তামাক কোম্পানিকে কোনো প্রকার সহযোগিতা না করাসহ ছয় নীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি। ২৩ মার্চ (শনিবার) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট ও ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট সম্মিলিত এ আয়োজন করে। এ সময় তামাকের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সার্বিক জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসির আটিক্যাল-৫.৩ কে সমর্থন জানিয়ে ‘কোড অব কনডাক্ট’ স্বাক্ষর করে ক্যান্সার সোসাইটি।
সম্মিলিত আয়োজনে বক্তারা বলেন, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসির অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুযায়ী তামাক কোম্পানির স্বার্থ থেকে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক নীতি ও পদক্ষেপসমূহরে সুরক্ষায় দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান গাইডলাইন প্রণয়নে নৈতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়নে কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপ চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণে পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা এখন সময়ের দাবি।
তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকার দেশে আইন ও সহায়ক নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলস্বরূপ জনগণের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেলেও এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্যান্সার ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা।
বক্তারা বলেন, গবেষণায় ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ সিগারেট, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার। ধোঁয়াবিহীন এবং ধোঁয়াযুক্ত উভয় তামাকজাত দ্রব্যই ক্যান্সারের জন্য দায়ী। তামাক নিয়ন্ত্রণে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি নতুন পলিসি তৈরির ক্ষেত্রেও কোম্পানিগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ফলে তামাকের ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত হারে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকের নেতৃত্বে সংস্থাটি কোড অব কনডাক্ট গ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সচিবালয়ের পক্ষে সৈয়দা অনন্যা রহমান, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পক্ষে সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব, নেটওয়ার্ক কর্মকর্তা আজিম খান ও সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা নাজমুন নাহার।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির ছয় নীতির মধ্যে রয়েছে:
১. নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান, সচেতনতা বৃদ্ধি।
২. প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তামাক কোম্পানি বা কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা গ্রহণ, প্রদান ও অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবে।
৩. নিজের প্রতিষ্ঠানে তামাক কোম্পানির সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির নামে প্রচার অনুমতি প্রদান না করা।
৪. সকল বিভাগ ও কার্যালয় সম্পূর্ণ তামাকমুক্ত পরিবেশ বজায় থাকবে।
৫. অন্যান্য সংস্থাসমূহকে এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করবে।
৬. তামাক কোম্পানির স্বার্থে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সুবিধা পেয়েছেন, এমন কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হবে না।
মন্তব্য করুন