২০১৭ সালে রোহিঙ্গার জনগোষ্ঠী বেশ বড় সংখ্যায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারে উখিয়ায় বিশাল এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে কক্সবাজার এলাকার বিশাল বনভূমি। যা একসময় হাতির চারণভূমিও ছিল। বনভূমির ক্ষতি প্রশমনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চলছে বনায়নের কাজ। এতে কাজ করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি)। বনায়ন ও পরিবেশ নিয়ে আরআরআরসির কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান কথা বলছেন কালবেলার সঙ্গে।
কালবেলা : রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে কক্সবাজার এলাকায় বনভূমির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিটা আসলে কেমন?
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান : গাছ কাটা তো হয়েছে। সেটা এক বিষয়। কেবল জ্বালানি কাঠের কথা বলি। জ্বালানি কাঠের জন্য রোহিঙ্গারা ১০টি ফুটবল মাঠ পরিমাণ জায়গা সাফ করে ফলেছে।
কালবেলা : ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি) এর উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ অভিযান কার্যক্রম শুরু হয়। সেই কার্যক্রমের কী অবস্থা এখন?
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান : আরআরআরসির উদ্যোগটা সামাজিক বনায়নের কোনো কর্মসূচির আওতায় না। এখানে আমরা নিজেরা চেষ্টা করছি। তবে হ্যাঁ, এখানে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মতো। প্রতিবছর তিন থেকে চার লাখ চারা রোপণ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা আমাদের চারা দিয়ে সাহায্য করেছে। ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই অংশগ্রহণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তর এগিয়ে এসেছে চারা রোপণে। এ ছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোও (এনজিও) বেশ সোচ্চার। ব্র্যাক, কারিতাসের মতো এনজিও চারা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহায্যও আমরা নিয়েছি। বিএটি বাংলাদেশও চারা দিয়ে আমাদের সাহায্য করেছে। ২০১৮ সাল থকেইে এসব এলাকায় চারা রোপণ শুরু হয়েছে। কার্যক্রম চালু আছে।
কালবেলা : রোপণ করার পর টিকে থাকছে এসব চারা?
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান : চারা রোপণের পরই আমাদরে কাজ শেষ না। এসব চারা বাঁচিয়ে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এসব চারা বাঁচিয়ে রাখার জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর ভরসা করতে পারি না আমরা। এ দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হয়। আমরা সেভাবে কাজ করছিও।
কালবেলা : চারাগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য কী করছেন?
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান : চারাগাছগুলো বাঁচিয়ে রাখা বেশ চ্যালেঞ্জের কাজ। আর এর ওপরই বনায়নের সফলতা নির্ভর করে। কিন্তু চারার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা আসলে শরণার্থীদের ওপর নির্ভর করিনি। আমরা ও আমাদের যারা চারা দিচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠান মিলে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছি। এনজিও, বিএটি বাংলাদেশের মতো করপোরেট যারা চারা নিয়ে এগিয়ে এসেছে তারাও দায়িত্ব নিয়েছেন। সবার সঙ্গে আলাপ করে সম্মিলিত উদ্যোগে আমরা ভলান্টিয়ার নিয়োগ করলাম। ভলান্টিয়ার ছয় মাস চারাগুলো পরিচর্যা করবে, পানি দিবে। বর্ষাকালে নজর রাখবে। এতে করে উপকার পাওয়া গেছে।
কালবেলা : বর্ষাকাল আসছে। এ সময় পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকে। সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই কি বনায়নের কাজ চলছে?
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান : আট হাজার একর পাহাড়ি জায়গায় রোহিঙ্গাদের জন্য ঘরবাড়ি করা হয়েছে। বাকি অংশটুকুতে যতটুকু চারা লাগানো যায় সে চেষ্টা আমরা করছি। অধিকাংশ জায়গাতেই তো ঘরবাড়ি, যতটুকু এলাকা কভার করা যায়। ওই গ্যাপগুলো চারা দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে তার এক-তৃতীয়াংশ চারা লাগানো সম্ভব হয়েছে।
কালবেলা : বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কি নির্দিষ্ট এলাকায় চারা রোপণ করছে?
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান : আসলে আমরা ভাগ করে নিয়েছি। সম্মিলিত চেষ্টাতেই কাজ চলছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তর ও এনজিওগুলো খালি অংশগুলোতে চারারোপণ করছে। ক্যাম্পের ভেতরের রাস্তার দুইপাশের গাছগুলো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে হয়েছে। গোছানো কাজের জন্য এনজিও-করপোরেট সবাই কাজ ভাগ করে নিয়েছি। সরকারি -বেসরকারি উদ্যোগেই বন আবার ফিরবে।
কালবেলা : রান্নাবান্নার জ্বালানির তো সুরাহা হওয়া দরকার। নইলে এসব জ্বালানির জন্য গাছ কাটা তো বন্ধ হচ্ছে না।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান : বিকল্প জ্বালানি উৎস হিসেবে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলপিজি) দিতে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই। তারা রাজি হলো। যখন একটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে এলপিজি গ্যাস দেওয়া শুরু হলো তখন আমরা বললাম, আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দাদেরও কিন্তু পাহাড়ের গাছের ওপর নির্ভরশীল। তাদেরও এই সুবিধা দেওয়া হোক। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়ভাবে ২৫ হাজার পরিবারকে এখন এলপিজি সরবরাহ করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন