গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গুরুতর অপরাধে লঘু মামলা হয়েছে। মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যু দেখিয়ে প্রকৃত ঘটনা আড়ালের চেষ্টা হয়েছে বলে দাবি করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বেসরকারি সংগঠন নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির।
তিনি বলেন, একই বাসায় ছয় মাসের ব্যবধানে যখন একই ধরনের ঘটনা ঘটে, সেটা অবশ্যই তদন্তের দাবি রাখে। কাউকে হেয় করার জন্য বা কারও বক্তব্যের পাল্টা হিসেবে আমরা এ সংবাদ সম্মেলন করছি না৷ কারও বিরুদ্ধে আমাদের কোনো আক্রোশ নেই৷ আমরা চাই প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে স্বাধীন, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দ্রুত বিচার।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিতিল।
তিনি বলেন, এই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুরে সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারের বাসায় প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। ঘটনার সময় সৈয়দ আশফাকুল হক ইংরেজি দৈনিক 'দ্য ডেইলি স্টার' পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৪ এপ্রিল তিনি চাকরিচ্যুত হন। প্রীতি উরাংর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে তাকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু, স্বাধীন, নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত, পক্ষপাতহীন ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই আমরা। ওই বাসার আরও কয়েকজন শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সে সব ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার চাই আমরা৷
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মামলার এজাহারে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রীতির বয়স ১৩ বছরের পরিবর্তে ১৫ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। প্রীতি উরাং পড়ে যাবার আগে ১২/১৩ মিনিট ঝুলেছিল, সে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল৷ কিন্তু আশফাকুল হকের বাসা থেকে কেউ তাকে সাহায্য করেনি। এলাকার বহু মানুষ এ ঘটনার সাক্ষী। আশপাশের মানুষজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতে চাইলেও ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি।
ফারহা তিতিল বলেন, সৈয়দ আশফাকুল হকের মোহাম্মদপুরের ওই ফ্ল্যাট থেকে গত বছরের ৪ আগস্টে ৭ বছরের আরও একজন গৃহকর্মী পড়ে গিয়েছিল বা লাফ দিয়েছিল। সে বেঁচে আছে। পরপর ঘটে যাওয়া একই রকমের দুটি ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করে। আমরা সরেজমিনে এই সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। আমাদের মধ্য থেকে কয়েকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, মোহাম্মদপুর, স্থানীয় থানা এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করেছেন।
৭ বছর বয়সী যে শিশুটি বেঁচে আছে, মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ আছে, তার যৌনাঙ্গের লেবিয়া মাইনরা থেকে এনাল পর্যন্ত ৩-৩-৩ সেন্টিমিটার দীর্ঘ-চওড়া-গভীর ক্ষত রয়েছে। তার যৌনাঙ্গে অপারেশন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই অপারেশনে অভিভাবক হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন ওই ভবনের ম্যানেজার আব্দুল আদেল। শিশুটির মা-বাবাকে না জানিয়েই এই অপারেশন করা হয়। মামলার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে শিশুটির এই সংবেদনশীল ক্ষতটির উল্লেখ নেই।
পড়ে যাওয়ার আগেই দুপায়ের মাঝে শিশুটি আঘাত পাওয়ার কথা বলেছে আমাদের প্রতিনিধিদের কাছে। এই আঘাতটি কী? যার কারণে সে মরে যেতে চেয়েছিল? আমাদের অনেক আশঙ্কা আছে। আমরা মনে করছি এর অধিকতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। ঘটনার পরে সৈয়দ আশফাকুল হকের পক্ষে ওই শিশুটির পরিবারের সঙ্গে আদালতের মাধ্যমে ২ লাখ টাকায় বিষয়টির আপসরফা হয়েছে। যদিও আমরা সরেজমিনে গিয়ে জেনেছি ওই টাকাও মধ্যস্বত্বভোগীর ভোগে চলে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত, লেখক রেহনুমা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন কণা, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী তবারক হোসাইন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরের সভাপতি আবুল হোসাইন, বেসরকারি সংস্থা এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, সংগঠক ও সংগীত শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার করা, প্রীতির পরিবারকে যথোপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷ আশফাকুল হকের বাসা থেকে নির্যাতিত যে শিশুটি বেঁচে আছে তার যথোপযুক্ত চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা৷
মন্তব্য করুন