লিয়াকত শাহ ফরিদী, সিলেট
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ০৬:২০ পিএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৩, ০৬:২২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘আমরার সিলেট’ হবে জনবান্ধব ও স্মার্ট নগরী : আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সৌজন্য ছবি
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সৌজন্য ছবি

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। স্কুলে অধ্যয়নকালীন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। স্কুলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তার রয়েছে মুজিবাদর্শের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। দলের গ্রিন সিগনাল পেয়ে গত ২ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসেন। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নেন। সিলেটে এ পদে আওয়ামী লীগের ১১ জন প্রার্থী থাকলেও নির্বাচকমণ্ডলী তাকেই বেছে নেন। আগামী ২১ জুন সিটি নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কালবেলা’র পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। নির্বাচন ও বিজয়ী হলে তার উন্নয়ন পরিকল্পনা কী হবে তা তিনি বিস্তারিত বলেছেন। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

কালবেলা: আপনার ইশতেহারে মূল থিম হচ্ছে গ্রিন-ক্লিন-স্মার্ট নগরী, তা কীভাবে করবেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন এখানে প্রার্থী হওয়ার। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমি বলব- ২১ তারিখের নির্বাচনে জয়ী হলে ইশতেহার অনুয়ায়ী প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করব। পরিচ্ছন্ন স্মার্ট ও সবুজ নগরী গড়তে প্রতিটি কাজ হবে পরিকল্পনামাফিক। পরিপূর্ণ ডিজিটালাইজড করা হবে সিটি পরিচালনার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাকে, দক্ষ জনশক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়নের ভিত্তিতে পূর্ণতা প্রদান করা হবে। গ্রিন ও স্মার্ট নগরী বিনির্মাণে মহাপরিকল্পনা তৈরি এবং বাস্তবায়ন করা হবে। জনশক্তিকে আরও দক্ষ ও সেবাপ্রদানের মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ করে তুলব। দক্ষ জনবল দিয়ে নগরভবন থেকে সব মৌলিক নাগরিক সেবা সুনিশ্চিত করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এ দেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে তাই স্মার্ট সিটি গড়াও অসম্ভব কিছু নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সিটি আমি ঘুরে দেখেছি। দেখার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। আর রাজশাহী পারলে আমরা কেন পারব না।

কালবেলা: তাহলে আপনার উন্নয়ন মডেল কি রাজশাহীর চেয়েও ভিন্ন কিছু হবে?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: শুধু রাজশাহী নয়। এ নিয়ে আমার বড় স্বপ্ন আছে। বিশ্বের নতুন যে সিটিগুলো হয়েছে, সে আদলে সিলেটকে সাজাতে চাই। যদিও মেইন সিটিকে সেভাবে পারা যাবে না। জায়গা কম। তবে উপকণ্ঠের বর্ধিত অংশকে সেভাবে সাজাতে চাই। অনেক আইডিয়া আছে।

কালবেলা: আপনার দৃষ্টিতে সিলেটের প্রধান সমস্যা কী কী?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি আমার ইশতেহারে বিস্তারিত উল্লেখ করেছি। প্রথমেই প্রয়োজন স্মার্ট নগর ভবন। মহানগরের যাবতীয় নাগরিক সেবা পরিচালিত হয় যে ভবন থেকে তা যদি হয় অপর্যাপ্ত, অপূর্ণাঙ্গ ও অদক্ষ, তখন জনগণকে কাঙ্ক্ষিত যুগোপযোগী সেবা প্রদান অসম্ভব। একসময় প্রকৃতির কন্যা বলা হতো সিলেটকে। সুন্দরের শ্রীভূমিও বলা হতো। কিন্তু আজ গাছ নাই। সবুজ প্রকৃতি আজ বিনষ্ট। রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি নির্মাণ এবং নগর পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেওয়াসহ সবুজ সিলেট গড়ে তুলতে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন এসব করতে হবে। রাস্তাঘাট সুন্দর করতে হবে। এ ছাড়া অপরিচ্ছন্নতা অন্যতম সমস্যা। নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে হবে। জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে। শহর রক্ষা বাঁধ, সুরমা নদী খনন, চা বাগানে গার্ডওয়াল দিতে হবে। যানজটমুক্ত নগরী গড়তে হবে। তবে যাই করা হোক না কেন, করতে হবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসতে হবে।

