বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন-বিআরটিসিতে অনিয়ম-দুর্নীতি কমিয়ে এখন ১০ থেকে ১৫ ভাগে নেমেছে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের অপকর্মকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। স্বচ্ছতার ব্যাপারে কোনো আপোস নয়। চেয়ারম্যান ও ডিপো ম্যানেজার ঠিক থাকলে বিআরটিসিতে অনিয়ম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নতুন কোনো বাস না আসলেও গত তিন বছরে প্রতিষ্ঠানের আয় বেড়েছে ৮০ ভাগ। যাত্রী বেড়েছে দ্বিগুন।
সোমবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর দিলকুশায় বিআরটিসি ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিয়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় গত তিন বছরে বিআরটিসিকে লাভজনক করাসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন তিনি।
নিজেরা গাড়ি তৈরির ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, বিআরটিসি এখন গাড়ি তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে। ইঞ্জিন ও চেসিস এনে আমরা নিজস্ব কারখানায় গাড়ি বানাবো। ১৫ দিনের মধ্যে গাড়ি তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছি। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি গাড়ি তৈরির পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
কাজ না করায় ৩৭ জন কর্মকর্তা কর্মচারির বেতন ভাতা বন্ধের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ১৫জন অফিসার রয়েছেন। তাজুল ইসলাম বলেন, কাজ না করে কেউ এখানে থাকতে পারবে না। ২০ বছর পর একজন চালককে কাজে নামানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কাজ না করেই তিনি এতোদিন বেতন নিয়েছেন।
বিগত দিনে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি বসিয়ে রেখেছে তাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আগে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ছিল বলেই বিআরটিসির অর্থ জমা হতো না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বনানী বিদ্যা নিকেতনে প্রথম স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস চালু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর বিশেষত্ব হলো বাস থেকে শিক্ষার্থীরা নামা ও ওঠার পর অভিভাবকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসএমএস পাবেন। ৯টি মহিলা বাস সার্ভিস ও নগর পরিবহনে লস দিয়ে গাড়ি পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রী যানবাহনের নিরাপত্তায় ১০২৭টি গাড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভিটিএস প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির কারণে ট্রাক থেকে আয় বেড়েছে অনেক বেশি। আসন্ন ঈদ, বৈশাখী ভাতা সহ মাসিক ভাতা মিলিয়ে এপ্রিলে প্রতিষ্টানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ১৯ কোটি টাকা সময়মতো পরিশোধ করা হবে বলেও জানান প্রতিষ্ঠান প্রধান।
যে প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে স্বচ্ছ হবে, সে প্রতিষ্ঠান ততো বেশি শক্তিশালী হবে উল্লেখ করে বিআরটিসি চেয়ারম্যান বলেন, ২০২১ সাল থেকে ২৩ কোটি ১২ লাখ ৯১ হাজার সিপিএফ, গ্র্যাচুয়িটি বাবদ ৩৪ কোটি ৫২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে।
আগামী জুলাই অথবা আগস্ট মাসের মধ্যে ৩৪০টি সিএনজি চালিত নতুন বাস কোরিয়া দেশে আমদানি করতে এপ্রিলেই টেণ্ডার আহ্বান করা হবে বলে জানান তিনি। বলেন, নতুন বাসের মধ্যে ঢাকায় ১২০ ও চট্টগ্রামে ১২০টি চলবে।
তিনি বলেন, নতুন বাস আমদানিতে মানের ব্যাপারে কোন আপোস করা হবে না। ইচ্ছেমত বাস গছিয়ে দেওয়ার দিন শেষ।
আগামী এক বছর বিআরটিসি কোন আয় না করলেও প্রতি মাসের এক তারিখ বেতন দেয়া সম্ভব দাবি করে তাজুল ইসলাম বলেন, যাত্রা শুরু করেছি, বহুদূর যেতে চাই।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে ১ হাজার ৮২৫টি বাসের মধ্যে ৮৮৫টি বাস অনরুট ছিল। ২০২৩ সালে ১ হাজার ৩৫০টি বাসের মধ্যে ১ হাজার ২৫৩টি বাস চলাচল করছে।
বসে যাওয়া আর্টিকুলেটেড বাসের মধ্যে ৩০টি সচল করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিআরটিসির ছয়টি পর্যটন বাস রাস্তায় চলাচল করছে।
১০ ভাগ চালকের হাতে ভারি যানবাহনের লাইসেন্স নেই জানিয়ে তিনি বলেন, চালকদের দক্ষ করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। বর্তমানে ৩৪টি গাড়ি লীজে চলছে। আস্তে আস্তে তা শুণ্যের কোথায় নামিয়ে আনা হবে।
তিনি বলেন, বিআরটিসি বাসে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হচ্ছে। চালকের কারণে কারও মৃত্যু হলে তাকে ফৌজদারি মামলায় আসামি করা হবে।
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিআরটিসি ৫৫০টি বাস দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে চলবে বলেও জানান প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ সময় বিআরটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন