নারীর ক্ষমতায়ন ও সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রান্তিক ও সুবিধা বঞ্চিত নারীর জন্য বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখার উপর গুরুত্বারোপ করে ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এর সহায়তায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) আয়োজিত কর্মশালায় বক্তারা।
তারা বলেন, নারীর অধিকার সুরক্ষা, উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা খাতে স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে প্রাপ্ত থোক বরাদ্দের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ স্কিম নারী দ্বারা বাছাইকৃত ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে হতে হবে। অন্যদিকে চা বাগানের নারী শ্রমিকসহ প্রান্তিক নারী শ্রমিকদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার সংবেদনশীল কর্মপরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়ন নির্দেশিকা এবং মনিটরিং টুল বাস্তবায়ন জরুরি। সে সঙ্গে ‘উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ উইং প্রজেক্টের আওতায় নারীর ক্ষমতায়নে বাজেট পরিকল্পনায় উন্মুক্ত আলোচনাও গুরুত্বপূর্ণ।
বুধবার (২৯ মে) রাজধানী বনানীর একটি হোটেলে ‘জেন্ডার সংবেদনশীল কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন নির্দেশিকা এবং মনিটরিং টুল’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ইউএনওমেন এর ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ নবনীতা সিনহা। প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, বিশেষ অতিথি নেদারল্যান্ড এম্বাসীর সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার মাশফিকা জামান সাতিয়ার, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু সালিম মাহমুদ-উল-হাসান, ইউএনডিপির এ্যাসিন্ট্যান্ট কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ প্রসেনজিৎ চাকমা এবং বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর।
কর্মশালাটি পরিচালনা করেন ইউএনওমেন-এর প্রোগ্রাম অফিসার হুমাইরা বিনতে ফারুক। কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন জেন্ডার বাজেট বিশেষজ্ঞ নিলুফার আহমেদ করীম এবং উন্মুক্ত আলোচনা পরিচালন করেন ইউএনডিপির সারাহ জিতা। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মাহবুবা আইরিন, ১০ নং জামালপুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মোস্তাক, ঠাঁকুরগার ভাইস চেয়ারম্যান মাশহুরা, ইউএনডিপি’র টিম লিডার শারমীন ইসলাম প্রমুখ। কর্মশালায় ইউনিয়ন পরিষদের জেন্ডার সংবেদনশীল পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নের খসড়া নির্দেশিকা ২০২৩ উপস্থাপন করেন ইউএনওমেন এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার তপতি সাহা ও প্রোগ্রাম অফিসার নূর আলী শাহ্ এবং ইউএনডিপি’র মোহাম্মদ রাজিউর রহমান।
ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেছেন, -গত কয়েকটি অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটকে তিনটি থিমেটিক এরিয়া- ‘সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধি’, ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি’ এবং ‘উৎপাদন, শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ’ খাতে ভাগ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী বছর থেকে জেন্ডার বাজেট প্রক্রিয়া হবে। শিশু বিষয়ক অধিদফতর হবে।
তিনি আরও বলেন, নারীর মর্যাদা ও নারীর ক্ষমতায়নে জেন্ডার সংবেদনশীল জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ও যথাযথ বাজেট বরাদ্দ এবং মনিটরিং ব্যবস্থা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন, সুশীল সমাজ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসাথে কাজ করতে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে ২৮ হাজার উদ্যোক্তা রয়েছে। নারী উদ্যোক্তা কীভাবে তৈরি হবে এর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারণ নারী উদ্যোক্তারা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন।
নবনীতা সিনহা বলেন, ৪৪ মন্ত্রণালয়কে অন্তর্ভুক্ত করে জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। বৈষম্য কমাতে জেন্ডার বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এর সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল পরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়ন নির্দেশিকা (গাইডলাইন) ও মনিটরিং টুলস থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বফূর্ণ।
মাশফিকা জামান সাতিয়ার বলেন, জাতীয় বাজেট জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। জাতীয় বাজেটের কার্যকর পরিকল্পনা ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য গাইডলাইন ও টুলস্ তৈরিতে নেদারল্যান্ড অ্যাম্বাসি ৪ বছর ধরে সহায়তা করে আসছে।
প্রসেনজিৎ চাকমা বলেছেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী সমাজকে পিছিয়ে রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভবপর নয়। আশা করি জেন্ডার সংবেদনশীল পরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়ন নির্দেশিকা (গাইডলাইন) ও মনিটরিং টুলস সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসবে ।
মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, বাংলাদেশের নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থা, যৌন হয়রানি, সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার নিয়ে নীতি নির্ধারকদের আরও সচেতন হতে হবে। জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের বিষয়টি জাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টনের সঙ্গে যুক্ত; জেন্ডার বাজেট নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সঙ্গে যুক্ত। বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকলে কোনো নীতিমালাই নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। আর সকল স্থানের নারীর চাহিদাও এক নয়। চাহিদা মাথায় রেখে পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন