জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক ঋতু পরিবর্তন, অত্যধিক বৃষ্টিপাত, বন্যা এবং খরা সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসাথে এর ফলশ্রুতিতে স্বাস্থ্য সংক্রাত সমস্যা ও বিভিন্ন রোগ ও তার সাথে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এবং এমিনেন্সেরে যৌথ ভাবে আয়োজনে “তৃণমূলের কণ্ঠস্বর: স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব” শিরোনামের এক গবেষণার ফলাফলে উক্ত বিষয় উঠে আসে।
এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয় আজ ২৪ জুলাই, (সোমবার) রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড রিসার্চ এর উপদেষ্ঠা ড. আইনুন নিশাত। এবং আলোচক হিসাবে ছিলেন ওয়ামেক এ রাজা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, বিশ্ব ব্যাংক, এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা।
গবেষণাটির শিরোনাম ছিল “তৃণমূলের কণ্ঠস্বর: স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব”। এমিনেন্সের সিইও ড. শামীম হায়দার তালুকদার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
গবেষণায় উঠে আসে, বাংলাদেশ তার ভৌগলিক অবস্থানের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই ধরনের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যের সামাজিক এবং পরিবেশগত নির্ধারক প্রভাবিত হচ্ছে এবং জনগণের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মানও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । ঢাকা, নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, বরগুনা, সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ এবং কুড়িগ্রামে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে।
ড. তালুকদার তার উপস্থাপনায় তুলে ধরেন, গবেষণা এলাকায় সবচেয়ে প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা হল কলেরা, ডেঙ্গু, ভিসারাল লেশম্যানিয়াসিস, প্রজনন নালীর সংক্রমণ, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া । তাছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলে অত্যধিক লবণাক্ততার সাথে যুক্ত অসুস্থতা, যেমন স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিও-ভাস্কুলার রোগ ইত্যাদির আধিক্যতা বেশি।
প্রধান অতিথি ড. আইনুন নিশাত বলেন, “স্বাস্থ্যের প্রভাবকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে হবে।” ড. নিশাত ন্যাপ (ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান) বাস্তবায়নের বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে কাজ করার জন্য আটটি প্রধান
ক্ষেত্রও তুলে ধরেন; যেমন ১ ) প্রশমন ২ ) অভিযোজন, ৩ ) অর্থ, ৪ ) প্রযুক্তি স্থানান্তর, ৫ ) সক্ষমতা বৃদ্ধি, ৬ ) গ্লোবাল টার্গেট, ৭ ) ক্ষতি ও লোকসান, ও ৮) স্বচ্ছতা প্রক্রিয়া।
ওয়ামেক এ রাজা জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আমাদের আরো গবেষণা করা দরকার”।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে অনেক ধরনের স্বাস্থ্য ঝুকি দেখা যাচ্ছে, এবং এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার সরকারী ও বেসরকারী এর পাশাপাশি অনেক অবৈধ ক্লিনিকও চালু রয়েছে। এগুলোকে নজরদারিতে আনতে হবে। এবং কোনো ভুল স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।
গবেষণা থেকে উঠে আসা সুপারিশ গুলো হল; ইউনিয়ন সাব সেন্টার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী, প্রযুক্তিবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর রোগ সনাক্তকরণ ও তাদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
মন্তব্য করুন