মাহবুবউল আলম হানিফ
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:২৬ পিএম
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মাহবুব উল আলম হানিফের সাক্ষাৎকার

বিএনপির সক্ষমতা নেই বলে তারা নির্বাচনে আসতে চাচ্ছে না

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। ছবি : কালবেলা
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। ছবি : কালবেলা

মাহবুব উল আলম হানিফ, এমপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। মাহবুব-উল আলম হানিফ ঢাকা কলেজে পড়াকালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করেন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

কালবেলা : বিএনপি এক দফার আন্দোলন করছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের আন্দোলনকে কীভাবে দেখছে?

মাহবুব উল আলম হানিফ : বিএনপির আন্দোলন নির্বাচন বানচাল করার আন্দোলন। দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তারা আন্দোলন করছে। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল, একটি দুর্নীতিবাজ দল। বিএনপিকে জনগণ ধিক্কার দেয়। এই দলের শীর্ষ দুই নেতা বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত। একজন কারাগারে আছেন, আরেকজন পলাতক। বিদেশি আদালতেও বিএনপি সন্ত্রাসী দল হিসেবে অভিহিত। কয়েক দিন আগেও কানাডার ফেডারেল কোর্ট বিএনপিকে আবারও সন্ত্রাসী দল হিসেবে রায় দিয়েছে। পঞ্চমবারের মতো বিএনপি আদালত কর্তৃক সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।

যে দলের শীর্ষ নেতারা দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত এবং আদালত কর্তৃক দণ্ডিত, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য চিহ্নিত সেই দলের প্রতিজন মানুষের কোনো আস্থা থাকার কথা নয়। বিএনপি কখনোই জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসার চিন্তা করে না। সে কারণেই বিএনপি ষড়যন্ত্রের পথ খোঁজে। তারা চায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অন্যের কাঁধে ভর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে। এটিই বিএনপির মূল লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্য নিয়েই বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে।

কালবেলা : প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিপরীতমুখী অবস্থানে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন অনেকে। এখান থেকে পরিত্রাণের পথ কী?

মাহবুব উল আলম হানিফ : কোনো ধরনের আন্দোলনে রাষ্ট্র পরিচালনা কঠিন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি যদি আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে সে ক্ষেত্রে সরকার আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হস্তে সেগুলোকে দমন করবে। যেমনটা আমরা ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন করেছিলাম। সেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন করে দেশকে আজ এই পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আবারও আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে।

কালবেলা : বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের কর্মসূচি পালন করছে। তারা সরকারকে একটি বার্তা দিচ্ছে। সরকারের কি তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো ধরনের আগ্রহ রয়েছে?

মাহবুব উল আলম হানিফ : আমরা বারবারই বলেছি- বিএনপি যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে চায় এবং সেই চাওয়াটা যদি সংবিধানসম্মত হয় তাহলে সরকার সেটা অবশ্যই বিবেচনা করতে পারে। তবে সংবিধান বহির্ভূত কোনো অযৌক্তিক বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করতে চাইলে সেটা সরকারের পক্ষে বিবেচনা করা সম্ভব নয়।

কালবেলা : বিএনপি বলছে, সরকারের প্রতি তাদের কোনো ধরনের আস্থা নেই। আস্থা না থাকলে কীভাবে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাবে?

মাহবুব উল আলম হানিফ : বিএনপি সরকারের প্রতিপক্ষ। বিএনপি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতারই প্রতিপক্ষ। সুতরাং সরকারের প্রতি তাদের আস্থা থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। যে দলটি স্বাধীনতাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে না তারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির প্রতি কীভাবে আস্থা রাখবে? বিএনপি আস্থা রাখছে কী রাখছে না সেটা নিয়ে সরকারের ভাবার কিছু নেই।

কালবেলা : আপনি কী বলতে চাচ্ছেন- বিএনপি না আসলেও সরকার নির্বাচন করবে?

মাহবুব উল আলম হানিফ : অবশ্যই। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনে যারা রয়েছেন তারাই নির্বাচন পরিচালনা করবেন। আমরা অবশ্যই চাই নির্বাচন করার সক্ষমতা রয়েছে এমন সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসুক। যাদের নির্বাচনের সক্ষমতা নেই তারা নির্বাচনে নাও আসতে পারে। দেশে ৫০টির বেশি নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দল রয়েছে। সব দলের কী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই। কোনো একটি দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না চায় তাহলে কি নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাবে! এটাতো সম্ভব নয়।

কালবেলা : বড় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলে সেটি কী নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলবে না?

মাহবুব উল আলম হানিফ : নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না সেটা তাদের ব্যাপার। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যেমন রাজনৈতিক অধিকার এবং রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ, তেমনি নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটাও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে সেটা হবে রাজনৈতিক দায়িত্বহীনতার পরিচয়।

কালবেলা : ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালে তারা নির্বাচনে গেলেও সেই নির্বাচনের ফলাফল ভালো হয়নি। এজন্য তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

মাহবুব উল আলম হানিফ : বিএনপি যদি নির্বাচনে পরাজিত হয় সেই পরাজয়ের দায় কি সরকার নেবে? জনগণ কী বিএনপির পরাজয়ের দায় গ্রহণ করবে? তারা পরাজিত হয়েছে কারণ তারা জনধিকৃত কাজ করেছে। জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ২০০১-২০০৬ সময়কালে বিএনপি যখন রাষ্ট্র-ক্ষমতায় ছিল তখন তাদের কর্মকাণ্ড কেমন ছিল? তারা দেশের জন্য এবং জনগণের জন্য করেছে এরকম একটি ইতিবাচক কাজ দেখাতে পারবে? তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের যে ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছিল সেটা জনগণের কাছে প্রকাশিত। তারা ক্ষমতায় থাকাকালেই একসঙ্গে ৬৩টি জেলায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আদালতে বোমা বিস্ফোরণ করে বিচারপতিদের হত্যা করা হয়। উগ্র মৌলবাদী সংগঠন বাংলাভাইয়ের নেতৃত্বে রাজপথে সশস্ত্র মিছিল করা হয়। সে সময় হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয়। আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের হত্যা করার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তারা এই সমস্ত বর্বরোচিত ন্যক্কারজনক কাজগুলো করেছিল। তাদের এ সমস্ত অপরাধ জাতির কাছে দৃশ্যমান। দেশবাসী দেখেছে তারা কীভাবে হাওয়া ভবন বানিয়ে দেশকে লুটপাট করেছে। তারা কোনো ভালো কাজ করেনি। জনগণকে দেখানোর মতো কোনো ভালো কাজ তাদের নেই। সুতরাং জনগণ কেন তাদের পক্ষে থাকবে?

কালবেলা : বিএনপির জনসমাবেশে বিপুল জনসমাগম দেখা যাচ্ছে। দলটিকে মানুষ পছন্দ না করলে তাদের জনসভায় এত মানুষ কেন আসবে?

মাহবুব উল আলম হানিফ : ঢাকা মহানগর এর মধ্যে আমাদের প্রায় ১১২টি ওয়ার্ড রয়েছে। এই ১১২টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২শ ইউনিট রয়েছে। প্রত্যেকটা ইউনিটে আমাদের রাজনৈতিক সংগঠনের কমিটি রয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুটি দলেরই তা রয়েছে। একটি ইউনিটে যদি ৫০ সদস্যের কমিটি হয় তাহলে ১২শ ইউনিটে ৫০ জন করে ধরলে শুধু কমিটির লোকই পাওয়া যাবে ৬০ হাজার। এটা শুধু একটি সংগঠনের হিসাব। সঙ্গে যদি আরও তিন-চারটি সংগঠন যুক্ত হয় তাহলে সংগঠনের নেতাকর্মীর সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় ৩-৪ লাখ।

বিএনপির কোনো জনসভায় তিন/চার লাখ জনসমাগম হয়েছে? বিএনপির কোনো জনসভায় কি লক্ষাধিক লোক হয়েছে? হয়নি। তাহলে কী এমন জনসভা করল বিএনপি! বিএনপির জনসভায় সাধারণ মানুষ কোথায়? বিএনপির জনসভায় সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা কোথায়? বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষ রয়েছে। ১ শতাংশ মানুষ জনসভায় আসলেও ১৮ লাখ মানুষ হয়। ঢাকা শহরে ৪ কোটি মানুষের বাস। ঢাকার ১ শতাংশ মানুষ জনসভায় আসলেও ৪ লাখ মানুষের জনসভা হয়। বিএনপির কোনো সমাবেশে ৩/৪ লাখ মানুষ হয়েছে? সুতরাং বিএনপির জনসভায় বা কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নেই। বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। কারণ সাধারণ মানুষ দেখেছে এদেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতি শুধু শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হয়েছে। শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে এই দেশটাকে যেভাবে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন তা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার সময় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ ডলারের নিচে। এখন বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৯০০ ডলার। চরম দরিদ্রের দেশ থেকে আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছেছি। আমরা দ্রুত মাধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এটি এমনি এমনি হয়নি। শেখ হাসিনার যোগ্যতা এবং দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই আজ বাংলাদেশের এই উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে।

পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, পায়রাবন্দর, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ এরকম অজস্র প্রকল্প শেখ হাসিনার হাতে তৈরি হয়েছে যেগুলো মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। শেখ হাসিনার প্রতি দেশের মানুষের আস্থা রয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই বিএনপি'র আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সুতরাং এই আন্দোলন এমনিতেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

কালবেলা : আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তিকে বাংলাদেশের বিষয়ে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। তাদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মাহবুব উল আলম হানিফ : একটি দেশের রাষ্ট্রদূত কোনো কথা বললে সেটি অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। কারণ একটি দেশের রাষ্ট্রদূত সেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের উন্নয়ন সহযোগী যেসব দেশ রয়েছে তারা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু কোনো দেশের এমপি বা পার্লামেন্ট মেম্বার তারা কোন দেশে বসে কার পক্ষে বিবৃতি দিচ্ছে তাতে কিছু যায় আসে না। আজ আমেরিকার যেসব কংগ্রেসম্যান বা সিনেটররা বিবৃতি দিচ্ছে বলে বলা হচ্ছে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর করলে জানা যাবে যে এগুলো লোক দিয়ে করানো হচ্ছে। আমেরিকাতে সিনেটর বা কংগ্রেসম্যানদের নির্বাচনের জন্য ফান্ড রেইজ করতে হয়। ফান্ড কালেকশন করার জন্য তারা বিভিন্ন ছোট ছোট প্রোগ্রাম করে এবং সাপোর্টারদের ডোনেশন গ্রহণ করে। এটা সে দেশের একটি বৈধ সিস্টেম। আমরা এর আগে লবিস্ট নিয়োগ করে অর্থের বিনিময়ে চিঠি চালাচালির অনেক ঘটনা দেখেছি। কোনো একজন কংগ্রেসম্যান বা সিনেটর লবিস্টের মাধ্যমে কী বিবৃতি দিল সেটা খুব একটা গুরুত্ব বহন করে বলে মনে হয় না। তবে ওই দেশের রাষ্ট্রদূত যদি কোনো কথা বলেন সেটা অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে। কারণ একজন রাষ্ট্রদূত সেই দেশকে রিপ্রেজেন্ট করেন।

কালবেলা : বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। সেটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকেই করা হয়েছে?

মাহবুব উল আলম হানিফ : ভিসানীতির বিষয়ে আমরা আগেও বলেছি- এটা আমাদের জন্য একটি চরম অসম্মানজনক বিষয়। কাকে ভিসা দেবে বা না দেবে সেটা যদিও একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় তারপরেও একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বিষয়ে এরকম একটি নীতি ঘোষণা করা বা শর্ত আরোপ করা এটা কখনোই সম্মানজনক নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপের জন্য আমরা যতটা না তাদের দায়ী করি তার চেয়েও অনেক বেশি দায়ী করি যারা ওই দেশকে প্রভাবিত করেছে এই ভিসানীতি বাস্তবায়নের জন্য।

বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি করে কী এই দেশের মানুষের জন্য না কি তাদের নিজেদের জন্য? বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে আবারও প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির কাছে দেশ এবং জনগণ বড় নয়। বিএনপির কাছে তাদের দলটিই বড় এবং ক্ষমতা সবচেয়ে বড়। এর আগে ২০১৩ সালে বেগম খালেদা জিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চিঠি লিখেছিলেন- যাতে আমাদের গার্মেন্টস পণ্যের ওপর থেকে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। একটি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেই দেশের মূল শিল্পখাত, রপ্তানি আয়ের মূল উৎস বন্ধ করার জন্য কাউকে বলছেন- এটা কীভাবে সম্ভব! তিনি ভেবেছিলেন যদি গার্মেন্টস শিল্পে ধস নামে তাহলে মানুষ ক্ষুদ্ধ হবে এবং সরকারের পতন হতে পারে। কিন্তু সরকারের পতন ঘটাতে গিয়ে দেশটাই ধ্বংস হতে পারে সেটা তিনি ভাবেননি। গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে বাংলাদেশের এক কোটি মানুষের রুটি-রুজি জড়িত। এই খাত বাংলাদেশের মূল রপ্তানি আয়ের উৎস। সেই খাতের ওপর তিনি কীভাবে জিএসপি সুবিধা দিতে নিষেধ করতে বলেন! তারা লবিস্ট নিয়োগ করে সরকারের বিরুদ্ধে, পুলিশের বিরুদ্ধে এবং র‍্যাবের বিরুদ্ধে নানা সময়ে বিভিন্ন দেশ বা সংস্থার কাছে মিথ্যাচার করে চিঠি দিচ্ছে। সে সব দেশের সরকার বিভ্রান্ত হতেই পারে। সেই বিভ্রান্তি থেকে কেউ যদি ভিসানীতির মতো কোনো সিদ্ধান্ত নেয় সেটা অবশ্যই আমাদের জন্য অসম্মানজনক।

কালবেলা : বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশীদের অবস্থানকে আপনি কিভাবে দেখেন?

মাহবুব উল আলম হানিফ : আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করল তখন আমি বলেছিলাম- এই ভিসানীতিটি আমাদের মতো একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য অসম্মানজনক। কিন্তু এতে আমরা শঙ্কিত ও বিচলিত নই। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা চায় আমরাও সেটাই চাই। আমাদের চাওয়া একই- সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবেই অনুষ্ঠিত হবে এবং তা হবে অংশগ্রহণমূলক। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এবং আমরা তা করতে বদ্ধপরিকর। আমাদের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। নির্বাচন কমিশন থেকেও জোরালোভাবেই বলা হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে এবং তারা তা করবেন। আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও চাচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। এটাই তারা দেখতে চায়। সুতরাং তাদের চাওয়া এবং আমাদের চাওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা বরং তাদের বলেছি, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে কি না সেটা দেখার জন্য আপনারা প্রয়োজনে পর্যবেক্ষক পাঠান। এতে আমরাও খুশি হই। আমরা তাদের স্বাগত জানাই।

কালবেলা : বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, ২০১৪ এবং ১৮-তে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সেই ভরসা তারা কীভাবে রাখবে?

মাহবুব উল আলম হানিফ : ২০১৮-এর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতা লন্ডনে বসে মনোনয়ন বাণিজ্য করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছিলেন। তারা প্রত্যেকটা নির্বাচনী আসনে দুজন/তিনজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে রেখেছিল। কারণ কি? কারণ যত বেশি মনোনয়ন দেওয়া হবে তত বেশি টাকা আসবে। এর ফলে যেটা হয়েছে তা হলো- নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের নেতাকর্মীরা জানে না কে তাদের প্রার্থী হবে। শেষে যার টাকা বেশি সেই মনোনয়ন পেয়েছে। সুতরাং মাঠে যার কোনো কর্মী নেই সে ধরনের মানুষ মনোনয়ন পাওয়ায় তাদের পক্ষে নির্বাচনে কোনো কর্মী মাঠে নামেনি। ২০১৮ সালের বিএনপি নিজেরাই নির্বাচনের পরিবেশন নষ্ট করে ফেলেছিল। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন করেনি, সেই নির্বাচন তারা বানচাল করতে চেয়েছিল তেমনি ২০১৮ সালে তারা নির্বাচন করেনি বরং তারা নির্বাচন ঘিরে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। সেটা তাদের নেতা তারেক রহমান সফলভাবেই করেছেন।

কালবেলা : প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হয় সেটা থেকে উত্তরণের কী কোনো পথ নেই?

মাহবুব উল আলম হানিফ : এটা থেকে উত্তরণের সহজ পথ হল আমাদের সকলকে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আমাদের অনেক সংগ্রাম এবং ত্যাগের বিনিময়ে এই সংবিধান আমরা পেয়েছি। এই সংবিধান যদি সকলেই মেনে চলে তাহলে এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির তৈরি হবে না। সংবিধানের বাইরে কোনো পথ খুঁজতে গেলেই সমস্যা হবে।

১৯৯৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া যখন একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন তখন আন্দোলন হয়েছিল। আমরা তখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন- এই দেশে পাগল এবং শিশু ছাড়া নিরপেক্ষ কোনো ব্যক্তি নেই। এখন কি তাদের নেত্রীর বক্তব্য তারা অস্বীকার করবে? তারা যে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে সেই নিরপেক্ষ ব্যক্তি কোথা থেকে আসবেন? সুতরাং নির্বাচিত সরকারের বাইরে কারো হাতে ক্ষমতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সকলেই যদি সংবিধানের বাইরে না গিয়ে সংবিধানকে অনুসরণ করে এবং নির্বাচনটাকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য আগ্রহী হিসেবে এগিয়ে আসে তাহলে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির অবসান ঘটানো এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সন্ত্রাসীদের গডফাদারদের আটক করতে হবে : ব্যারিস্টার খোকন

ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার : তারেক রহমান

‘ভাত তারা দিতে চায়, আমি খাই না’

ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে মশার ওষুধ সরবরাহ করবে উত্তর সিটি

মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম প্রতিদিন গণমাধ্যমকে জানাবে ডিএসসিসি

অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে ডাবল ইঞ্জিনের গতি আনা জরুরি : সাইফুল হক

বিয়ের দাবিতে রানার বাড়িতে চাচির অনশন

মানবসম্পদ উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ

গতিশীল নেতৃত্বে সংকটকাল কাটিয়ে উঠছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

লেবানন যোদ্ধাদের রকেট হামলায় জ্বলছে গোলান মালভূমি

১০

ঢাবিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ছয়জনের পাঁচজনই ছাত্রলীগের

১১

কুমিল্লায় দাঁড়িয়ে থাকা অটোতে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কা, নিহত ২

১২

মিরসরাইয়ে রাতের আঁধারে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর

১৩

মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ঢাবি

১৪

অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব : বুলবুল

১৫

জলবায়ু সুরক্ষায় অর্থ বরাদ্দের দাবি

১৬

শেখ হাসিনা সরকারের গণহত্যা ক্ষমার অযোগ্য : আ স ম রব

১৭

রাষ্ট্র সংস্কার ফ্যাসিবাদকে রুদ্ধ করবে : আ স ম রব 

১৮

লিটন-সাকিবের আউটের ধরনে বিস্মিত তামিম

১৯

ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন

২০
X