোধীদলের কোনো প্রার্থী ছিল না। এটাই সত্য, এ আসনে আওয়ামী লীগের ভোটার সংখ্যা ১০-১১ শতাংশেরও অনেক বেশি। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের ভোটাররাই ভোট দিতে আসেনি। আমি মনে করি তারা ভোট দিতে আসেনি এই চিন্তা থেকে যে ভোট দিয়ে কী হবে- আমি ভোট না দিলেও দলের প্রার্থী জয় লাভ করবে। ভোটারের অংশগ্রহণ ছাড়া সেই নির্বাচনকে আইনগত দিক দিয়ে সিদ্ধ বললেও রাজনৈতিক দিক দিয়ে এটাকে আমি অসিদ্ধ বলেই মনে করি।
রাজনীতি একটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। রাজনীতি একটি দেশের আইনের উৎস, সংবিধানের উৎস এমনকি দেশের ভিত্তিরও উৎস রাজনীতি। আমরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র পেয়েছি, বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি রাজনীতির মাধ্যমে। আজ আমরা বাংলাদেশে স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে অনেক কথা বলি। পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে পূর্ব পাকিস্তান যখন বিভিন্নভাবে শোষিত হচ্ছিল তখন এর বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য নানা মত তৈরি হতে থাকে। সেখানে কাঠামোগতভাবে সামনে এগিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ছয় দফা নামে একটি কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। এই ছয় দফার পেছনে জাতি ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। ছয় দফা কর্মসূচির প্রথম দফাটি ছিল সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতিতে সরকার গঠন করতে হবে।
স্বাধীনতার চেতনা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে গঠিত। সেখানে ছয় দফার সেই এক নম্বর দফা অর্থাৎ রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হবে সেটা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সৌভাগ্য স্বাধীনতার পরে সংবিধান প্রণেতারা ছয় দফার সেই দফাটি সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তারা দেশের সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। সর্বজনীন ভোটাধিকারের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ আমরা তার প্র্যাকটিসটা ভিন্ন রকম দেখতে পাচ্ছি। সুস্থ রাজনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের অবশ্যই সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।
কালবেলা : দুই পক্ষের অনড় অবস্থানকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
আলী ইমাম মজুমদার : এই অবস্থা যে বাংলাদেশে একেবারে নতুন, তা নয়। যে যখন সরকারে থাকে সেই নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিজের পক্ষে নিতে চায়। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপি সেই দাবিকে আমল দিতে চায়নি। সে কারণে তখন একটি সংকট তৈরি হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন পাস হয় সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝিতে আবারো নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সেই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সুতরাং যখন যারা ক্ষমতায় থাকে তারাই নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে নিজেদের দিকে নিতে চায়। বাংলাদেশে এই প্রবণতাটা চলে আসছে।
কালবেলা : ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তেমনই আরেকটি নির্বাচন কী দেখতে যাচ্ছে জনগণ?
আলী ইমাম মজুমদার : আমি বিশেষ কোনো ব্যবস্থার কথা জোর দিয়ে বলছি না। আমি বলতে চাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ তাদের মিলেমিশেই একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। ’৯০-এর দশকের শেষ দিকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ সরকারের মেয়াদ যখন শেষ হয় তখনও নানা ধরনের কথা উঠেছিল। তখনকার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জোটের সমঝোতার ভিত্তিতে একটি সমাধান এসেছিল যেটাকে বলা হয় তিন জোটের রূপরেখা। তিনটা জোটেরই দাবি ছিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এরশাদ সাহেব তৎকালীন প্রধান বিচারপতির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন। একজন চলমান প্রধান বিচারপতি সরকারি ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারবেন এমন কোনো আইন তখন ছিল না। তারপরেও রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তে প্রধান বিচারপতির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হয়। জনগণ সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল কারণ জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ছিল।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সেই নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। পরে সংবিধানের একাদশ এবং দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ব্যবস্থাটিকে বৈধতা দেওয়া হয়। নির্বাচনকালীন সরকারের যিনি প্রধান ছিলেন অর্থাৎ প্রধান বিচারপতি নির্বাচনের পরে আবার তার স্বপদে ফিরে যান। সুতরাং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কী ব্যবস্থা হবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলো বসে ঠিক করবে। রাজনৈতিক দলগুলো একটি দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। অতএব পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমেই একটি সমাধান নিয়ে আসা সম্ভব।
কালবেলা : ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আমরা আলোচনার উদ্যোগ দেখেছিলাম। কিন্তু এবার সে ধরনের কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না কেন?
আলী ইমাম মজুমদার : রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা না হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। দেরি হয়ে গেছে তা সত্ত্বেও একেবারে আলোচনা না হওয়ার চেয়ে এখনই শুরু হওয়া ভালো। যে কোনো সময় আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা দেশকে ভালোবাসেন। তারা দেশকে কোনো সংকটের মধ্যে ফেলতে চান না বলেই আমি বিশ্বাস করি। অতীতেও তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটের মুহূর্তে সমাধান দিয়েছেন এবং দেশকে সামনের দিকে নিয়ে গেছেন। সুতরাং তারা সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসলে এখনো সমাধান নিয়ে আসতে পারবেন। তবে এখানে অবশ্যই সরকারকে কিছুটা ছাড় দিতে হবে।
বিরোধীদল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তারা সুবিচার পাবে, তারা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা চালাতে পারবে, তাদের ভোটাররা তাদের ভোট দিতে পারবে এ ধরনের একটি কার্যকর আশ্বাস বিরোধীদলকে পেতে হবে। পাশাপাশি বিরোধীদলকেও সরকারের সীমাবদ্ধতা বুঝতে হবে। আলোচনা সুযোগ নেই এমন কোনো রাজনৈতিক ফর্মুলা হয় না। নেগোশিয়েট করাই হলো রাজনীতি। সুতরাং আমি মনে করি এখনও সমাধান সম্ভব।
কালবেলা : বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোয় চাইলেও কী সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব?
আলী ইমাম মজুমদার : অভিযোগ রয়েছে এবং অভিযোগগুলো যে একেবারে অমূলক তা নয়। কিন্তু তার মধ্যেও সকল বিবদমান পক্ষ যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে একমত হয় এবং এর জন্য তারা যদি একটি মেকানিজম ডেভেলপ করতে চায় তাহলে সেটা অসম্ভব নয়। আমাদের নির্বাচন কমিশন নামক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নির্বাচনে আম্পায়ারিং করা। কিন্তু তারা তাদের ভূমিকা সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং মানুষকে খুব একটা আশাবাদী করতে পারেনি। তাদের কোনো জোরাল ভূমিকা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচন কমিশনারদের নিজেদের মধ্যেও বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। এগুলো খুব একটা ভালো লক্ষণ নয়।
গাইবান্ধায় একটি উপনির্বাচন হয়েছিল। সেই নির্বাচনকে ঢাকায় বসেই সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যরা। তারা দেখলেন প্রকৃতপক্ষে যেভাবে নির্বাচন হওয়ার কথা সেখানে সেভাবে নির্বাচন হচ্ছে না। বিশেষ করে সরকারি দলের সমর্থকরা যেভাবে খুশি সেভাবে ভোট দিচ্ছে এবং অনিয়ম করছেন। নির্বাচন কমিশন সে নির্বাচনটি বাতিল করে দিলেন। নির্বাচন কমিশনের এই বলিষ্ঠ ভূমিকা দেখে মানুষ আশাবাদী হয়েছিল। নির্বাচন বাতিল করার পর নির্বাচন কমিশন একটি কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটি একটি তদন্ত করে এবং দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে। বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। তারা কাউকে সাসপেন্ড করতে পারেন কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেন। তারা সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাতেও পারেন। কিন্তু আমরা দেখেছি গাইবান্ধার সেই উপনির্বাচনের বিষয়ে যে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল সেটা তারা শুধু সরকারকে জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেন। সরকার সেখানে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এখানে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আবার নির্বাচন কমিশন এই ব্যাপারটা সম্পর্কে একেবারেই নীরব। তাগিদ দেওয়া অথবা জনগণের সামনে বিষয়টা তুলে আনার মতো পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশন নেয়নি। ফলে জনগণ নির্বাচন কমিশনের ওপর তেমন আস্থা রাখতে পারছে না।
কালবেলা : বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের এই ভূমিকা সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন কী?
