টানা ১০ দিন তাপদাহের মধ্যে গতকাল বৈশাখের তৃতীয় দিন (১৬ এপ্রিল) রাজধানীতে ঝোড়ো হাওয়াসহ একপশলা বৃষ্টি খানিকটা স্বস্তি এনেছে নগর জীবনে। চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যেই শিলা বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার দেওয়া আবহাওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালকের পক্ষে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন-
চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গায় থেকে প্রশমিত হতে পারে।
এ দিকে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এর মধ্যে বিকেলে আকাশ কালো করে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঝোড়ো হাওয়া ও হালকা বৃষ্টি হয়। স্বল্প সময়ের এ বৃষ্টিতে অস্বস্তিকর গরমে সাময়িক প্রশান্তি এলেও আবহাওয়া অফিস কোনো সুখবর দিতে পারছে না। গরমে গোটা দেশেই হাঁসফাঁস অবস্থা। অস্বস্তি বাড়াচ্ছে আর্দ্রতা। এদিকে চলতি মাসে তৃতীয়বারের মতো তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন-
চলমান মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
দেশের প্রায় সব জেলার ওপর দিয়েই মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড করছে তাপমাত্রা। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ পর্যন্ত মৌসুমের সর্বোচ্চ। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বিকেলে বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল টাঙ্গাইল, বগুড়া, পটুয়াখালী সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জে ৩৮ দশমিক ৫, কুমারখালী ও ফরিদপুরে ৩৯ দশমিক ২, রাজশাহী ৩৯ দশমিক ৩, যশোর ও ঈশ্বরদী ৩৯ দশমিক ৮, রাঙামাটিতে ৩৯, খুলনায় ৩৯ দশমিক ৫ এবং মোংলায় ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা ছাড়াও ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ ও চাঁদপুরে বৃষ্টি হয়েছে।
বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। এরপর ৪২ ডিগ্রির ওপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাট জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা-ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ২০ এপ্রিলের পর দেশের কোথাও কোথাও স্থানীয়ভাবে অস্থায়ীভাবে দমকা বাতাস, ঝোড়ো হাওয়াসহ কালবৈশাখী ও বজ্রপাত হতে পারে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে। ২৩ এপ্রিলের দিকে গিয়ে পাবনা-ঈশ্বরদী, যশোর ও কুষ্টিয়া বেল্টে তাপমাত্রা বেড়ে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন-
এপ্রিল মাসের বাকি সময়জুড়ে দেশে তাপপ্রবাহ থাকবে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ওঠানামা করতে পারে। এ মাসে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
চলতি এপ্রিল মাসে দীর্ঘ তাপপ্রবাহের বিষয়ে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা। গত বছরের এপ্রিলে টানা ১৪ দিন দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত ছিল। ১৯ ও ২০ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৬ এপ্রিল ঢাকায় রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৯৬৫ সালের পর ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এ মাসে দুই থেকে ৪টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। এ মাসে এক-দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ/ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
এদিকে কড়া রোদ, উষ্ণ বাতাস আর তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানীসহ সারা দেশের জনজীবন। বিশেষ করে যারা জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, তারা আছেন সবচেয়ে বিপাকে। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে রোদ-গরম উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষকে।
চুয়াডাঙ্গায় রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। আগুন ঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা বিরাজ করছে সূর্য একেবারে পাটে পড়ার আগ পর্যন্ত। বগুড়ায় তীব্র তাপদাহে পুড়ছে জনজীবন। ছায়া পেলেই সেই স্থানে দাঁড়িয়ে শরীরকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া শহরে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানেও ভিড় জমিয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন অনেকে। রিকশাচালক ফজলু মিয়া বলেন, বৈশাখের এই তীব্র রোদের কারণে রিকশা চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এত গরম যে রাস্তায় দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গরমের কারণে মানুষ কম বের হচ্ছে। ফলে ভাড়াও কমে গেছে।
শাখারিয়া এলাকার কৃষক রফিকুল হোসেন বলেন, তীব্র রোদে মাঠে কাজ করতে পারিনি। এজন্য ভোরে বাড়ি থেকে বের হই। রোদের তাপ বাড়ার আগেই বাড়ি ফিরে আসি। এতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে ফসলের যত্ন নিতে।
মন্তব্য করুন