ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
ইইউর সঙ্গে বৈঠকের পর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কি না সে বিষয়েই মূল্যায়নের জন্য ইইউ বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। তারা আমাদের চিঠি দিয়েছিল। আমরা সেই আলোকেই চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।
সভায় বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে।
আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে বর্তমান সরকারের অধীনে আমরা যে নির্বাচন করেছি এটা গোটা জাতি এবং বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার ছিল, এটা কোনো নির্বাচন ছিল না। নির্বাচনের নামে প্রহসন ছিল। একটি নজিরবিহীন প্রতারণার নির্বাচন ছিল।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছিল। একটি জাতীয় সরকার গঠনের যে নির্বাচন সেখানে নির্বাচনের আগেই যদি মেজরিটি নির্বাচিত হয়ে যায়, সেটাকে নির্বাচন বলা যায় না। সেখানে নতুন শব্দ আবিষ্কার করতে হয়।
তারপর ২০১৮ সালে আমরা সকল দল অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেই নির্বাচনের পূর্বে সংলাপ হয়েছিল। আজকের যিনি সরকারপ্রধান বারবার ওয়াদা করে বলেছিলেন, আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা। যাহা বলি তাহা থেকে কখনো সরে যাই না।
ডা. তাহের বলেন, ভেবেছিলাম ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম সেই নির্বাচন আগের দিন রাতেই হয়ে গেছে। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বোধ হয় নতুন সংযোজন। সুতরাং ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিঃসন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, এই সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
সেজন্যই আমরা বলছি, আগামী যে নির্বাচন হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, অস্তিত্ব রক্ষা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হলেই আগামী দিনে বাংলাদেশ বাঁচার সম্ভাবনা আছে।
সুতরাং কেয়ারটেকার সরকার বা নির্দলীয় সরকার যে নামেই হোক না কেন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এর বাইরে এই দেশের মানুষ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।
সিলেটে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এক সপ্তাহ ধরে প্রচারণা চালিয়েছি। দীর্ঘদিন আগেই পুলিশের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু আমাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। এমনকি এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনেও হস্তক্ষেপ করেছে পুলিশ।
শেষ পর্যন্ত আগামী শুক্রবার আবারও সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করেছি। আমরা আইন মেনে চলার দল। আমরা ভায়োলেন্সের দিকে যেতে চাই না। আগামী ২২ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগরীতে জনসভা হবে। আশা করি অনুমতি পাব। আমরা দশ বছর পরে ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশে করেছিলাম। আশা করেছিলাম সরকার কিছুটা হলেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে। কিন্তু সিলেটের ঘটনা আমাদের ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের পুরোনো চেহারা স্মরণ করিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, সরকার এখনই রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। আমাদের সমস্ত অফিস খুলতে দিচ্ছে না। এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনের দিন সব ঠিক হয়ে যাবে এটা আশা করার কারণ নেই।
সরকার এখনই প্রমাণ করছে তাদের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আমরা এই কথাটি পরিষ্কারভাবে ইইউকে বলেছি। তারাও কূটনৈতিক ভাষায় আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। আমরা বলেছি বাংলাদেশের নির্বাচনে যে কোনো অবজারভার এলেই স্বাগত জানাই। যদি সেটা কোনো নির্বাচন হয়। আর যদি নির্বাচনের নামে প্রহসন হয় তাহলে অবজারভার আসার কোনো অপশন নেই।
ডা. তাহের বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আপনারা পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারেন। না হলে একদলীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠালে এটা সমীচীন হবে না।
সংলাপ প্রসঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী যদি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ইস্যুর মতো একটি শক্ত বিষয়ের ওপর আলোচনা হয় তাহলে সংলাপের অর্থবহতা থাকবে। কেয়ারটেকারের থিম ঠিক রেখে যে নামেই হোক সেটা নিয়ে সংলাপ হলে তা সফল হতে পারে।
জামায়াতের নায়েবে আমির আরও বলেন, আমরা নিবন্ধিত দল। আমরা ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে পাল্লা মার্কায় নির্বাচন করেছি। আমাদের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ১ লাখ ১০ হাজার নেতাকর্মীকে জেলখানায় নেওয়া হয়েছে। তেমনি এই অবৈধ সরকার ডিক্টেটেড রায়ের মাধ্যমে আমাদের নিবন্ধনটিও হাইকোর্টে হত্যা করেছে। এর বিপরীতে আমাদের আপিল কোর্টে বিচারাধীন আছে। ন্যায়বিচার হলে আমরা নিবন্ধন ফিরে পাব।
ডা. তাহের বলেন, রাজনীতি করার জন্য নিবন্ধন কোনো জরুরি বিষয় নয়। দেশের অর্ধেকেরও বেশি রাজনৈতিক দল আছে যাদের নিবন্ধন নেই। সুতরাং কথা বলা বা সমাবেশ করা আমাদের অধিকার।
আমরা বলেছি জামায়াত কখনোই সহিংসতা করে না। জামায়াত সুশৃঙ্খল ও গণতান্ত্রিক, পজিটিভ ও মডারেট ইসলামি সংগঠন। আমাদের এসব কথায় তারা একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। এ জন্যই তো তারা আমাদের আলোচনার জন্য দাওয়াত দিয়েছেন। আমরা সাড়া দিয়েছি। সহিংসতা নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে একটা অপপ্রচার চালানো হয়েছে। তাহের বলেন, ১০ জুনের সমাবেশের পর সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে বলে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাহলে ১০ বছর যে হয়নি সেটা প্রশ্ন করেন না কেনো? বিএনপির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পুরোনো। কিন্তু নানা কারণে বর্তমানে আমরা আমাদের মতো বিএনপি তাদের মতো আন্দোলন করছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুর রব।
মন্তব্য করুন