সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কয়েক দফায় হিট অ্যালার্টও জারি করেছে। এই তীব্র গরমে সারা দেশে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুও হয়েছে অনেক।জনজীবনে বিরাজ করছে চরম অস্বস্তি। সব মিলিয়ে দেশের কোটি কোটি জোড়া চোখ দীর্ঘ প্রতীক্ষায় চেয়ে আছে আকাশ পানে, কখন দেখতে পাবে মেঘ; ঝরবে অন্তিম বৃষ্টি। এবার সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামীকাল থেকে ঢাকাসহ দেশের পাঁচ বিভাগে বৃষ্টি শুরু হবে। তবে ৫ মে থেকেই মাত্রা বাড়বে। আর এর প্রভাবেই তাপমাত্রাও নেমে আসবে সহনীয় মাত্রায়।
বুধবার (১ মে) সকালে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক কালবেলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আগমীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তা খুবই অল্প পরিমাণ। বৃষ্টির প্রবণতা বাড়বে আগামী ৫ থেকে। সেসময়ে সারা দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
ওমর ফারুক বলেন, বৃষ্টির ফলে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ থাকবে না। জনজীবনে স্বস্তি নেমে আসবে। তবে এই বৃষ্টি শেষে ফের তাপমাত্রা বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে।
টানা এপ্রিল জুড়ে সারা দেশে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এর আগে ১৯৭২ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড তাপমাত্রা।
একই দিন চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল যশোরের আগে রেকর্ড হওয়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এর আগে, দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায়। সে সময় জেলার তাপমাত্রা ওঠে ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মঙ্গলবার সেই তাপমাত্রা ছাড়াল চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে।
দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয় মে মাসে। এরপর আছে জুন, সেপ্টেম্বর ও এপ্রিল মাস। কিন্তু এবার দেশে খুবই সামান্য বজ্রঝড় বা কালবৈশাখী হয়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা প্রকৃতির এ আচরণকে অস্বাভাবিক বলছেন।
এদিকে দেশের সাতটি জেলায় অতি তীব্র, ১২টি জেলায় তীব্র এবং বাকি ৪৫টি জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বুধবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর এবং খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা যদি ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয় যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আর অতি তীব্র হয় ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি হলে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে ঈশ্বরদীতে ৪৩.২ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৪৩.০, কুমারখালীতে ৪২.৫, মোংলায় ৪২.৩, সাতক্ষীরায় ৪২.২, খুলনায় ৪১.৫, টাঙ্গাইল, বগুড়া, দিনাজপুর ও তাড়াশে ৪১.০, গোপালগঞ্জে ৪০.৭, বদলগাছীতে ৪০.৫, ফরিদপুরে ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন