বুয়েট অধ্যাদেশ ও নীতিমালা কী হবে তা নির্ধারণ করার অধিকার বুয়েট কর্তৃপক্ষের রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য আখতারউজ্জামান।
তিনি বলেছেন, বুয়েটের ছাত্ররা ক্লাস করবে, পরীক্ষা দিবে, যখন রাজনীতির প্রয়োজন হবে তখন রাজনীতিতে অংশ নেবে, এমন পরিবেশই প্রয়োজন। বুয়েটের ছাত্র সংসদ সবসময় তাদের মতো করেই হয়, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নয়।
শনিবার (৬ এপ্রিল) ঢাকার এফডিসিতে বুয়েটের চলমান অস্থিরতা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
আখতারউজ্জামান বলেছেন, বর্তমান সমস্যার সমাধান ছাত্র-শিক্ষকসহ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিত। গত ৫ বছরে রাজনীতিমুক্ত বুয়েটে অনেক সফলতা যেমন রয়েছে তেমনি অতীতে রাজনীতি চলমান রেখেও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশে ও বিদেশে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। আমরা ছাত্র সংসদ চাই, কিন্তু মারামারি হানাহানির ছাত্র সংসদ চাই না। ছাত্র রাজনীতি মানে শুধু কয়েকটি স্লোগান নয়। ছাত্র রাজনীতির ধরন পাল্টাতে হবে। বর্তমান ছাত্রদের রাজনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিশ্ব প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আদালতের আদেশে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে, না কি বুয়েট কর্তৃপক্ষ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে আদালতে তুলে ধরবেন তা বুঝতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে বুয়েট কর্তৃপক্ষ বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কী থাকবে না তা আদালতে তুলে ধরার পূর্বে সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভোটের আয়োজন করতে পারেন। ওই ভোটের ফলাফল আদালতে তুলে ধরা হলে আমরা আশা করি বুয়েটের চলমান সংকটের একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে। তবে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশে ও ন্যায্য দাবি দাওয়া আদায়ে বুয়েটে অরাজনৈতিক স্টুডেন্ট কেবিনেট গঠন করা যেতে পারে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ১০ দফা সুপারিশ করেন।
সেগুলো হলো—
১. উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কী থাকবে না সে বিষয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতামত আদালতের কাছে তুলে ধরা।
২. শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার না বানানো।
৩. লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন বা দলীয় পরিচয়ের পরিবর্তে ব্যক্তি পর্যায়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন করা।
৪. বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, যৌন হয়রানী, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিচার দ্রুততম সময়ে করার লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা।
৫. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাদা-লাল-নীল-বেগুনি ইত্যাদি নামকরণের মাধ্যমে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা।
৬. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং, টর্চার সেল, হল দখল, সিট দখল, আদিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস দমনে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হওয়া।
৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সব মতাদর্শের শিক্ষার্থীদের হলে সহাবস্থান নিশ্চিত করা।
৮. শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার পরিবর্তে যোগ্য মেধাবীদের শিক্ষকতায় আসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
৯. আসন্ন বাজেটে উচ্চাশিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য গবেষণা, বৃত্তি ও কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো।
১০. উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধিকল্পে ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা বাড়াতে হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের সহায়ক’ শীর্ষক ছায়া সংসদে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিতার্কিকদের পরাজিত করে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মল্লিক, সাংবাদিক মাহবুব কবির চপল ও সাংবাদিক শামীমা সুলতানা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
মন্তব্য করুন