আলী ইমাম মজুমদার : গত বেশ কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে বিদেশিরা ভালোভাবেই ইনভল্ভ ছিল। বিদেশিদের ইনভলভ করে বিরোধীদল। জাতিসংঘের যুগ্ম মহাসচিব তারানকো সাহেব এসেছিলেন। কমনওয়েলথ মহাসচিবদের প্রতিনিধি এসেছিলেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমিকাটারের প্রতিষ্ঠান নিরপেক্ষ থিঙ্কট্যাঙ্ক থেকে লোক এসেছিল। সুতরাং বিদেশিদের অন্তর্ভুক্তিটা একেবারেই নতুন নয়। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এখানে একটি স্ববিরোধিতায় ভোগে। বিদেশিরা যখন তাদের নিজেদের পক্ষে বক্তব্য দেন তখন তারা পুলকিত হয় এবং সেটাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করতে থাকে। আবার বক্তব্য যখন তাদের বিরুদ্ধে যায় তখন তারা সেটাকে বিদেশি হস্তক্ষেপ বলে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। আমরা এভাবে জাতি হিসেবে আমাদের নিজেদেরই ছোট করছি। আমরা আমাদের নিজেদের কাজটা নিজেরা করতে পারছি না।
আমরা এবং ভারত ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হয়েছি একই সময়ে। অথচ আজ ভারতের নির্বাচন নিয়ে কেউ কথা বলে না। ’৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার পরে আমাদের কোনো রকম নির্বাচন কমিশন ছাড়া এবং কোনোরকম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাড়া একটি দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার সক্ষমতা ছিল। কিন্তু আমরা আমাদের সেই সক্ষমতা নষ্ট করে ফেলেছি। আমরা এত দুর্বল এত দৈন্য ছিলাম না। সুতরাং আমাদের ফিরে দেখতে হবে কেন আজকে আমাদের এই অবস্থা। পরস্পর আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি ফর্মুলা ডেভেলপ করা সম্ভব এবং সেটাই করতে হবে।
কালবেলা : রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় গেলে ছাড়তে চায় না কেন?
আলী ইমাম মজুমদার : এই অবস্থার শুরু হয় পাকিস্তান আমল থেকেই। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন আইয়ুব খান। তিনি প্রথম মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠান করেন। এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং প্রাদেশিক পর্ষদের নির্বাচন করেন। এই নির্বাচনগুলো সাধারণ ভোটের মাধ্যমে হয়নি। মৌলিক গণতন্ত্র বলে একটি সিস্টেম তৈরি করেছিলেন তিনি। সেই সময় থেকেই রাজনীতিতে সরকারি কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট করার একটি নিয়ম চালু হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পরেও আমরা সেই প্রবণতা থেকে বের হতে পারিনি। পরে আমরা আরও দুটি সামরিক শাসন দেখেছি। তাদের অধীনে গণভোটও দেখেছি। সেই ভোটে সরকারি কর্মচারীদের প্রচার-প্রচারণার কাজে ব্যবহার করা হয়। সেসব নির্বাচনে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যায়নি কিন্তু সেখানেও লাখ লাখ ভোট কাস্ট দেখানো হয়েছে। আমাদের যে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের মধ্য থেকে উঠে এসেছে তারাও এই প্রবণতার মধ্যে পড়ে গেছে, যেটা দুর্ভাগ্যজনক।
কালবেলা : আমাদের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থার ঘাটতি বিদ্যমান। আস্থাহীনতা দূর হচ্ছে না কেন?
আলী ইমাম মজুমদার : ক্ষমতা এখানে একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। ক্ষমতার পেছনে তাদের ব্যক্তিগত, দলগত, গোষ্ঠীগত সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপার জড়িয়ে আছে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, আমাকে ক্ষমতায় থাকতেই হবে, ক্ষমতায় না থাকলে হয়তো আমাকে কারাগারে যেতে হবে অথবা অন্যান্য অসুবিধায় পড়তে হবে। সরকারে যারা থাকে তারা এই ধরনের একটি শঙ্কার মধ্যে থাকছে। পাশাপাশি যারা বিরোধী দলে থাকে তারা ভাবছে আমি যদি ক্ষমতায় যেতে না পারি তাহলে আমাকে আরও নিপীড়ন করা হবে। এটাই সত্য, বিরোধীদলে যারা রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের নিপীড়নমূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বৈষম্যমূলক কার্যক্রম দেখতে পাচ্ছি আমরা। আমাদের সকলকেই ভাবতে হবে, এই দেশটাকে চালাতে হলে আমাদের গণতন্ত্র ধরে রাখতে হবে।
কালবেলা : আগামী নির্বাচন কোন পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন?
