না ফেরার দেশে চলে গেলেন আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া। ৭৩ বছরের জীবনে শাহজাহানের ৩২ বছরই কেটেছে কারাগারের চার দেয়ালে।
২০২৩ সালের ১৮ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও মুক্ত আকাশের নিচে তার স্থায়িত্ব ১ বছরের বেশি নয়। এই এক বছরে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছে জল্লাদ শাহজাহানকে। অত:পর অনন্তলোকের পথে পাড়ি জমালেন তিনি।
সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রোববার রাতে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে হাসপাতালে আনা হয় বলে জানা গেছে হাসপাতাল সুত্রে।
শাহজাহান ভূঁইয়ার জন্ম নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সে সময় হত্যা ও অস্ত্র মামলায় তার ৪২ বছরের সাজা হয় তার। ফাঁসি কার্যকর ও অন্যান্য কারণে তার সাজার মেয়াদ কমিয়ে ৩২ বছর করা হয়।
কারাগারের নথি অনুসায়ী, ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলায় ডাকাতি ও হত্যার জন্য ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয় শাহজাহানের।
আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া কারাজীবনে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি ও যুদ্ধাপরাধীসহ ২৬ জনকে ফাঁসি দিয়েছেন বলে রেকর্ড রয়েছে জেলের নথিতে। যদিও শাহজাহানের দাবি, তিনি আরও বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছেন।
কারা সূত্রে জানা যায়, জল্লাদ শাহজাহান নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। মুক্তির আগ পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ছয় আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদের ফাঁসি দেন জল্লাদ শাহজাহান।
এছাড়া চারজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিও দিয়েছেন জল্লাদ শাহজাহান। মানবতা বিরোধী অপরাধী আবদুল কাদের মোল্লা, সালাউদ্দিন কাদের ওরফে সাকা চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং মীর কাসেম আলীর ফাঁসি দেন তিনি।
এ ছাড়া ১৯৯৩ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যা শারমীন রীমা হত্যা মামলার আসামি মুনির, ১৯৯৭ সালে বহুল আলোচিত ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসান, ২০০৪ সালে এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই এবং আতাউর রহমান সানিকেও ফাঁসি দিয়েছেন জল্লাদ শাহজাহান।
৩২ বছর কারাগারে থাকাকালীন তার পরিবারের কেউ তার খোজ নেইনি সেই আপেক্ষ থেকে মুক্তির পর পরিবারের কাউকে খোঁজার চেষ্টা না করে কেরানীগঞ্জে একাকী জীবন বেঁছে নিয়েছিলেন আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান।
মন্তব্য করুন