নূরে আলম সিদ্দিকী
প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ধুলো পড়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যের হালখাতায়

নতুন হিসাবের লাল খাতা ও মিষ্টি। ছবি : সংগৃহীত
নতুন হিসাবের লাল খাতা ও মিষ্টি। ছবি : সংগৃহীত

আজ পহেলা বৈশাখ। একসময় পহেলা বৈশাখ আর হালখাতা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। বাংলা বছরের প্রথম দিন রঙিন ফুল ও কাগজ দিয়ে দোকান সাজিয়ে আয়োজন চলত হালখাতার।

মূলত, সারা বছরের বকেয়া ওঠানোর জন্য আয়োজন হয় হালখাতার। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এই রীতিতে ভাটা পড়লেও এখনো কিছু কিছু জায়গায় আয়োজন হয় এই অনুষ্ঠানের।

সমগ্র দেশে দিন-তারিখের হিসাব ইংরেজিতে চললেও পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। সারা বছর ইংরেজি ক্যালেন্ডারের হিসাবে চালালেও বাঙালিরা পহেলা বৈশাখের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। বাংলা বছরের প্রথম এই দিনটিতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে দেনা-পাওনার হিসাব হয়। এই হিসাবকেই হালখাতা বলে। দুপক্ষের মধ্যে আন্তরকিতা বৃদ্ধির অন্যতম পন্থা এই হালখাতা।

ডিজিটাল যুগের হিসাব-নিকাশ অনেক সহজ হওয়ায় প্রচলন কমেছে কাগজ-কলমের। আগে হালখাতা উপলক্ষে কাগজে-কলমে নিমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে উৎসবের আয়োজন করতেন ব্যবসায়ীরা। অনেক জায়গায় হালখাতা উপলক্ষে আয়োজন করা হতো গান-বাজনার। দোকানে আগত সবাইকে মিষ্টিমুখ করানোর প্রচলন ছিল।

অতীতে জমিদারকে খাজনা প্রদানের অনুষ্ঠান হিসেবে ‘পুণ্যাহ’ প্রচলিত ছিল। বছরের প্রথম দিন প্রজারা ভালো পোশাক পরে জমিদার বাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করতেন। তাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো।

জমিদারি প্রথা ওঠে যাওয়ায় ‘পুণ্যাহ’ বিলুপ্ত হয়েছে। তবে রয়ে গেছে হালখাতা। মোঘল সম্রাট আকবরের আমল থেকে পহেলা বৈশাখের উদযাপনের প্রথা শুরু হয়। প্রথমে আকবরের পঞ্জিকার নাম ছিল ‘তারিখ-এ-এলাহী’। আর ওই পঞ্জিকায় মাসগুলো আর্বাদিন, কার্দিন, বিসুয়া, তীর এমন নামে প্রচলিত ছিল। তবে ঠিক কখন যে এই নাম পরিবর্তন হয়ে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ হলো তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি।

ধারণা করা হয়, বাংলা ১২ মাসের নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্র থেকে। যেমন- বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জায়ীস্থা থেকে জৈষ্ঠ্য, শার থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ এমন করেই বাংলায় নক্ষত্রের নামে মাসের নামকরণ হয়।

পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হলে সেই সময় থেকেই দোকানে দোকানে ব্যবসার হিসাব করার জন্য শুরু হয় হালখাতার প্রথা। হাল মানে নতুন, হালখাতা অর্থাৎ নতুন খাতা। পুরোনো বছরের সব হিসাব মিটিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় নতুন খাতায় হিসাব-নিকাশ।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রাচীন বাংলার অনেক উৎসব আজ বন্ধের পথে। একবিংশ শতাব্দীতে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোররা পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ বলতে বোঝে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সকালে পান্তা-ইলিশ খাওয়া। তবে অনেক ক্ষেত্রে ঐতিহ্যকে ধারণ করতে হালখাতার প্রাচীন প্রথা ধরে রেখেছেন অনেকে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অটোরিকশার পেছনে বাসের ধাক্কা, নিহত ১

জামালপুরে ১১ পরীক্ষার্থী ও ২ শিক্ষক বহিস্কার

বর্ণিল আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট কলিন্সে বর্ষবরণ উদ্‌যাপন করলেন বাংলাদেশিরা

তিন মন্ত্রণালয়কে উপদেষ্টার জরুরি নির্দেশনা

মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

পরকীয়া সম্পর্কের জেরে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী পলাতক

ঘুণপোকা ধরা রাজনীতির চেয়ার সংস্কার প্রয়োজন : ব্যারিস্টার ফুয়াদ

বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক চায় পাকিস্তান: আসিফ

তীব্র গরম থেকে কবে মিলবে মুক্তি, জানাল আবহাওয়া অফিস

কানাডায় উৎসব চলাকালীন গাড়িচাপায় বহু হতাহত

১০

স্কুল ভবনের ছাদে বোমাসদৃশ বস্তু, কারণ খুঁজছে পুলিশ

১১

বিকেলে জরুরি সভায় বসছে বিসিবি

১২

ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

১৩

বিশ্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্‌যাপন হচ্ছে বাংলা নববর্ষ 

১৪

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত মিলার

১৫

নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙলেন গোপালগঞ্জের আ.লীগ নেতা

১৬

বড় শাস্তির মুখে রিয়াল ডিফেন্ডার রুডিগার

১৭

কুমিল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যসহ আটক ৯

১৮

ঝড়ে লন্ডভন্ড রংপুরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ৯ ইউনিয়ন

১৯

পরীক্ষায় খাতা দেখতে না দেওয়ায় মারধর, শিক্ষার্থীর মৃত্যু

২০
X