চিকিৎসার জন্য ভারতের কলকাতা গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জল্পনা চলছে এখনো। হত্যা রহস্যের জট খুলতে কাজ করছে ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যেই অনেকটাই এগিয়েছে তদন্তের কাজ। হত্যার মোটিভ এখনো না জানা গেলেও শনাক্ত করা গেছে মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীদের।
আনার হত্যার তদন্তে কলকাতা সফর করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দাপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। সেখানে গিয়ে হত্যার ঘটনাস্থল সঞ্জীবনী গার্ডেনসহ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন তিনি।
এর মধ্যে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন সংসদ সদস্য সেই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসের টুকরো ও চুল পাওয়া গেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে এসব এমপি আনারের মরদেহের অংশ হতে পারে। কলকাতার সিআইডির কাছে সেপটিক ট্যাংকটি তল্লাশি চালানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন হারুন অর রশিদ। আনন্দবাজার প্রত্রিকার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধানের প্রশংসা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ আশাবাদী ছিলেন আনোয়ারুলের দেহাংশ মিলবেই। তিনি কলকাতা সিআইডিকে অনুরোধ করেন নিউ টাউনের ঘটনাস্থলের পাশে যে হ্রদ রয়েছে, সেখানেও তল্লাশি চালানোর। একইসঙ্গে সঞ্জীবনী গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে খুনের ঘটনা ঘটেছে, সেই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংকটিতে তল্লাশি চালানোরও অনুরোধ করেছিলেন। আর হ্রদে কিছু না মিললেও সেপটিক ট্যাংকটিতে ঠিকই মাংসের টুকরো ও চুল পাওয়া গেছে।
তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিবিপ্রধান বলেন, উদ্ধার মরদেহের খণ্ডাংশ এমপি আনারের, এটা ফরেনসিক টেস্ট ছাড়া বলা যাবে না।
মাংসের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারের বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি নিশ্চিত করে জানায়, ফরেনসিক পরীক্ষার পর এগুলো আনারের মরদেহের অংশ কিনা সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সিআইডি আরও জানায়, মাংসের অংশগুলো কসাই জিহাদ ওয়াশরুমের কমোডে ফেলে দিয়েছিল বলে আগেই স্বীকার করেছিল।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল কলকাতায় যায়। টানা তিন দিন তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দলটি ঢাকায় ফিরে আসে।
এখন পর্যন্ত সংসদ সদস্য আনার হত্যার ঘটনায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেরেছ ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিরা হলো- আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। সেখানে ১৩ মে তাকে হত্যা করে মরদেহ টুকরো টুকরো করে গুম করা হয়েছে বলে জানায় ডিবি।
আনোয়ারুল আজিম আনার ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। পেশায় ব্যবসায়ী আনোয়ারুল আজিম আনার আওয়ামী লীগের কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে পরপর তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন আনার।
মন্তব্য করুন