কালবেলা: আপনি প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। প্রচার শেষ। জনগণের সাড়া কতটুকু পেয়েছেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সিলেটেই আমার জন্ম। স্কুলজীবন থেকেই আমি ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মী। সিলেট শহরে আমার লেখাপড়া সিলেট সরকারি কলেজে। আমি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। বাইরে থাকলেও আমি রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে সিলেটের জন্য কাজ করেছি। নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আমি প্রথম হলেও সিলেটের নির্বাচন কাছ থেকে দেখার এবং নির্বাচনে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। সিলেটের বিগত দুটি সিটি নির্বাচনে ও দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি ছিলাম। এবার প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে আমি দেখেছি, সিলেটের মানুষ খুবই সচেতন। রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ। তারা উন্নয়ন চায়। তারা কাজ চায়। তারা কার মাধ্যমে কাজ হবে সেটা জানেন। অল্পদিনেই সিলেটের মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছেন। তারা আমার কথাগুলো শুনেছেন। আমার প্রতিশ্রুতিগুলোও শুনেছেন। তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে সিলেটের উন্নয়ন হবে। সব মিলিয়ে সিলেটের মানুষজনের থেকে ইতিবাচক সাড়া আমি পেয়েছি।

কালবেলা: আপনার প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি দলের নেতাকর্মীরা কীভাবে নিয়েছেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: মেয়র পদে আরও ১০ জন ছিলেন মনোনয়নপ্রত্যাশী। অনেকেই আমার চেয়ে যোগ্য। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পর সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। সবাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন। যে কোনো সুবিধা-অসুবিধায় আমি দলের পাশে যেমন ছিলাম তেমনি দলের নেতা-কর্মীদের পাশেও সাধ্যমতো দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কে কার পক্ষে বা কোন গ্রুপের আমি তা কখনো দেখিনি। ফলে নেতাকর্মীরা আমাকে কাছের মানুষ মনে করে। আমি দল থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি।

কালবেলা: বিগত নির্বাচনেও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন নেতারা কিন্তু গোপনে বিরোধিতা করেছেন। এ জন্য পরে তাদের কারণ দর্শাতে হয়েছে।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগসহ দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী আমাকে নিয়ে অন্য যে কোনো বারের চেয়েও বেশি ঐক্যবদ্ধ। বিগত নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক ইউনিটি এমন ছিল না। ছত্রভঙ্গ টিম ছিল। এবার নিজেরা বিভিন্ন জোনে ভাগ করে, নিজেরাই সেই দায়িত্ব নিয়ে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করছেন। এবার সাংগঠনিক কোনো দুর্বলতা নেই। সবার মধ্যে মেয়র পদটি পুনরুদ্ধারের তাগিদ রয়েছে।

কালবেলা: ১০ বছর পর মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় কিন্তু নগর ভবনে তাদের একসেস ছিল না। ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নগর ভবনের দায়িত্বে না থাকার যে শূন্যতা ছিল এ কারণেই নেতাকর্মীদের মধ্যে তাগিদটুকু বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাদের মধ্যে কর্মস্পৃহা বেড়েছে। গতি বেড়েছে। নির্বাচিত হলে শুধু নেতৃবৃন্দ নয়। সর্বস্তরের কর্মীদেরও একসেস থাকবে। নগর ভবনে শুধু দলীয় নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষেরও একসেস থাকবে।

