‘দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা- জাতির ভবিষ্যৎ ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, আধিপত্যবাদী শক্তি পরিকল্পিতভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা কৌশলে শিক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে ইসলাম ধর্মের পরিপন্থি বিষয়সমূহ ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের মুসলিম পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে চক্রান্ত করছে।
শনিবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে শিক্ষা গবেষণা সংসদ-ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, ইতিমধ্যেই শিক্ষা ব্যবস্থায় সুকৌশলে ট্রান্সজেন্ডারের মাধ্যমে সমকামিতাকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় আমাদের সন্তানরা এক সময় প্রতিবেশী আধিপত্যবাদের গোলাম হয়ে যাবে। ওহীর জ্ঞান বা শিক্ষা ছাড়া মুসলিমপ্রধান একটি রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হতে পারে না।
বক্তারা বলেন, সেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থার কুফল জাতি ভোগ করতে শুরু করেছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। ফলে রাষ্ট্র ও শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ইসলামী আদর্শ ও নৈতিকতাকে ভিত্তি করে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনা, মূল্যবোধ ও আদর্শকে সমুন্নত রেখে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা নিতে হবে।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন,
আমাদের ইসলাম ধর্মের সংস্কৃতি হচ্ছে ব্যপকভাবে সালামের প্রচলন করা। এখন সালাম দিলে ও আলহামদুলিল্লাহ বললে ট্রল করা হচ্ছে, এটা গত ১৫ বছরের সেকুলার কুশিক্ষার ফল। মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে রাখতে ইসলামী ফোবিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলাম ধর্মের বিরোধী বিষয় পাঠ্যবইয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে রাখতে এবং ইসলাম বিদ্বেষী করে গড়ে তোলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সচেতন মহলসহ দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে।
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন,
বাংলাদেশে ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন শুরু হয় কুদরতে খুদা শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে, পরবর্তীতে কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন ধর্মহীনতা ও ইসলামবিরোধী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নে আরেক ধাপ এগিয়ে যায়।
বাংলাদেশ ইসলামি ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. এম. কোরবান আলী বলেন,
ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। একটা সরকার পরিবর্তন হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়া এটা সন্দেহজনক। এটা বাহির থেকে কেউ করে দিয়েছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করতে হলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। সরকার পরিবর্তনের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। তা না হলে আধিপত্য থেকে আমরা মুক্তি পাব না।
শিক্ষা গবেষণা সংসদ-ঢাকার সমন্বয়ক অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিকের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এটিএম ফজলুল হক, নজরুল গবেষক ও কবি আবদুল হাই শিকদার, অধ্যক্ষ ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ডা. নাজনিন আকতার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার সুমন, মাকসুদুর রহমানসহ বিভিন্ন শিক্ষক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্য করুন