গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে স্বচ্ছতার সঙ্গে আমার সঙ্গে আচরণ করেছে, তারা যেন সবার সঙ্গে এটা করে; যাতে কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমিও শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে জবাব দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো শতভাগ মিথ্যা। যারা এই মিথ্যা অভিযোগ করেছে তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হোক।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যারা অভিযোগ করেছে তাদের কোনো হদিস নাই। কাগজের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নাই। দুদক একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। তারা রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করে। সে হিসেবে দুদক এর আগেও আমাকে ডেকেছিল। আজও ডেকেছে। দুদক ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি এসেছি। তারা যা যা জানতে চেয়েছিলেন, আমি সেসবের জবাব দিয়েছি।
তিনি বলেন, সরকার আমাকে দুটি প্রজেক্টে মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু দুদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আমার বিরুদ্ধে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কাল্পনিক অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ সব কাজ এখনো চলমান এবং লিখে দেওয়া হয়েছে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ। যত মিথ্যা, অন্যায় ও অনিয়মের কথা কাগজে লেখা হয়েছে, যেগুলোর কোনো সত্যতা নাই। দুদক বলেছে, যেহেতু আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তাই সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। তাদের আমি লিখিতভাবে জবাব দিয়েছি। আমি বলেছি এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার নামে একটি মিথ্যা ও ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেখানো হয়েছে। এই ভুয়া ঘটনা কারা করেছে তার বিচার আমিও চাই। যাতে বাংলাদেশের আর কোনো নাগরিককে যেন আমার মতো হয়রান হতে না হয়।
সাবেক এই মেয়র আরও বলেন, গাজীপুরের মানুষ আমার ওপর আগে যেমন আস্থা রেখেছেন, আমার মাকে নির্বাচিত করে সেটা আবার প্রমাণ দিয়েছেন। ভুয়া ব্যাংক হিসাবে টাকা অবৈধভাবে লেনদেন, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১৬ মে নোটিশ দেয় দুদক। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন তিনি। গত ১৮ মে দুদকের তলবে হাজির হতে এক মাস সময় চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ৬ জুন হাজির হতে বলা হয়। এর আগে, গাজীপুরের সাবেক এ মেয়রের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি তদন্তে দুই সদস্যের টিম গঠন করে দুদক। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করার নির্দেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত ১৫ মে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। এর আগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে তাকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার ও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। পরে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমাও করা হয়েছিল।
মন্তব্য করুন