কালবেলা: প্রচারে দলের নেতাকর্মীরা যেভাবে ঘিরে রেখেছেন, নির্বাচিত হলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের প্রভাব কতটুকু থাকবে?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আল্লাহর রহমতে নির্বাচিত হতে পারলে নগর ভবনে প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নই ওঠে না। প্রভাব খাটানোর ক্যাপাসিটিই তো তাদের থাকবে না। নেতাকর্মীরা আসবেন। দেখা করবেন। সুযোগ-সুবিধা নেতাকর্মীরা পাবেন। তার মানে অন্যরা পাবে না, তা নয়। সিটি মেয়র হয়ে গেলে সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার থাকবে। আমার ঘনিষ্ট কেউ যদি লাইনের বাইরে চলে যান বা অকারেন্স ঘটান, তিনি বিপদে পড়বেন। আমার দ্বারাই তিনিই বড় ভিকটিম হবেন। ম্যাসেজ ক্লিয়ার। রেকর্ড করে রাখেন। এটা হবেই না।

কালবেলা: কেন মনে করছেন অন্য প্রার্থীদের চেয়ে আপনি বেটার?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি ইয়াং। এনার্জেটিক। দৌড়ঝাঁপ করতে পারব। কাজ করতে পারব। রাজনীতি তো দেশের জন্য করি। এলাকার জন্য করি। পতাকার জন্য করি। আমার ছোট বেলার স্বপ্ন ছিল জনপ্রতিনিধি হয়ে সিলেটের উন্নয়ন কাজ করার। সেই সুযোগ যখন সৃষ্টি হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আমাকে নমিনেশন দিয়েছেন আমি ডেভেলপমেন্ট করতে চাই। সিলেটকে নিয়ে আমার যে উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে তা আমি জনগণের কাছে বিভিন্ন সময় তুলে ধরেছি। যদি রাজশাহী সিটি উন্নয়ন করে দেশের উদাহরণ হতে পারে সিলেট কেন পারবে না? সিলেটকে নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো জনগণ বুঝতে পেরেছেন যে আমি আমার প্রতিশ্রুতির ১০০ ভাগ করতে না পারলেও ৯০ ভাগ করতে পারব। তাই জনগণ সিলেটের উন্নয়নের জন্য আমাকে ভোট দিবেন।

কালবেলা: অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে কি না?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: অবশ্যই হচ্ছে। নির্বাচন জমজমাট। ৮ জন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরা আছেন তারা প্রচার চালাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীরা কাজ করছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী স্ট্রং। না হওয়ার তো কারণ দেখি না। মানুষের মধ্যে স্পিড আছে। মানুষ ভোট দিতে আসবে। আমরাও জনগণকে ভোটে নিয়ে আসতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। যাকেই ভোট দিক না কেন সে যেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আসে। এতে আমি ফেল করলেও সমস্যা নেই। ভোটাররা যেন ভোট দিতে আসেন। বিএনপির প্রার্থীরাও তো আছে। ওরা তো ৪৩ জনকে বহিষ্কার করেছে তা থেকেই তো প্রমাণ হয় ওরাও নির্বাচনে আছে। ভোট বর্জনের আহ্বান নেতাকর্মীরা মানছে না।

কালবেলা: বরিশালের নির্বাচনের চিত্র অনুযায়ী বিএনপি থেকে ভোটারদের বাধা দেওয়ার কোনো আশঙ্কা করছেন কি?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: বিএনপির ভোট বর্জন এটা রাজনৈতিক কথা। ওরা দিতেই পারে কিন্তু বাধা দেওয়া অপরাধ। এ রকম হলে বিদেশে জেল হয়ে যেত। এটা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। তবে সিলেটে রাজনৈতিক যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান আমি সিলেটে সেটি আশঙ্কা করছি না। সিলেটে রাজনৈতিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বিদ্যমান আছে।

