ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সহআন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। তিনি সংরক্ষিত নারী আসন-৫০ থেকে নির্বাচিত একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালের ২৮ মে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বিএনপির আন্দোলন নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা -
কালবেলা: আজকের মহাসমাবেশে মানুষের কেমন সাড়া দেখছেন?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা: আপনারা দেখেছেন গতকাল থেকেই নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমাদের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে সমবেত হচ্ছেন। নয়াপল্টনের আশপাশের পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিটা জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় আসছেন। ঢাকায় আসার পথে তাদের নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাদের তল্লাশি করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের পাঁচশর মতো নেতাকর্মীকে একদিনেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার আবার নতুন করে মামলার খাতা খুলে বসেছে। আমাদের নেতাকর্মীদের মামলা দিচ্ছে, ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে এমনকি এলাকায়ও তাদের গ্রেপ্তারসহ নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। কিন্তু সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে মানুষ নয়াপল্টনে সমবেত হয়েছে। মানুষ এখন একটি জিনিসই চায়, হয় মরব অথবা বাঁচব; কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করব। বিএনপি এই মুহূর্তে এটা ছাড়া আর কিছুই চিন্তা করছে না।
কালবেলা: আপনাদের মহাসমাবেশের দিনেই ১৪ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের আরেকটি চিঠি প্রকাশ হলো। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা: আমি চিঠিটি দেখেছি এবং নিউজটাও পড়েছি। চিঠিতে ব্যবহৃত ভাষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তারা যে শক্ত ভাষায় চিঠিটা লিখেছেন—আমি বলব সেটা সরকারের জন্য একটি বিরাট লজ্জার। তারা চিঠিতে অত্যন্ত গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। সরকারের যদি এখনো বোধোদয় না হয় তাহলে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে তাদের।
চিঠিতে আবারও আহ্বান জানানো হয়েছে যেন জাতিসংঘের শান্তি মিশনে র্যাব অংশগ্রহণ করতে না পারে। চিঠিতে আহ্বান জানানো হয়েছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি নির্বাচনের। বলা হয়েছে, এই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, বিরোধীদলের কর্মীদের ওপর নির্যাতন—এই সব অপরাধ কর্ম তারা সংঘটিত করছে দেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে।
তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা চান বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তারা চান মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করবে।
কালবেলা: পাল্টাপাল্টি সমাবেশ কেন?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা: আওয়ামী লীগ প্রতিমুহূর্তে চাচ্ছে সংঘাত বাধাতে। আওয়ামী লীগ চাইছে সহিংসতা উসকে দিতে। আওয়ামী লীগ এই দেশে রক্তপাত চাইছে। আমরা প্রথমেই বলেছি, আপনারা আগে তারিখ দেন—দরকার হয় আমরা তার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে আলাদা তারিখ দিব। আমরা একদিনে সমাবেশ করব না। কিন্তু তারা তা চান না। ওবায়দুল কাদের পরিষ্কার বলেছেন—নির্বাচন পর্যন্ত যেদিনই বিএনপি সমাবেশ, মিটিং, পদযাত্রা, মানববন্ধনসহ যে কোনো কর্মসূচি করবে সেদিনই আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকবে।
তাদের নিজস্ব কোনো কর্মসূচি নেই। তারা যে সংঘাত বাধাতে চান তাদের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এটাই তারা বারবার প্রমাণ করছে।
কালবেলা: আপনাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনানুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা চলছে কী?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা: আমার জানামতে কোনো আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও চলছে না। এরকম কিছু আমি জানি না। আমাদের দাবি স্পষ্ট—সরকার পদত্যাগ করবে, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচনে মানুষ ভোট দেবে। মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। কে ক্ষমতায় গেল, কে গেল না সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না। আমরা চাই মানুষ নিজের ভোট দিতে পারুক।
কালবেলা: আমরা শুনেছি আপনারা টানা কর্মসূচি দেবেন। অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া বা এরকম কোনো পরিকল্পনা আছে কী?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা: যেহেতু বাংলাদেশের কেন্দ্রস্থল ঢাকা এবং রাজনীতিসহ সবকিছুই ঢাকাকে ঘিরে। ধীরে ধীরে আমাদের কর্মসূচিগুলো আরও তীব্র হতে থাকবে। প্রতিদিনই আমাদের কোনো না কোনো কর্মসূচি থাকবে। আমরা মাঠে আছি, মাঠে থাকব।
কালবেলা: কোনো আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলে আপনারা অংশগ্রহণ করবেন কী?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা: আমরা পরিষ্কার করে জানিয়েছি আলোচনা হতে পারে কেবলমাত্র নির্দলীয় সরকারের গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়ে। নির্দলীয় সরকার কোনো প্রক্রিয়ায় গঠিত হবে, এর ফর্মেশন কেমন হবে, কাদের দ্বারা গঠিত হবে এবং কত সময়ের জন্য তারা দায়িত্ব নেবেন। শুধু এই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হতে পারে। এর বাইরে আর কোনো আলোচনার জায়গা নেই।
কালবেলা: আপনাদের দলের মহাসচিব সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে আপনারা কী বার্তা দিতে চাইছেন?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা: আমি শুধু এটুকুই বলব, বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। বিএনপি কোনোদিনও প্রতিহিংসার রাজনীতি করেনি। প্রশাসনে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যারা আছেন আমরা জানি অনেক সময় ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সরকারের চাপে তাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে। সুতরাং এই বিষয়গুলো নিশ্চয়ই আমরা সহানুভূতির সঙ্গে দেখব এবং আমরা আশা করব এখন থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসন, তারা রাষ্ট্রের কর্মচারী, তাদের বেতন হয় জনগণের করের টাকায়, সুতরাং তারা সেটা মাথায় রেখেই তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী সেটা তাদের চাকরি বিধিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে। সুতরাং তার বাইরে গিয়ে তারা অতি উৎসাহী হয়ে কোনো দলের পক্ষে কাজ করবেন না বলে আমরা আশা করব।
কালবেলা: কিছু কিছু খবরে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায় আপনাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি করা হচ্ছে। এমনকি অনেককে গ্রেপ্তারও করছে পুলিশ। এগুলোকে কীভাবে দেখছেন?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা: আমরা ১৭ বছর ধরে এ ধরনের চাপ মোকাবিলা করছি। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে তারা জেলে রেখেছে। বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, অনেককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করে ফেলছে। তাদের পুলিশ ঘরে থাকতে দেয় না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে আমাদের তৃণমূলের একজন ইউনিয়ন কর্মীকেও মামলার পর মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে এবং এর সবই মিথ্যা মামলা। এসব মোকাবিলা করেই আমরা এগিয়েছি। এবার আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। ইনশাআল্লাহ।
মন্তব্য করুন