কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বেইলি রোড ট্র্যাজেডি

প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে লোক দেখানো অভিযান : টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। ছবি : সংগৃহীত
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সরকারি সংস্থাগুলো যে যার মতো শত শত রেস্তোরাঁ ও ভবনে অভিযান চালিয়েছে। এসব লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানো ও প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, অভিযানে এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের দুর্ঘটনার মূল কারণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। অন্যদিকে প্রকৃত অপরাধী মহল বিচারহীনতা ভোগ করছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছে টিআইবি।

সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আদালত বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নানা সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্স বেশ কিছু সুপারিশও প্রস্তাব করেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিষ্ক্রিয়তা, দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার অভাব, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহির ঘাটতির কারণে সুপারিশের বেশির ভাগ বাস্তবায়ন হয়নি।

নিয়মিত বিরতিতে অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে টিআইবি। মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তির কারণ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নিষ্ক্রিয়তা, সমন্বয়হীনতা, দুর্নীতি, জবাবদিহির অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতা বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বরাবরের মতো সমস্যার মূল কারণকে গুরুত্ব না দিয়ে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে, যাদের নির্ধারিত দায়িত্বের সঙ্গে দুর্ঘটনার মূল কারণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানোর ও প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ধারাবাহিক এই অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির পেছনে মূল কারণ ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করা এবং মালিক কর্তৃক ভবনে অনুমোদনবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা। এসব বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাজউক, সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস অনিয়মের বিষয়ে অবহিত। এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ ভবনের অনুমোদন ও যথাযথভাবে তদারকি করছেন না। যোগসাজশের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে আসছেন তারা। প্রকৃত অপরাধীমহল বিচারহীনতা ভোগ করছে।

পুরান ঢাকায় একাধিকবার সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবি ২০২০ সালে ‘নিমতলী, চুড়িহাট্টা এবং অতঃপর : পুরান ঢাকার অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা পরিচালনা করেছিল। ওই গবেষণায় দেখা যায়, বারবার মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরেও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি, ব্যবসায়ী, ভবন মালিক, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।

গবেষণাটি পুরান ঢাকায় দাহ্য পদার্থ থেকে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডকে বিবেচনায় নিয়ে করা হয়। তবে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ও ফলাফল ঢাকা শহরের অন্যান্য অগ্নিদুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কার্যকর প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় নির্মম প্রাণহানির ঘটনা স্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে। বিষয়টি সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য না থাকার দুঃখজনক উদাহরণ। নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি না করে দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার বিরুদ্ধে জবাবদিহি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর পুলিশ ১০ দিনে ১ হাজার ১৩২টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে। রাজউক ৩৩টি ভবনে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুটি ভবন ও দুটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করার পাশাপাশি ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জরিমানা করেছে ২২টি প্রতিষ্ঠানকে, পরিমাণ ৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিজিপিএ ৩.৯৭ পেয়ে স্নাতকোত্তরেও প্রথম ঢাবি শিবির সেক্রেটারি

‘ছয় মেডিকেল কলেজ বন্ধের বিবেচনা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের’

খুলনায় প্রকাশ্যে যুবককে গুলি করে হত্যা

রাউজানে ফের যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা

বাংলাদেশ থেকে সেনাসদস্য নেবে কাতার

ওসিদের ঘুষ নেওয়া বন্ধে কী নির্দেশনা দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

হাইড্রোজেন বোমা কেন এত ভয়ংকর?

বন্ধ ঘোষণা করা হলো সিটি কলেজ

আদালতকে সমির / মেঘনার একমাত্র পুরুষ রাষ্ট্রদূত, আমি তার বয়ফ্রেন্ড না

নলকূপের পানিতে কীটনাশক মিশিয়ে পান, ৬ শিশু হাসপাতালে

১০

‘আমি নির্দোষ, রাষ্ট্রদূতকে আদালতে আনা হোক’

১১

ঢাবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, মেসেঞ্জারে ক্ষুদে বার্তা

১২

জব্বারের বলী খেলা শুক্রবার

১৩

হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ফেরাতে কাজ শুরু দুদকের

১৪

পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কাল

১৫

ফেসবুক আইডি ডিজেবল নিয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদকের বক্তব্য

১৬

মুশফিকের আরেক ব্যর্থতা, লিডে আশাবাদী বাংলাদেশ

১৭

ভাইবোনকে হত্যার দায়ে আরেক ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড

১৮

টেস্টে টাইগারদের হয়ে মুমিনুলের নতুন রেকর্ড

১৯

লাইভে এসে নিরাপত্তা চাইলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক

২০
X