কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জিএম শস্যের স্বপক্ষে বিজ্ঞানের প্রচারণা বিভ্রান্তিমূলক

গোল্ডেন রাইস। ছবি : সংগৃহীত
গোল্ডেন রাইস। ছবি : সংগৃহীত

গোল্ডেন রাইসের বাণিজ্যিক অনুমোদন বন্ধ ও বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক অনুমোদন প্রত্যাহারে চিঠি দিয়েছে নাগরিক সমাজ। সোমবার (২৭ মে) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো এক নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ আহ্বান জানান।

এতে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিটি বেগুন ও গোল্ডেন রাইসের বাণিজ্যিক অনুমোদন বন্ধসহ সব ধরনের জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য ও খাদ্যদ্রবের বাণিজ্যিক অনুমোদন প্রদান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

চিঠিতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেন, গত ৪ এপ্রিল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, আর্ন্তজাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মিলিতভাবে দেশে ‘ভিটামিন-এ’ সমৃদ্ধ যুক্তিতে গোল্ডেন রাইস নামক ধানের জাত প্রচলন করতে সরকারি উচ্চপর্যায়ে বৈঠক করেছে।

প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ইরি’র ‘Healthier Rice Programme’ প্রকল্পের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে জিএমও গোল্ডেন রাইস ধানের জাত অবমুক্তির জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছে এবং সরকার অনুমোদনের আশ্বাসও দিয়েছে। ইরি ছাড়াও গোল্ডেন রাইসপ্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে মার্কিন দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং ধানটির পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী হচ্ছে বিদেশি রাসায়নিক কৃষি কোম্পানি সিনজেন্টা।

তারা আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ধানের আদি নিবাস এবং এদেশে এক সময় ১৫০০০ জাতের ধান ছিল বলে বিভিন্ন গবেষণায় উল্লিখিত হয়েছে। এখনো বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ৭৫০০ জাতের ধান সংরক্ষিত রয়েছে বলে প্রচার রয়েছে। বাংলাদেশের মতো প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভরশীল দেশে জিনগতভাবে পরিবর্তিত ধান ও খাদ্য ফসলের প্রবর্তন তাদের উদ্বিগ্ন করেছে।

বিশেষত যেখানে গত ১৭ এপ্রিল ফিলিপাইনের আপিল আদালত নির্দিষ্টভাবে গোল্ডেন রাইস এবং বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক চাষ বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত (নিরপেক্ষ ও পর্যাপ্ত বিজ্ঞান সম্মত গবেষণা) এবং আইনী বাধ্যবাধকতা (বায়োসেফটি রুল, কার্টেহেনা প্রটোকলসহ অন্যান্য) মানার পূর্বে এগুলো বাণিজ্যিকভাবে প্রচলন করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে রায়ে গোল্ডেন রাইসের বায়োসেফটি অনুমোদনও প্রত্যাহার করা হয়েছে। যেখানে অন্য কোনো দেশ গোল্ডেন রাইসের বাণিজ্যিক অনুমোদন দেয়নি এবং ফিলিপাইনের আদালত সুনির্দিষ্টভাবে এ অনুমোদনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, যেখানে বাংলাদেশে ‘ভিটামিন এ’ এর বিকল্প প্রাকৃতিক উৎস বিদ্যমান ও সহজলভ্য সেখানে ‘ভিটামিন এ’ বেশি পাওয়ার অজুহাতে জিনগতভাবে পরিবর্তিত এবং কোম্পানির পেটেন্টকৃত গোল্ডেন রাইসের বাণিজ্যিক প্রচলন করার কোনো সুযোগ এদেশে নেই বলে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন।

চিঠিতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আরও উল্লেখ করেন, গোল্ডেন রাইসের পূর্বে জিনগত পরিবর্তিত বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক প্রচলনও বাংলাদেশ সরকার তড়িঘড়ি করে অনুমোদন দিয়েছিল। সে অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কেবলমাত্র নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদী সংগঠনই নয় বরং অনেক সরকারি সংস্থাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। বিটি বেগুন বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিপাইনে একইসঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেও ভারত কিংবা ফিলিপাইন বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক প্রচলনের অনুমোদন দেয়নি।

ভারতের আইন প্রণেতারা এ মতামত ব্যক্ত করেছিলেন যে, এ জাতীয় শস্যাদি কেবলমাত্র কোম্পানির জন্য লাভজনক কিন্তু দেশের আপামর জনসাধারণ ও কৃষকের জন্য লাভজনক নয়। যেই নিরাপত্তা বিশ্লেষনের ভিত্তিতে ভারত ও ফিলিপাইন বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক প্রচলনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল সেই একই বিশ্লেষণের সারমর্মের ভিত্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতি উৎসাহের কারণে বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক চাষ বাংলাদেশে অনুমোদন করে।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, যেখানে ধান ও বেগুনের প্রজাতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় দেশ সেখানে প্রাকৃতিকভাবে পোড়ামাকড় দমন ব্যবস্থাপনার দিকে না গিয়ে কোম্পানির পেটেন্টকৃত বীজের দিকে ঝুঁকে পড়া আত্মঘাতীর সামিল।

চিঠির মাধ্যমে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সব ধরনের জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্য ও খাদ্যদ্রবের বাণিজ্যিক অনুমোদন প্রদান থেকে বিরত থাকতে এবং এরইমধ্যে প্রদানকৃত অনুমোদন প্রত্যাহারে অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে সব প্রকার সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন তারা।

চিঠিতে যারা স্বাক্ষর করেন তারা হলেন-

১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ); ২. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি; ৩. ফরিদা আখতার, নির্বাহী পরিচালক, উবিনীগ; ৪. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি); ৫. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি); ৬. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ; ৭. আলমগীর কবীর, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা); ৮. ড. এম এ সোবহান, সভাপতি, বীজ বিস্তার ফাউন্ডেশন; ৯. সাকিউল মিল্লাত মোর্শেদ, নির্বাহী পরিচালক, শিসউক; ১০. পাভেল পার্থ, গবেষক, বারসিক; ১১. ইবনুল সাঈদ রানা, সদস্য, জিএমও বিরোধী মোর্চা; ১২. বদরুল আলম, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন; ১৩. আমিনুর রসুল, সদস্য সচিব, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট; ১৪. সীমা দাস সীমু, সহ সভানেত্রী, নারী গ্রন্থ প্রর্বতনা; ১৫. জাহাংগীর আলম জনি, পরিচালক, নয়াকৃষি আন্দোলন; ১৬. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজকের নামাজের সময়সূচি

শহীদ আমিনুলের সন্তানদের দায়িত্ব নিল ইত্তেফাকুল উলামা

রোববার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

১০

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

১১

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১২

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১৩

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১৪

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১৫

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

১৬

আন্দোলনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মীকে গণধোলাই

১৭

আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষ ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক সমাবেশ

১৮

কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৯

পাকিস্তানের জলসীমায় বিপুল তেল-গ্যাস মজুতের সন্ধান

২০
X