কালবেলা: জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অভিযোগ, আপনি হলফনামায় সার্টিফিকেট ও আয় নিয়ে তথ্য গোপন করেছেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি তো তথ্য গোপন করিনি। সব মিস ইনফরমেশন। আমার তো সার্টিফিকেট আছে। আয় যা আছে তা দিয়েছি। ইংল্যান্ডে বিজনেস আছে। বাড়ি আছে। সেটা তো অন্য টেরিটরি। ইনকাম লন্ডনে আছে। অফিসিয়ালি তা দেখাতে পারি না। এখানে নেই তাই দেই নাই। কেন বাড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দেব। আমি মিথ্যার আশ্রয় নেয়নি। এখানে যা আছে তা দিয়েছি।

কালবেলা: বিগত ১০ বছরে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাজকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: ইতিবাচকভাবে দেখছি। তিনি তো কিছু কাজ ভালো করেছেন। রাস্তাঘাট বড় করেছেন। তবে অপরিকল্পিত কাজ করেছেন। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ রয়েছে। আরিফুল হক খুব খারাপ করেছেন তা বলব না। কামরান ভাই একটা ফেইজ করেছেন। আরিফ ভাইও একটা ফেইজ করেছেন। আমি তাদের থেকে আরও ভালো করতে চাই। বিগত ১০ বছরে সিলেটের জন্য ২৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। তবে অপরিকল্পিত কাজের কারণে সরকারের অর্থের অপচয় হয়েছে।

কালবেলা: পর্যটন নগরী নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে কী?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সিলেট নগরীতে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে সিলেটের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য নগরীতে একটা মিউজিয়াম স্থাপন ও সুরমা নদী এবং নদীর তীরকে ঘিরে পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা ও একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরি করতে চাই।

কালবেলা: নগর ভবনে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট সক্রিয়, সেবার মান নেই। আপনি কী করবেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সিটি করপোরেশন হলো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সেবা দিতে হবে। আমি নির্বাচিত হলে মাস্টার রোলের নিয়োগে গরিব মানুষ যারা চাকরি পেয়েছে তাদের মানবিক কারণে বাদ দেওয়া যাবে না। তবে আর কোনো অবৈধ নিয়োগ যেন না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি, বাণিজ্য, অবৈধ কোনো কিছু আর করতে দেওয়া হবে না। সেবা দিতে হবে। না হয় আমি থাকব না।

কালবেলা: সিলেটে বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো স্থাপনা নেই। পুরোনো জেলখানার জমিতে বঙ্গবন্ধু উদ্যান করার দাবি রয়েছে নগরবাসীর। আপনি এ বিষয়ে কী করবেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সিলেটে বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো স্থাপনা নেই এটা ঠিক। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নামে কিছু করতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির বিষয় রয়েছে। তবে আমি নির্বাচিত হলে কিছু করতে চাই। এ বিষয়ে আমার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে জেলখানার স্থানটি নিয়ে নগরবাসীর অনেকদিন থেকেই দাবি রয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে খোঁজ খবর না নিয়ে কী করা যাবে তা বলা যাবে না। তবে নগরীতে উদ্যান দরকার। নগরীর শিশু বৃদ্ধ নারীদের অবসর ভ্রমণের জন্য এখানে না হলেও সুরমার তীরবর্তী স্থানে নিরাপদ উদ্যান করা যাবে।

কালবেলা: আপনি এমন সব প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন যেগুলো সিলেট সিটি মেয়রের কাজের মধ্যে পড়ে না।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: দুএকটা প্রতিশ্রুতি আমি তো দিচ্ছি। আমি বলছি হাইস্পিড ট্রেন চালু করব। আমি বলছি এটা সিটির প্রজেক্ট নয়। আমি সিলেটের মেয়র হব আর আমি কি সিলেটের জন্য কাজ করব না? ট্রেন রাজধানী থেকে সিলেট আসবে। তা দিয়ে সিলেটের মানুষজনই যাতায়াত করবেন। আমি শুধু সিলেট সিটির মানুষের জন্য না, পুরো সিলেটের জন্য কাজ করব। সুযোগ যখন সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তা আদায় করব। এটা আমার স্বপ্ন। এটি বড় কাজ। এটা দিয়েই কাজ শুরু করতে চাই। ড্রেন সবাই করতে পারে। বড় কাজ কজন করতে পারে।

