বাংলা ভাষায় উচ্চতর পর্যায়ে ভূগোল বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন ও পাঠ্যপুস্তক রচনায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে নগর গবেষণা কেন্দ্রের ৫০ বছরপূর্তি (সুবর্ণজয়ন্তী) উপলক্ষে কেন্দ্রের প্রকাশনা সিরিজের অংশ হিসেবে ডিসেম্বর, ২০২২-এ প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাপক নজরুল ইসলামের বাংলাদেশের ভূগোল। ১৯৭২ সালে জন্মলগ্ন থেকে নগর গবেষণা কেন্দ্র, মূলত ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের ওপর বিভিন্ন ধরনের গবেষণা সম্পাদন ও গ্রন্থ প্রকাশ করে আসছে। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এ বছর (২০২৩) বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলায় অধ্যাপক নজরুল ইসলামের বাংলাদেশের ভূগোল বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়। নগর গবেষণা কেন্দ্রের বর্তমান সাম্মানিক সভাপতি কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা ভূগোল ও পরিবেশবিদ, শিক্ষাবিদ, নগর বিশেষজ্ঞ ও শিল্প সমালোচক। নগর গবেষণা কেন্দ্র ও চন্দ্রাবতী একাডেমির যৌথ প্রকাশনায় ২৮০ পৃষ্ঠার চার রঙের বাংলা ভাষায় লিখিত বইটির বিষয় বৈচিত্র্য এবং প্রাসঙ্গিক ৩৭টি মানচিত্র, ৬৪টি ফটোগ্রাফ, ২৯টি সারণি, ৯টি বক্স ও বিখ্যাত ৪টি চিত্রকর্মের অনুলিপি সমৃদ্ধ নান্দনিক উপস্থাপনা কেবল ভূগোলবিদ নয়, অন্যান্য বিদগ্ধজনের মনস্তুষ্টি যোগাবে। চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের আঁকা অ্যাক্রিলিক চিত্র “বাংলার প্রকৃতি: নীল ও সবুজ” অবলম্বনে প্রচ্ছদ সজ্জিত করেছেন লেখক শিল্পী সমালোচক নজরম্নল ইসলাম নিজেই। তথ্যসমৃদ্ধ ভূমিকা, তথ্যনির্দেশ, নির্ঘণ্ট ছাড়াও বইটির ৩০টি অধ্যায়ের মধ্যে রয়েছে; বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ভূগোল, ভৌগোলিক অবস্থান ও আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাঠামো, ভূতত্ত্ব, ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, মৃত্তিকা, নদ-নদী ও পানি সম্পদ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র সম্পদ, খনিজ সম্পদ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বনজ সম্পদ, প্রাণী সম্পদ, মৎস্য সম্পদ, কৃষি সম্পদ, ঔষধি গাছ ও লতাগুল্ম, ভূমি সম্পদ ও ব্যবহার, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্প ও শিল্পায়ন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা জোট, পর্যটন, প্রবাসী বাংলাদেশী ও আয়, জনসংখ্যা, গ্রামীণ বসতি, নগরায়ণ, গৃহায়ন, মানব-উন্নয়ন, জাতীয় আয় ও দারিদ্র্য, সামাজিক ভূগোলঃ সমাজ কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রবণতা, সাংস্কৃতিক ভূগোল, ঢাকা এবং উপসংহার: ভৌগোলিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ। স্মর্তব্য, ভূগোল শাস্ত্রের ওপর ত্রিশটি অধ্যায় সম্বলিত কোন বই এর আগে বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়নি। গ্রন্থের ঐতিহাসিক ভূগোল অধ্যায়টিতে বাংলাদেশ ভূখন্ডের প্রাচীন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত ঘটনাবলীর বিশ্লেষণধর্মী উপস্থাপন ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ হিসেবে সমৃদ্ধ এবং এর মধ্যে গভীর মনোযোগ ও আন্তরিকতার ছাপ স্পষ্ট। গ্রন্থের প্রতিটি অধ্যায়েই রয়েছে লেখকের নিজস্ব চিন্তার প্রতিফলন। ভূতাত্ত্বিক কালপঞ্জিতে বাংলাদেশের অবস্থান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূগোল অধ্যায়ে বাংলাদেশের সমাজ কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রবণতা এবং জনসংখ্যা, নগরায়ণ, গৃহায়ন, ঢাকা ও উপসংহারের ভৌগোলিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ অধ্যায়ে লেখকের সৃজনশীল ও যুক্তিনিষ্ঠ নিজস্ব চিন্তার গভীরতা স্পষ্ট, যা সব ধরনের পাঠককে আকৃষ্ট করবে। সম্ভব সবখানেই লেখক সর্বসাম্প্রতিক চিত্র তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন। প্রাকৃতিক ও মানবিক বিষয় বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বইটিতে অবশ্য সব অধ্যায়ের ব্যাপ্তি সমান নয়। কোন কোনটি বেশ ছোট। লেখক অবশ্য নিজেও এ সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উলেস্নখ করেছেন। এখন ভূগোল শাস্ত্রকে যেভাবেই উল্লেখ করা হোক না কেন, অধ্যাপক নজরুল ইসলামের কাছে ‘ভূগোল’-এ আদি নামই অধিকতর গ্রহণযোগ্য। ভূগোল শাস্ত্রকে ভালবেসে প্রবীণ বয়সে বই হিসেবে নির্ভরশীলতার এ সৃষ্টিশীল অভিজ্ঞতার অবদান অম্লান হয়ে থাকবে। উল্লেখ্য, বছর পাঁচেক আগে (২০১৭) তিনি বাংলাদেশ জাতীয় অ্যাটলাস নামে বাংলা ও ইংরেজি দুই খন্ডে খুব বড় মাপের অ্যাটলাস সম্পাদনা করেছিলেন যার প্রকাশক ছিল বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি।
বাংলাদেশের ভূগোল
লেখক: অধ্যাপক নজরুল ইসলাম
প্রকাশক: নগর গবেষণা কেন্দ্র ও চন্দ্রাবতী একাডেমি, ডিসেম্বর ২০২২
পৃষ্ঠা ২৮০, হার্ড কভার, মূল্য: ৮০০ টাকা
মন্তব্য করুন