আলী ইমাম মজুমদার : আগামী নির্বাচন একটি বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। কোনো একটা সমঝোতার জন্য যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে- ‘বেটার লেট দেন নেভার’। দেরিতে হলেও যদি একটি ফর্মুলা বের করা যায় সেটাও ভালো। যদি আইন-কানুন সংশোধন করার কোনো ব্যাপার থাকে সেটাও করতে হবে। ’৯০ সালের নির্বাচনে সংবিধানকে পাশে রেখে আমরা নির্বাচন করেছিলাম। তখন আমরা সমাধান বের করে এনেছিলাম। সুতরাং এখনো সমাধান বের করে আনা অসম্ভব নয়।
কালবেলা : ২০১৪ সালে সরকার একটি ফর্মুলা দিয়েছিল। এবারের সংকট সমাধানে কেউ কোনো ফর্মুলা দিচ্ছে না কেন?
আলী ইমাম মজুমদার : দুপক্ষকেই কোনো একটা জায়গায় পৌঁছতে হবে। আস্থার সংকট দূর করতে হবে। নির্বাচন করার মতো একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে, একটি রাস্তা তৈরি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের হাতে অনেক ক্ষমতা রয়েছে। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার শক্তি তাদের অর্জন করতে হবে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের সদস্য মাত্র ৩০০ জনের মতো। অথচ আমাদের নির্বাচন কমিশনের সদস্য ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এত লোকবল বাড়িও দেখা যাচ্ছে ফলাফল শূন্য। সুতরাং নির্বাচন কমিশনে জনবল বাড়ানোর থেকেও শক্ত অবস্থান নেওয়াটাই বেশি জরুরি।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতার দেওয়া রয়েছে। সেই ক্ষমতাটা তারা গ্রহণ করার যে উদ্যোগ সেখানেই আমরা ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি। এ ছাড়া সরকারের তরফ থেকেও এখানে আমরা ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন ক্ষমতা এক্সারসাইজ করতে পারবে সেই মেকানিজম ডেভেলপ করা দরকার। শুধু নির্বাচন কমিশন চাইলেই এটা সম্ভব হবে না। এখানে সহযোগিতা করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর। আর মানুষ নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখবে তার জন্য নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান উদ্যোগ থাকা দরকার।
কালবেলা : এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-সমাবেশ করছে। কিন্তু নির্বাচন-পূর্ব আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো নয়। ২৮ অক্টোবর ঘিরে সহিংসতার কোনো আশঙ্কা করছেন কী?
আলী ইমাম মজুমদার : এখন পর্যন্ত আমি আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। তবে আমি সব সময়ই একজন আশাবাদী মানুষ। ১৮ কোটি মানুষের একটি জাতিকে নিয়ে আমরা চলছি। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার চাইবে এটা স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। যারা নির্বাচন করবে ক্ষমতায় থাকবে তারাও চাইবে তাদের ক্ষমতা আরও দীর্ঘায়িত হোক। বিরোধীদলও চাইবে ক্ষমতায় ফিরে যেতে। ক্ষমতা এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ক্ষমতায় যেতে চাওয়ার মধ্যে দোষের কিছু নেই। দেশের জন্য ভালো কিছু করতে গেলে এবং মানুষের জন্য কিছু করতে গেলে ক্ষমতায় যাওয়াটা আবশ্যকীয়। কিন্তু এই ক্ষমতায় যেতে গিয়ে দেশের যেন বড় কোনো ক্ষতি হয়ে না যায় সেটা তাদের ভাবতে হবে। আমরা আবার ১/১১ এর মত কিছু আশা করি না। আমরা আশা করি বিরোধীদলকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য সরকার অধিকতর সচেষ্ট হবে। অধিকতর ছাড় দেবে। বিরোধীদলকেও একটি সমঝোতা এসে নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সহিংসতা কারো জন্যই ভালো কোনো ফল বয়ে আনবে না।
মন্তব্য করুন