সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের তোষামোদি করার কারণ প্রতি ঈদে ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সোমবার (১০ জুন) সমিতির পক্ষ থেকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই অভিযোগ আনা হয়।
ঈদে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঈদযাত্রায় দেশের সব পথে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরকে যেসব দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে তা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে দায়িত্বশীল করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশিষ্টজনরা।
‘প্রতিবছর ঈদে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক বৃদ্ধিতে নাগরিক সমাজের উদ্বেগ’ আয়োজনে ধারণাপত্রে সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মুনাফার অংশীধারদের সঙ্গে নিয়ে ঈদের প্রস্তুতি সভা করেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে দায়িত্ব দিলেও তারা সকলে মিলেমিশে ভাড়া নৈরাজ্য চালান। বাস্তবতা হলো ৯০ শতাংশের বেশি যাত্রীকে প্রতি ঈদে বাড়ি যেতে দিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া দিতে হয়। এমন কি বিআরটিএ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ না করে বরং যাত্রীরা স্বল্প দূরত্বে গেলেও রুট পারমিটের শেষ গন্তব্য পর্যন্ত ভাড়া দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
যারা সড়কে চাঁদাবাজিতে জড়িত তাদের উপর ঈদযাত্রায় সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধের দায়িত্ব দেওয়া হয় এমন অভিযোগ করে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ফলে চাঁদাবাজরাই চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত আটকে দেয়। লক্কড়-ঝক্কড় বাস চালাতে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তাদের ওপর ঈদযাত্রায় লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল বন্ধের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিঈদে ফিটনেসবিহীন বাসের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী বহন কঠোরভাবে নিষিদ্ধের ঘোষণা বিভিন্ন পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও পরিবহন সংকট, বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণ নিম্ন আয়ের লোকজনের এসব পরিবহনে যাতায়াত ঠেকানো যায় না।
নানা বাস্তবতায় সড়কে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা থেকে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকারভোগী তাদের ওপর সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রনের দ্বায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রতিটি ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ও পরিবহনে বিশৃঙ্খলায় প্রাণহানি ও মানুষের যাতায়াতে হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য দফায় দফায় বেড়েই চলেছে। সরকারের ধারাবাহিকতায় লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে সড়কে অবকাটামো উন্নত করলেও পরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারের ইমেজ চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বিশিষ্ট আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিব, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মহসিন, ড্রাইভার ওয়ালফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. বাদল আহমেদ প্রমুখ।
মন্তব্য করুন