কালবেলা: বিকল্প বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কী করবেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সিলেটে প্রতিদিন ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। নগরীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি কিংবা জ্বালানি সংকটের জন্য প্রায়ই লোডশেডিং হয়। আমি নির্বাচিত হলে একটা ৩০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের কথা বলছি। এটা সোলার হবে? না কি প্ল্যান্ট হবে? বা কী পদ্ধতিতে হবে সেটা পরিকল্পনা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে করতে হবে। যেটা বেটার হবে সিলেটের জন্য সেটাই করতে হবে। আগামী ৫০ বছরের জন্য চিন্তা করে একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে চিন্তাভাবনাটি। ন্যাশনাল গ্রিডে থাকবে তবে ব্যবহার করবে সিলেট সিটি। তবে এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পারমিশন প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী সিলেটবাসীর জন্য সেটার অনুমতি দিবেন।

কালবেলা: বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্ন নগরী এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন কীভাবে করবেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সিটি করপোরেশনের প্রধানতম কাজের একটি হচ্ছে এর জনস্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন। নগরের সব শ্রেণির জনগণের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে সুস্থ থাকার ব্যবস্থা করা। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, প্রজনন ও শিশু স্বাস্থ্য, পরিবারকল্যাণ, রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থাসহ, পুষ্টি, পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা। এগুলো ঠিক রাখার জন্য নগরীর বর্জ ব্যবস্থাপনা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিভিন্ন স্থান বা জলাশয়ে ফেলা এসব বর্জ্য পরিবেশের জন্য যেমন হুমকি তৈরি করছে তেমনি জমির উর্বরতা কমছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে সুরমা নদী, খাল-বিল নাব্য হারাচ্ছে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কালবেলা: সুরমা নদীর নাব্য বৃদ্ধি ও অকাল বন্যারোধে পদক্ষেপ নিবেন কি?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সরকার সুরমা নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি আমাদের জন্য বড় এক সুসংবাদ। এই কাজকে যথাযথ তদারকি করা ও দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নিয়ে সুরমা তীরবর্তী বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করব।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টাকার বিনিময়ে শাহবাগে বাসভর্তি মানুষ নিয়ে আসে আ.লীগ নেতা

লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরায়েল

ঢাকায় বিশৃঙ্খলা নিয়ে সারজিসের কড়া বার্তা

সরকারি সেবা স্বচ্ছ ও জনমুখী করুন : উপদেষ্টা রিজওয়ানা

লাখ টাকার লোভ দেখিয়ে শাহবাগে জনসমাগম করার নেপথ্যে কারা?

একনেকে ৬ হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্প অনুমোদন

জামিন পেলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান

হত্যা মামলার আসামি নোয়াখালীর ইউপি চেয়ারম্যান ঢাকায় গ্রেপ্তার

দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস

১৭ বছর রেমিট্যান্স পাঠানো হান্নানের মরদেহ দেশে আনতেও জোটেনি সরকারি সাহায্য

১০

রিকশাচালকদের বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন ডিএমপি কমিশনার

১১

কী হচ্ছে পাকিস্তানে, মুক্তি পাবেন ইমরান খান?

১২

ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দিতে চাই : সেলিম উদ্দিন

১৩

টয়লেট দিবসের পোস্ট দিয়ে কাকে খোঁচা দিলেন অপু?

১৪

নিম্নচাপের পিঠে চড়ে আসছে শীত

১৫

সরকার পতনের ডাক ইমরান খানের, গণঅভ্যুত্থানের দিকেই যাচ্ছে পাকিস্তান?

১৬

মামলা না নিলে ওসিকে ১ মিনিটে সাসপেন্ড করব : কমিশনার

১৭

বাজারে আসছে মেসির সাইকেল, দাম কত?

১৮

ফের সড়ক অবরোধ করল ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা

১৯

চকরিয়ায় দুই পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

২০
X